হোম আন্তর্জাতিক সিরিয়ায় নতুন করে গৃহযুদ্ধের নেপথ্যে কারা

সিরিয়ায় নতুন করে গৃহযুদ্ধের নেপথ্যে কারা

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 23 ভিউজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

সিরিয়ার বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো দেশের সবচেয়ে বড় শহর এবং আশে-পাশের কয়েকটি গ্রাম ও শহর দখল করার পর দীর্ঘ দিন ধরে চলা গৃহযুদ্ধ আবার বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এই যুদ্ধে ভূমিকা রাখছে এমন কয়েকটি দেশ এবং গোষ্ঠী নিজেদের সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকার মাঝে বিদ্রোহীদের এই চমক লাগানো অভিযান আসে। এর ফলে, ২০২০ সালের যুদ্ধবিরতির পর সবচেয়ে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রা সীমিত করতে রাশিয়া এবং সিরিয়ার বাহিনী ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে, যার ফলে প্রচুর হতাহত হয়েছে।

এখন প্রশ্ন উঠেছে দেশটিতে নতুন করে আবার কেন গৃহযুদ্ধ শুরু হলো। সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, এক সময় আল কায়েদার অংশ ছিল এইচটিএস নামক জঙ্গি সংগঠন। তারাই নতুন করে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছে।

হায়াত তাহিরির আল-শাম, সংক্ষেপে এইচটিএস। তুরস্কের মদতপুষ্ট এই সংগঠনই গত এক সপ্তাহ ধরে সিরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরো বেশ কয়েকটি ছোট ছোট ইসলামি সংগঠন। তবে নেতৃত্ব দিচ্ছে এইচটিএস।

সিরিয়ার সরকারী বাহিনী, রাশিয়া এবং ইরান সমর্থিত

রাশিয়া এবং ইরানের পাঠানো বাহিনীর বদৌলতে সিরিয়ার সরকারী বাহিনী দীর্ঘ দিন ধরে দেশের বিশাল অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রেসিডেন্ট আসাদের সেনাবাহিনী দেশের বড় জনবহুল কেন্দ্রগুলো নিয়ন্ত্রণ করে, যার মধ্যে রয়েছে রাজধানী দামেস্ক এবং দেশের মধ্যাঞ্চল, দক্ষিণ এবং পূর্বের শহরগুলো।

সিরিয়ান সরকার ২০১৬ সালে আলেপ্পো পুনরুদ্ধার করলে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে শহরটি হারানো তাদের জন্য বড় ধাক্কা।

যুদ্ধের পুরো সময়, ইরানের সামরিক উপদেষ্টা এবং তাদের সমর্থিত মিলিশিয়া বাহিনীগুলো আসাদের বাহিনীকে টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু লেবাননের হিজবুল্লাহ বাহিনী, যাদের ইরান সহায়তা দেয়, তারা ইসরায়েলের সাথে সাম্প্রতিক যুদ্ধে দুর্বল হয়েছে এবং ইরানের মনোযোগও ঐ যুদ্ধের দিকেই আকৃষ্ট হয়।

গত সোমবার ইরান-সমর্থিত ইরাকি মিলিশিয়া বাহিনী সরকারী বাহিনীর পাল্টা হামলা সমর্থন করতে সিরিয়ায় প্রবেশ করেছে। রাশিয়ার সামরিক বাহিনী প্রেসিডেন্ট আসাদকে ভূমধ্যসাগর উপকূল থেকে সাহায্য করেছে, যেখানে প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরে তাদের একমাত্র নৌঘাঁটি আছে। সিরিয়ার লাতাকিয়া প্রদেশের হেমেইমীম-এ রাশিয়ার বড় বিমান ঘাঁটি আছে যেখানে শত শত রুশ সৈন্য অবস্থান নিচ্ছে। তবে রাশিয়ার মনোযোগ চলে গেছে ইউক্রেনের যুদ্ধে।

বিদ্রোহী গোষ্ঠী, মূলত তুরস্ক সমর্থিত

বিদ্রোহী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) সরকার-বিরোধী বাহিনীগুলোকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, যারা দীর্ঘ দিন সিরিয়ায় আল-কায়েদার শাখা হিসেবে কাজ করেছে। জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্র সহ কয়েকটি দেশ এইচটিএসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে।

সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা এইচটিএস নিয়ন্ত্রণ করে এবং দৈনন্দিন কাজ চালানোর জন্য তারা ২০১৭ সালে একটি “পরিত্রাণের সরকার” গঠন করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, তাদের নেতা আবু মোহাম্মেদ আল-জোলানি আল-কায়েদার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, কট্টরপন্থী কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে এবং ধর্মীয় সহনশীলতা অনুসরণ করার অঙ্গিকার করে গোষ্ঠীর ভাবমূর্তি বদলানোর চেষ্টা করেছেন।

অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে নুরেদ্দিন এল-যিঙ্কি, যারা এইচটিএস-এর নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেবার আগে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট ছিল।

সিরিয়া ন্যাশনাল আর্মি (এসএনএ) নামক একটি তুরস্ক-সমর্থিত গোষ্ঠী উত্তরের শহর তেল রিফাত সহ বেশ কিছু এলাকায় হামলা চালিয়েছে, যেগুলো যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত কুর্দি-নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স (এসডিএফ) এর নিয়ন্ত্রণে ছিল।

সিরিয়ার সরকার-বিরোধী কর্মীদের তথ্য অনুযায়ী, তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টির চীনা জঙ্গি এবং প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আসা চেচেন যোদ্ধারা দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে লড়াই-এ অংশ গ্রহণ করেছে।

সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স, যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত

যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত কুর্দি-নেতৃত্বাধীন জোট সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স (এসডিএফ) সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে।

এসডিএফ ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর সাথে লড়াই করে পূর্ব সিরিয়ায় তাদের হাতে থাকা শেষ এলাকাগুলো দখল করে। উগ্রবাদী আইসিস-এর পুনরুত্থান যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে ৯০০ মত আমেরিকান সেনা মোতায়েন আছে।

আলেপ্পোর কিছু এলাকা এসডিএফ এখনো নিয়ন্ত্রণ করছে যদিও সেগুলো বিদ্রোহীরা ঘিরে রেখেছে। বিরোধী কর্মীরা বলেছে, বিদ্রোহীরা এসডিএফ যোদ্ধাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চলে যেতে দিতে রাজি, কিন্তু কুর্দি-নেতৃত্বাধীন বাহিনী সেটা করবে কিনা, তা পরিষ্কার নয়।

তুরস্ক মনে করে এসডিএফ-এর মূল কুর্দি গোষ্ঠী নিষিদ্ধ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি বা পিকেকে-এর সাথে সম্পৃক্ত। তুরস্ক এবং তার মিত্ররা পিকেকে-কে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন