জাতীয় ডেস্ক:
বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খানকে (দাদা ভাই) তার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী, গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে মায়ের শাড়িতে মুড়িয়ে সমাহিত করা হবে।
শুক্রবার (৯ জুন) বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলজে হাসপাতালে প্রবীণ এ রাজনীতিবিদের ভাতিজি ব্যারিস্টার ফারা খান সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল থেকে মোহাম্মদপুরের মারকাজুল ইসলামে গোসলের জন্য মরদেহ নেয়া হবে। সেখান থেকে শমরীতা হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। আগামীকাল শনিবার সকাল ১০টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রথম জানাজা হবে। তারপর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আলীপুর প্রামে নিয়ে যাওয়া হবে মরদেহ। সেখানে জানাজা শেষে মায়ের শাড়িয়ে মুড়িয়ে সেখানেই সমাহিত করা হবে তাকে।
সিরাজুল আলম খানের ছোট ভাই ফেরদৌস আলম খান জানান, বড় ভাইয়ের শেষে ইচ্ছে অনুযায়ী তাকে গ্রামের বাড়ি বেগমগঞ্জে মায়ের কবরের পাশে মায়ের একটি শাড়িতে মুড়িয়ে সমাহিত করা হবে। জীবনের অন্তিম পর্যায়ে এসেও চান না কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মান। পরিবারকে জানিয়েছেন সে কথাও।
স্বজনরা আরও জানান, মে মাসের ৭ তারিখে নানা স্বাস্থ্য জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন রাজধানীর একটি হাসপাতালে। এখান থেকে সে মাসের ১৮ তারিখে নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেলে। গত এক তারিখ থেকে ভর্তি ছিলেন আইসিইউতে। গতকাল তাকে নেয়া হয় ভেন্টিলেশনে। সব চেষ্টাকে ব্যর্থকে অবশেষে দুপুর আড়াইটার দিকে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন এ প্রবীণ রাজনীতিক।
মৃত্যুকালে সিরাজুল আলম খানের বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক এবং মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন ছিলেন গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন তিনি।
স্বাধীনতালগ্নে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এই ছাত্রনেতারা।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই দ্বন্দ্বের কারণে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়।
তিনি কখনও নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের পরামর্শক হিসেবে তাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত। তাকে সবাই ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকেন।
সিরাজুল আলম খান কখনও জনসম্মুখে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান।