হোম জাতীয় হাউসবোট-বজরা নিয়ে বানভাসিদের পাশে একঝাঁক তরুণ

জাতীয় ডেস্ক :

ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর মুষল ধারায় বৃষ্টি সিলেট-সুনামগঞ্জ জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। নদী উপচে শহরের প্রতিটি বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়েছে পানি। কোথাও কোমর সমান, কোথাও বুক সমান পানি। এ চিত্র সুনামগঞ্জ ও সিলেট শহরের। পানিতে তলিয়ে থাকায় সড়কপথে জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। একাধিক বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ও বৈদ্যুতিক খুঁটি তলিয়ে যাওয়ায় জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহও বন্ধ আছে। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক নেই, ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ। কার্যত পুরো জেলা এখন সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন। বলা হচ্ছে, ১২২ বছরের ইতিহাসে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এমন বন্যা হয়নি। এর ফলে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। বন্যাকবলিত অঞ্চলে মানুষকে রক্ষায় কাজ করছে সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুনামগঞ্জ। এরপর সিলেট। সুনামগঞ্জ হাওড় অঞ্চল অধ্যুষিত হওয়ায় এ অঞ্চলে বিভিন্ন ট্রাভেলার্স গ্রুপ ভ্রমণের জন্য হাউজবোট, বজরা ও ব-বোটের ব্যবসা গড়ে তুলেছেন। গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্ট। ভয়াবহ এ বন্যায় মানুষের পাঁশে দাঁড়িয়েছে এ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি হাউসবোট-বজরা পরিণত হয়েছে এক একটি রেসকিউ বোট, আশ্রয়কেন্দ্র ও লঙ্গরখানায়। পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার করে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তারা। এ ছাড়া কেউ চাইলে তাকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন স্থানে আশ্রায় নেয়া মানুষদের ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছে এ বজরাগুলো।

এ বিষয়ে কথা হয় প্রকৃতি যাত্রী ট্রাভেলস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা তাসলিমা বাবলির সঙ্গে। তিনি জানান, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওড়ে তাদের ৮টি বজরা রয়েছে। গত ১৬ জুন পূর্ণিমা থাকায় তাদের বেশ কয়েকটি ট্রিপ ছিল। এর ফলে তাদের বজরাগুলোতে পর্যাপ্ত খাবার মজুত ছিল। এসব খাবার তারা গত দু’দিন বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করেছেন।

তিনি আরও জানান, বন্যার ফলে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসায় সুনামগঞ্জে টাঙুয়ার হাওড়ে যত ট্রাভেলার্স গ্রুপ রয়েছে, সবাই একসঙ্গে কাজ করছেন। এ ছাড়াও তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।

বাবলি জানান, তাদের প্রাথমিক ফান্ড শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা বিভিন্ন ভাবে ফান্ড কালেকশন করছেন। আজ রোববার ৫ লাখ টাকার ত্রাণ পাঠানো হয়েছে সুনামগঞ্জে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরও তাদের এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

ব-ট্রাভেলার্সের ওনার্স সাদিফুজ্জামান দিগন্ত। তিনি সুনামগঞ্জ থেকে বন্যাকবলিত কয়েকজনকে পৌঁছে দিতে কিশোরগঞ্জ যান। ফেরার পথে নৌকা বোঝায় ত্রাণ নিয়ে ফিরছিলেন।

তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বেশ কয়েকটি বোটের কাজ চলছে, সে কারণে বেশ কিছুদিন সুনামগঞ্জে ছিলাম। গত ১৬ তারিখ বিকেল থেকে অস্বাভাবিকভাবে পানি বাড়তে থাকে। একরাত্রের মধ্যেই ১০ থেকে ১৫ ফিট পানি বেড়ে গিয়ে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বোটগুলোতে ট্রিপের জন্য বেশকিছু খাবার মজুত ছিল, সেগুলো বোটে আশ্রিতদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এক একটি বোটে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন করে আশ্রয় নিয়েছেন। আমাদের মজুত করা খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় বিভিন্নভাবে ফান্ড কালেকশন করে ত্রাণ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।

দিগন্ত বলেন, এখানে প্রতিটি জিনিসের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। পেট্রলের লিটার নিচ্ছে ২শ’ টাকা, একটা মোমবাতির দাম নিচ্ছে ৮০ টাকা। শহরের অবস্থা খুবই খারাপ। মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে।

বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো এসব ট্রাভেলার্স গ্রুপগুলো ত্রাণ সহায়তার জন্য ফান্ড কালেকশন করছেন। তারা বন্যার্তদের সহায়তার জন্য তাসলিমা বাবলী (01791996299) ও নাঈমুলের (01874356527) সঙ্গে যোগাযোগ করতে আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানিয়েছেন, দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে ১০ জেলার ৬৪টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ। বন্যায় সিলেটের ৬০ শতাংশ প্লাবিত হয়েছে। আর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুনামগঞ্জ। সুনামগঞ্জের ৮০-৯০ শতাংশ এলাকা পানিতে ডুবে গেছে।

এনামুর রহমান জানান, এরই মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার্তদের জন্য জেলা প্রশাসনের তহবিলে ৮০ লাখ টাকা করে নগদ অর্থ দেয়া হয়েছে, যা দিয়ে চিড়া, মুড়ি, বিস্কুটসহ শুকনা খাদ্য দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া দুই এলাকায় দেড় হাজার টন চাল পাঠানো হয়েছে। হাতে ৫ কোটি টাকা রয়েছে, আরও ২০ কোটি টাকা সাধারণ ত্রাণ (জিআর) তহবিল থেকে চাওয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলেও সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।

এদিকে আবহাওয়া অফিস দিলো আরও দুঃসংবাদ। বৃষ্টিপাতের এ ধারা আরও দুদিন থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, সারা দেশেই আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হবে। কোথাও কোথাও হবে অতি ভারি বৃষ্টি। তবে সিলেট অঞ্চলে কাল সোমবার বৃষ্টির তীব্রতা কিছুটা কমতে পারে। এ সময় উজানের বৃষ্টিও কমতে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়ার সঙ্গে প্রবল বিজলী চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন