হোম অর্থ ও বাণিজ্য হরতাল-অবরোধে সরবরাহ ব্যাহত চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে, ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার শঙ্কা

বাণিজ্য ডেস্ক:

হরতাল-অবরোধে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে। ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি প্রায় ক্রেতাশূন্য বাজার। এতে কমে গেছে বেচাকেনাও। ঊর্ধ্বমুখী খাদ্যপণ্যের দামে প্রভাব পড়তে শুরু না করলেও সহিংস এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সামনে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারের সিংহভাগ ভোগ্যপণ্য সরবরাহ হয়ে থাকে বৃহত্তর খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই বাজার থেকে। সমুদ্র ও স্থলবন্দরগুলো থেকে প্রতিদিন গড়ে আড়াইশ থেকে ৩০০ ট্রাক ভোগ্যপণ্য নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় এ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে আসে। আবার বিক্রি করা পণ্য পরিবহনের জন্য প্রতিদিন এ বাজারে ট্রাক-মিনি ট্রাক ঢোকে আরও ৩০০-র মতো।

কিন্তু টানা অবরোধে নাশকতার আশঙ্কায় দেশের জেলা-উপজেলা ও মোকামগুলো থেকে পণ্য নিতে ট্রাকগুলো বাজারে আসতে পারছে না। পাশাপাশি বন্দরগুলো থেকেও পণ্য বোঝাই যানবাহন পর্যাপ্ত আসছে না। এতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে ভোগ্যপণ্য সরবরাহ।

এ বিষয়ে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমেদ বলেন, প্রতিদিন যদি এমন হরতাল ও অবরোধ দেয়া হয়, তাহলে দেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি হিসেবে দেশের সব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

গত তিন দিনের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত। (ফাইল ছবি)

এদিকে বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে আসতে পারছে না। এতে বাজার আরও অস্থির হওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। বিগত ৩ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে খাতুনগঞ্জে পাইকারিতে প্রতিকেজি ভারতের নাসিক অঞ্চলের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায় এবং ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০৪ থেকে ১০৫ টাকায়।

এছাড়া রাতে কিছু ট্রাক বাজারে ঢুকলেও বেচাকেনায় চলছে ভাটা। বর্তমানে পেঁয়াজের সঙ্গে সঙ্গে চড়া রসুন ও আদার দামও। এ বাজারে প্রতিকেজি আদা পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতিকেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৪৬ থেকে ১৫০ টাকায়।

সরবরাহ কম থাকার কথা উল্লেখ করে এক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, পণ্যবাহী গাড়ি কম আসছে। সেই সঙ্গে এখান থেকে পণ্যবাহী গাড়ি অন্য জায়গায় যাচ্ছেও কম। সরবরাহ বাড়লে হয়তো আমরাও সরবরাহ বাড়াতে পারতাম।

আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, আগের তুলনায় এখন বাজারে কম পণ্যবাহী গাড়ি আসছে। এর ওপর নির্ভর করেই মূলত বেচাবিক্রি করছি।

এ ছাড়া ভোজ্যতেল ও চিনির দাম নতুন করে না বাড়লেও মিল গেট থেকে সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ঠিকমতো সরবরাহ না পাওয়ার অভিযোগ করে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা মিল থেকে তেল ও চিনির সরবরাহ ঠিকমতো পাচ্ছি না। সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। কিছু আসে আবার কিছু আসে না। তবে অবরোধের কারণে অধিকাংশ পণ্যই দেখা যাচ্ছে পাচ্ছি না।’

তবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডালের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে তা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাজারে ডালের দামের চিত্র তুলে ধরে এক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, ‘বাজারে মুগডাল ১২০ টাকা, মটর ডাল ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা।’

স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অবরোধে খাতুনগঞ্জে বেচাবিক্রি ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমে গেছে বলে জানা গেছে। এতে প্রতিদিন কয়েকশ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

দীর্ঘদিন লাগামহীন ভোগ্যপণ্যের বাজারে এখন নতুন খড়গ হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের শঙ্কা, এ ধরনের রাজনৈতিক সংঘাতপূর্ণ কর্মসূচি দীর্ঘায়িত হলে বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন