হোম অন্যান্যশিক্ষা সেশন ফি দিতে না পারায় বই পায়নি প্রতিবন্ধী ময়না

সেশন ফি দিতে না পারায় বই পায়নি প্রতিবন্ধী ময়না

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 90 ভিউজ

শিক্ষা ডেস্ক:

নীলফামারীর ডিমলায় টেপাখড়িবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে নতুন বই বিতরণে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, সেশন ফি ও ফরম পূরণের নামে শ্রেণি অনুযায়ী প্রতি শিক্ষার্থীর কাছে থেকে বাধ্যতামূলক ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। যারা টাকা দিতে পারেনি তাদের বই দেওয়া হয়নি।

তবে প্রধান শিক্ষকের দাবি, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ও সেশন ফি বাবদ শ্রেণিভেদে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। বইয়ের জন্য কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। কিন্তু বই দেওয়ার সময় সেশন ফি অথবা ফরম পূরণের টাকা জমা দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই বলছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান।

মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে টেপাখড়িবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাত-আটজন অভিভাবক বলেন, বিনামূল্যের পাঠ্যবই পেতে শিক্ষার্থীদের টাকা গুনতে হচ্ছে। প্রতি সেট বইয়ের জন্য শিক্ষকেরা ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন।

জিঞ্জির পাড়া গ্রামের ফারিদা আকতারের (৩০) ছেলে ফাহিম সরকার টেপাখড়িবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ফারিদা বলেন, তার ছেলে নতুন বই আনতে গেলে শিক্ষকেরা ৭০০ টাকা দাবি করে। পরে অনেক কষ্টে তিনি ৫০০ টাকা জোগাড় করে ছেলেকে দেন। কিন্তু ছেলে বই না নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে আসে। তখন বিদ্যালয়ে গিয়ে জানতে পারি, বই নিতে হলে পুরো ৭০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। ২০০ টাকা বাকি রাখায় ছেলেকে বই দেওয়া হয়নি। উপায় না দেখে প্রতিবেশীর নিকট তার চাষাবাদের শ্যালো মেশিনটি বিক্রি করে ছেলেকে টাকা দেন ফরিদা।

শিক্ষার্থী ফাহিম বলেন, তার বাবা গত সাত মাস থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। মা সেশন ফি’র সম্পূর্ণ টাকা দিতে না পারায় আমাকে বই দেয়নি। পরে টাকা পরিশোধ করে নতুন বই নিয়েছি।

একই এলাকায় দিনমজুর মাকে নিয়ে বসবাস করেন ওই বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী শারীরিক প্রতিবন্ধী ময়না আকতার। তার মা স্বামী পরিত্যক্তা ফরিদা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।

ফরিদা জানায়, শিক্ষকরা তার মেয়েকে সেশন ফি’র টাকা ছাড়া এ বছরের নতুন বই দেয়নি। পরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ৫০০ টাকা নিয়ে তিন থেকে চার দিন স্কুলে গিয়েছি। কিন্তু পুরো টাকা দিতে না পারায় তার মেয়েকে ভর্তি ও নতুন বই দেয়নি।

ফরিদা বলেন, শুনেছি সরকার বই বিনামূল্যে দিচ্ছে। তাহলে আমার কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে কেন? আমি স্বামী পরিত্যক্তা দিনমজুর মানুষ। দিন আনি দিন খাই। অথচ আমার মেয়ে প্রতিবন্ধী। উপবৃত্তির টাকাও পায়নি। এত টাকা একসঙ্গে জোগাড় করা কি আমার পক্ষে সম্ভব! তাই মেয়েকে ভর্তি করাতে না পেরে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছি গার্মেন্টসে কাজ খোঁজার জন্য।

বিদ্যালয়ের মাঠে আসা কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, টাকা ছাড়া তাদের নতুন বই দেওয়া হয়নি। তাই তারা বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে এসে বিদ্যালয় থেকে নতুন বই সংগ্রহ করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আমির হামজা, মনিরসহ কয়েকজন অভিভাবক কালবেলাকে বলেন, সারা দেশের শিক্ষার্থীরা ১ জানুয়ারি নতুন বই পেয়ে আনন্দ করেছে। আর টেপাখড়িবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকার বিনা মূল্যে বই দিচ্ছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক টাকা ছাড়া বই দিচ্ছেন না।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা বলেন, ভর্তি ও সেশন ফি বাবদ টাকা আদায়ের পর শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন বই বিতরণ করা হয়। সেশন ফি না নিয়ে ভর্তি ও বই দিতে নিষেধ করেছেন প্রধান শিক্ষক। তার চিরকুট ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারব না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেপাখড়িবাড়ি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুন বলেন, আমরা ভর্তি ও সেশন ফি বাবদ ষষ্ঠ, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ৫০০ টাকা এবং সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নিকট ৭০০ টাকা নিয়েছি। নতুন বইয়ের জন্য কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। নির্ধারিত সেশন ফি’র পুরো টাকা ছাড়া বই না দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, শ্রেণি শিক্ষকরা ভর্তির দায়িত্বে আছেন। আমি বিষয়গুলো খোঁজ নিয়ে দেখব।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার সকল শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে বই দিচ্ছে। সরকারি বই বিতরণ নীতিমালা অনুযায়ী বিতরণের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো অর্থ নেওয়ার সুযোগ নেই। যদি কেউ নিয়ে থাকে, তাহলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন