হোম অন্যান্য ৭২-এর সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের, দেশের মানুষ ইতিহাসের বিকৃতি মানবে না

৭২-এর সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের, দেশের মানুষ ইতিহাসের বিকৃতি মানবে না

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 11 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক:

বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, ইতিহাস বিকৃতি করে কেউ মাফ পায়নি। তিনি মনে করেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে সংবিধান হয়েছিল, সেই সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের অর্জন। লাখ লাখ শহীদ ও মা-বোনের ইজ্জত ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত এই সংবিধানের বিকৃতি দেশের ২০ কোটি মানুষ মেনে নেবে না।

রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এসব কথা বলেন। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে উল্লেখ করেন, সম্প্রতি জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে তার দলের বিরোধিতার কথা ভুলে গেছেন। তিনি ক্ষমা চাওয়ার বদলে মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। এসবের মধ্য দিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক জিয়াউর রহমানকেও খাটো করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের বিষয়ে তারা আগামী ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে ‘প্রোক্লেমেশন অব জুলাই’ প্রোগ্রাম ডেকেছে। তাদের পক্ষ থেকে রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘বাহাত্তরের সংবিধানকে কবরস্থ করা হবে।’

সাক্ষাৎকারে ইকবাল হাসান মাহমুদ উল্লেখ করেন, এই কথোপকথন একান্ত তার ব্যক্তিগত। দলীয় কোনও অবস্থান নয়।

বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ইতিহাসকে বিকৃত করে কখনও কেউ মাফ পায়নি। এরা যে প্রোক্লেমেশন দেবে, এটা কীসের প্রোক্লেমেশন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, পাকিস্তানের কবল থেকে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। আপামর জনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন হয়েছিল। আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় গৌরবের জায়গা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। যে যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন ভূখণ্ড লাভ করেছি। যারা বলছেন ৪৭ হয়েছিল বলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, তারা ভুল করছেন। সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি জামায়াতের আমিরের বক্তব্যে।’

সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ আরও যোগ করেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সমর্থন ছিল। কিন্তু যুদ্ধ করেছে এ দেশের সাহসী মানুষেরা। ওনারা (জামায়াত) বিরোধিতা করেছেন। এখন ক্ষমা চাওয়ার বদলে মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমিরের বক্তব্যের প্রতিবাদ করি।’

তিনি জানান, প্রত্যেকটা দেশের যুদ্ধে বহু দেশ পাশে দাঁড়িয়েছে, সাহায্য করেছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধেও এর চিত্র রয়েছে। চীন ও রাশিয়া তখন ভিয়েতনামকে সাহায্য করেছে। এর অর্থ এই না যে চীন ও রাশিয়া ভিয়েতনামকে স্বাধীন করেছে। যুদ্ধ করেছে ভিয়েতনামের মানুষেরাই।

ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, ‘যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করবে, তাদের জনগণ গ্রহণ করবেন না, বাংলাদেশের মানুষ গ্রহণ করবেন না।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সংবিধান কবরস্থ করার কথা জানিয়েছেন, এ প্রসঙ্গে ইকবাল হাসান বলেন, ’৭২-এর সংবিধান তো মুক্তিযুদ্ধের সংবিধান। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাহাত্তরের সংবিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংবিধান পেয়েছে। এটা মুজিব সরকার এসে নষ্ট করেছে। সেই দায় ওই সরকারের। ওই সরকারের জন্য শাসনতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করতে পারি না। ওই সংবিধান রেখেই তো মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান তার শাসনামলে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। এসব বিষয় প্রশ্নবিদ্ধ করার মানেই হচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকে দীর্ঘায়িত করা। কিন্তু এই দীর্ঘায়িত করার কোনও সুযোগ নেই। একটা অভ্যুত্থান মানেই জনগণের সমস্ত ম্যান্ডেট নয়। শ্রীলঙ্কায় গণঅভ্যুত্থানে সরকারের পতন হয়েছে। সেখানে এখন নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনা করছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের উচিত হবে নির্বাচনটাকে সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর জোর দেওয়া। তা না করে এই যে কুতর্ক, কুযুক্তি শুরু হয়েছে, তাও কিন্তু দেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা মানে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। এটাকে যারা প্রশ্নবিদ্ধ করবে, এটা তাদের ধৃষ্টতা। এটা দেশের ২০ কোটি মানুষ মেনে নেবে না। আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা তারা তো মানবোই না।’

বৈষম্যবিরোধী সংগঠকদের নতুন এই অবস্থান নিয়ে যুগপতে যুক্ত দলসহ বিএনপি কী মনে করে? এমন প্রশ্নের জবাবে ইকবাল হাসানের ভাষ্য, ‘আমার মনে হয়, যারা আমাদের যুগপতে যুক্ত তারা কেউ এই উপলক্ষ গ্রহণ করবেন না। মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে অচিরেই জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।’

ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দলের অবস্থান জানা যাবে তাদের ঘোষণার পর। আমরা তাদের ঘোষণা দেখবো। তার আগে বলতে চাই না। এই সরকারকে দ্রুত জনগণের জন্য এগিয়ে যাওয়া উচিত। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এই কুতর্ক বিগত ফ্যাসিজমকে সুবিধা দিচ্ছে নিঃসন্দেহে। এই কুতর্ক জাতীয় নির্বাচনকে ডিলে করবে। এর পেছনে চক্রান্ত জড়িত।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন