ইবি সংবাদদাতা: চাকুরী হতে অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি, পোষ্যকোটার ভর্তিতে শর্ত শিথিল ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের সেশন বেনিফিট বহাল রাখা সহ ১৬ দফা দাবি আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি। উক্ত সময়ের মধ্যে দাবিসমূহ মেনে নেওয়া না হলে কঠোর আন্দোলনেরও হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় উপাচার্যের অফিসকক্ষে দাবি নিয়ে উপাচার্যের সাথে দাবি আদায়ে গঠিত ‘ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি’র আলোচনায় প্রশাসনকে এ সিদ্ধান্ত জানান আন্দোলনকারীরা। কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি ও ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক এটিএম এমদাদুল আলম এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে, গত ২৬ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত দাবি আদায়ে ২ঘন্টা করে কর্মবিরতি করেন কর্মকর্তারা। পরে ০৫ আগস্ট থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত পাঁচ ঘন্টা কর্মবিরতি অব্যাহত রাখেন তারা। ঐসময় দাবি মানা না হলে আগস্ট মাস শেষে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারিও প্রদান করা হয়। এর পরেও তাদের দাবি মেনে নেওয়ায় গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লাগাতার কর্মবিরতি পালন করে আসছেন তারা।
কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রশাসনিক কাজে কর্মকর্তা কর্মচারীদের অংশগ্রহণ না করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এর অংশ হিসেবে গত ৩ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬১ তম সিন্ডিকেটে অংশ নিতে দেননি আন্দোলনকারীরা। ওইদিন বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রেজিস্ট্রারের অফিস ঘেরাও করে সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন কর্মকর্তারা। সর্বশেষ আজ সকাল ১১টায় দাবিসমূহ নিয়ে উপাচার্যের সাথে আলোচনায় বসেন তারা। এসময় দাবি আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সাত দিনের সময় বেঁধে দেন আন্দোলনকারীরা।
এ বিষয়ে কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি ও ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক এটিএম এমদাদুল আলম বলেন, আমাদের দাবিগুলো আইনসম্মত হওয়া সত্ত্বেও উপাচার্য তা না মেনে ইচ্ছে করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করছে এবং এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালোবাসি, কাজকে ভালোবাসি। আমরা সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা প্রশাসনকে পাঁচ দিনের সময় দিয়েছি। অভিভাবক হিসেবে উপাচার্য আমাদের দাবি গুলোর বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নিলেন তা জানাতে হবে। এর মধ্যে আমাদের দাবিগুলোর সমাধান না দিলে পরবর্তীতে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিবো।
কর্মকর্তাদের ১৬ দফা দাবি হলো-
১। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় চাকুরী হতে অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর করতে হবে।
২। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কর্মকর্তা কর্মচারীদের সেশন বেনিফিট বহাল রাখতে হবে।
৩। আইসিটি ছেলের উপ-রেজিস্ট্রার হাসিনা মমতাজ এর চাকুরি হতে অব্যাহতি প্রদানের গৃহীত অমানবিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।
৪। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টির পর থেকেই শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ পৌষ্য কোটার সুবিধা ভোগ করে আসছেন। GST এর অধীনে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষেও পৌষ্যদের ভর্তি করা হয়েছে। সে হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির মাধ্যমে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের আলোকে পৌষ্যদেরকে ভর্তি করতে হবে।
৫। কর্মকর্তা কর্মচারীদের চাকুরি হতে অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভিস কমিশনের ৮ ধারা অনুযায়ী সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ক্ষেত্রেই বাস্তবায়ন করতে হবে।
৬। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হলের সিনিয়র ইমাম মনিরুজ্জামান এবং শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সিনিয়র ইমাম বেলায়েত হোসেনের পদোন্নতি ও বাতিলকৃত উচ্চতার স্কেল ফিরিয়ে দিতে হবে।
৭। প্রকৌশল অফিসের দুইজন প্রকৌশলী বাদশা মামুনুর রশিদ ও নূরে আলমের পদোন্নতির সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে হবে।
৮। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুজনিত কারণে কর্মচারীবৃন্দের পরিবারের যোগ্যতম ব্যক্তিকে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মোতাবেক মৃত্যুর ৯০ দিনের মধ্যেই চাকুরী প্রদানের বিষয়টি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৯। সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদিত কর্মচারীদের পদোন্নতি নীতিমালার বিশেষ টিকার আলোকে ১১ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে শাখা কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি প্রদান করতে হবে।
১০। চিকিৎসা কেন্দ্রে কর্মরত সকল স্তরের টেকনিক্যাল কর্মকর্তাদের পদোন্নতি জটিলতা নিরসন করতে হবে।
১১। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় শিক্ষাগত যোগ্যতা বৃদ্ধির কারণে কর্মচারীবৃন্দের অনর্জিত ইনক্রিমেন্ট প্রদান করতে হবে।
১২। পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরীক্ষার পারিশ্রমিক বৃদ্ধি করতে হবে।
১৩ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যায় গাড়ি চালকদের সাত ধাপের সুবিধা বাস্তবায়ন করতে হবে।
১৪। সাধারণ কর্মচারীদের পদোন্নতি নীতিমালানুযায়ী বছরে চারবার পদোন্নতি/আপগ্রেটিং এর মাধ্যমে পদোন্নতি প্রদান করতে হবে।
১৫। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যুগোপযোগী অর্গানোগ্রাম করতে হবে।
১৬। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অফিসে কর্মরত ৬ জন কর্মকর্তার সাত বছর পূর্তিতে শাখা কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি/আপগ্রেটিং কার্যকর করার বিষয়ে আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. জহুরুল ইসলাম এর নেতৃত্বে এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি দুটির সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।