হোম অন্যান্যসারাদেশ কেশবপুরে আমের মুকুল ছড়াচ্ছে সুবাসিত সৌরভ

জয়দেব চক্রবর্ত্তী, কেশবপুর (যশোর):

যশোরের কেশবপুরে আবহাওয়া ভালো থাকায় এ বছর ফুটেছে প্রচুর পরিমানে আমের মুকুল। আম গাছে মুকুল আসতে শুরু করায় নানা ফুলের সঙ্গে ছড়াচ্ছে সুবাসিত সৌরভ। কবির ভাষায় ‘ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল, ডালে ডালে পুঞ্জিত আমের মুকুল। বনে বনে ফুল ফুটেছে, দোলে নবীন পাতা।’ এ যেন বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।

আমের মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে প্রকৃতি। গাছের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় চলছে ভ্রমরের সুর বাঞ্জনা। রয়েছে মৌমাছিরও গুঞ্জন। বাগানের সারি সারি গাছে স্নিগ্ধতার মধ্যেই শোভা ছড়াচ্ছে সোনালি মুকুল। সুরভিত মুকুলের গন্ধ পাল্টিয়ে দিয়েছে এ অঞ্চলের বাতাস। তাই দক্ষিণা বাতাসে দোল খাচ্ছে আম চাষীদের স্বপ্ন। সোনালি স্বপ্নে ভাসছেন তারা। এদিকে বছর ঘুরে আবারো ব্যাকুল হয়ে উঠেছে আম প্রেমীদের মন।

রোববার সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আম বাগান ঘুরে দেখা গেছে, গাছে গাছে নানা ফুলের সঙ্গে আমের মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণ আকাশে বাতাসে মৌ মৌ গন্ধে মাতোয়ারা করে তুলেছে। কোথাও কোথও হলুদ রঙের মুকুল আসতে শুরু করেছে।

ইতোমধ্যে বেপারিরা আম বাগানের দরদাম হাঁকাছেন। আর বাগানের মালিকেরা আমের ভালো ফলন পেতে ছত্রাক নাশক প্রয়োগসহ বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। আম চাষীরা খুশি হলেও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, শীত বিদায় নেয়ার আগেই আমের মুকুল আসা ভালো নয়। এখন ঘন কুয়াশা পড়লে বা বৃষ্টি হলে গাছে আগে ভাগে আসা আমের মুকুল চরম ক্ষতিগ্রস্থ হবে। যা ফলনেও মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কেশবপুর উপজেলায় চলতি বছরে আম চাষ হয়েছে প্রায় ৭৫০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে মজিদপুর, সাগরদঁাড়ি, পঁাজিয়া, মঙ্গলকোট, ত্রিমোহিনী ও কেশবপুর সদর ইউনিয়নে বেশি আমের বাগান রয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুকুলে থাকা ও আমের ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই আবাদ বাড়ছে।

আমের উৎপাদন যাতে বৃদ্ধি পায় এ জন্য কৃষি বিভাগ থেকে আম চাষীদের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। এ অঞ্চলে আমরুপালি, লেংড়া, ফজলি, হাড়িভাঙা, মল্লিকা, হিমসাগর থাই, গোপালভোগ, বারি ১০, দেশি, বেনারসি, সিতাভোগ ও রসে ভরা বোম্বাই জাতের আম আবাদ করা হয়। এর মধ্যে হিমসাগর, ফজলি, আমরুপালি ও লেংড়ার চাহিদা বেশি।

উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়নের বাগদহা গ্রামের গ্রামপুলিশ আবদুল কাদের, লুৎফর রহমান, হাজ্বী জালাল উদ্দিন, হাবিবুর রহমান হবিসহ আরও অনেকেই আমের আবাদ করেছেন। তারা জানান, কয়েক বছর ধরে এ গ্রামে আমের আবাদ করা হয়।

কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে গাছে যে পরিমান মুকুল এসেছে, তাতে পযার্প্ত আম ধরবে। পঁাজিয়া ইউনিয়নের আবদুল বারিক (আম বারিক), রফিকুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম, রহমত আলী, নাসির উদ্দিনসহ আরও অনেকেই আমের আবাদ করেছেন। তারা জানান, ফসলি চাষের জমি রেখে তাদের মতো এ অঞ্চলে অনেকেই আম বাগান করেছেন।

এবার ঘন কুয়াশা কম থাকায় আগে ভাগেই গাছে গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। এ কারণে নিয়মিত গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। সাগরদঁাড়ি ইউনিয়নের শওকত আলী, শহিদুল ইসলাম ও আবদুস সাত্তার মোল্লা বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকায় অধিকাংশ গাছে আমের মুকুল এসেছে। রোগ-বালাইয়ের হাত থেকে আমের মুকুলকে র্ক্ষা করতে ছত্রা নাশক স্প্রে করেছেন।

এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বলেন, আম গাছে মুকুল আসার আগে পোকা দমনের জন্য চাষীদের ছত্রা নাশক স্প্রে করতে বলা হয়েছে। হঠাৎ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে এ উপজেলার অধিকাংশ আম গাছে মুকুল ভালোভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছে। এছাড়া কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে গত বছরের তুলনায় এবার আমের উৎপাদন বেশি হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন