হোম অন্যান্যসারাদেশ সাড়া জাগিয়েছে মণিরামপুরের দাউদ হাসানের কফি হাউজ! !অর্থের অভাবে এটি আধুনিকায়ন করা সম্ভবপর হচ্ছে না!

সাড়া জাগিয়েছে মণিরামপুরের দাউদ হাসানের কফি হাউজ! !অর্থের অভাবে এটি আধুনিকায়ন করা সম্ভবপর হচ্ছে না!

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 95 ভিউজ

মণিরামপুর (যশোর)প্রতিনিধি :

‘কফি হাউজে সেই আড্ডাটা আজ আর নেই! কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী দিনগুলো-আজ আর নেই’ আজ আর নেই! বহুব্রীহি বাংলা ব্যান্ড সংগীতের এই জনপ্রিয় গানটি অতি সম্প্রতি এক ফেসবুক বন্ধু আমাকে শেয়ার করে দেয়ার সুবাদে বহুদিন পর বেশ মনোযোগ দিয়ে গানটি শুনছিলাম। ঠিক তখনই মনে পড়ে গেল যশোরের মণিরামপুর উপজেলার খেদাপাড়া ইউনিয়নের নিভৃত পল্লী গাংগুলিয়া গ্রামের দাউদ হাসানের কফি হাউজের কথা। গত সোমবার সন্ধ্যায় এতদাঞ্চলের সাড়া জাগানো দাউদ হাসানের সেই কফি হাউজে যাবার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে মোটরবাইকে চড়ে রওনা হলাম। মণিরামপুর রাজগঞ্জ-যশোর পুলেরহাট সড়কের খেদাপাড়া বাজার থেকে যশোরের দিকে অল্প পথ অতিক্রম করেই দেখা মিলল সেই কাংখিত দাউদের কফি হাউজ।

দেখলাম মনোমুগ্ধকর এক ভিন্ন মাত্রার জমকালো আয়োজন। রাস্তার পূর্বপাশের্^ গ্রামের মধ্যে সম্পূর্ন জনবসতিহীন ফাঁকা জায়গায় বেশ নিরিবিলি পরিবেশে শহরের আদলে বৈদ্যুতিক বাতির আলোকোচ্ছটায় গোটা কফি হাউজকে ঘিরে লোকসমাগমে এক জমকালো রেস্তুরায় পরিনত হয়েছে। এটি দেখা মাত্রই প্রত্যেকের কাছে বেশ আকর্ষনীয় মনে হবে বৈকি! আমার মোটরবাইকটি পার্কিং করে রেখে কফি হাউজটি ঘুরে এক নজরে দেখলাম। রাস্তার কোল ঘেষে সারি সারি মোটরবাইক ও হরেকরকমের যানবহনে চড়ে একটু চা-কফি ও নাস্তা-খাবার খেতে এবং একটু বিনোদনের মনের খোরাক পেতে অনেকেই দুরদুরান্ত থেকে ফ্যামিলি নিয়ে আবার অনেকেই বন্ধুদের সাথে নিয়ে একটু আড্ডা ও বিনোদনের জন্য এসেছেন এই কফি হাউজে। একটু ঘুরাঘুরি করতেই এই কফি হাউজের রুপকার দাউদ হাসানের দেখা মিললো।

সম্পূর্ণ গ্রামের মধ্যে যাদুকরী ঘটনার ন্যায় তার কফি হাউজে প্রতিনিয়ত বিপুল সংখ্যক লোকসমাগম ঘটানোর পূর্বপরিকল্পনা ও কলাকৌশল জানতে আমার বেশ আগ্রহ পেয়ে বসলো। দাউদ হাসানের সাথে একান্ত কিছু কথা বলার আগ্রহ দেখানোর পর তিনি একটু সময় চেয়ে নিয়ে অতঃপর রাত ৯টার দিকে সময় দিলেন আমার সাথে। তার কাছে একের পর এক প্রশ্নবানে এই কফি হাউজ নির্মাণের আইডিয়া ও ইতিবৃত্ত জানতে পারলাম। দাউদ হাসান এ প্রতিবেদককে জানান, তার পিতা আয়ুব হোসেন সরদার একজন দরিদ্র দিনমজুর। বাবা-মা, দুইভাই ও এক বোন নিয়ে তাদের সংসার। অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে লেখাপড়া বাদ দিয়ে ২০১৩ সালে ধার-দেনা করে মালায়েশিয়ায় পাড়ি জমান দাউদ হোসেন। কিন্তু তার বিধি বাম। এক বছরের মত সময় বিদেশে থেকে ভাগ্য বিপর্যয়ের দরুন দেশে ফিরে আসতে হয়। সেসময় অর্থিক দৈন্যতা চরম বিপর্যয়ে ফেলে দেয়। বাধ্য হয়ে এই রাস্তার মোড়ে একটি চা-পানের দোকান দিয়ে কিছু আয়-রোজগার করার চেষ্টা করতে থাকি।

এরপর আমি আমার বাবার ক্রয়কৃত আজকের কফি হাউজের এই ১২ শতক জমিতে মাটি ভরাট করে একেবারে আর্থিকভাবে জিরো থেকে মাইনাস পজিশনেই আমি আজকের এই কফি হাউজ নির্মানের পরিকল্পনা গ্রহণ করি। সেই অনুযায়ী বিগত তিন বছর ধরে সম্পূর্ণ ধারদেনা করে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয় করে এটি নির্মাণ করেছি। গত তিন মাস আগে এটির সেবা কার্যক্রম শুরু করা হয়। যা অল্প দিনেই বেশ সাড়া জাগিয়েছেন বলে তিনি দাবী করেন। ইচ্ছা শক্তি ও আত্নপ্রত্যয় নিয়ে কোন কিছু করলে সেই কাজে সফলতা আসবেই এমন অভিপ্রায় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমার বাবার কেনা এই ১২ শতক জমির সম্পূর্ণটা নিয়ে আমি পরিকল্পিতভাবে ১২ টি স্থায়ী ক্যান্টিন স্টল ও অস্থায়ীসহ মোট ১৫টি স্টল, ২টি দোকান, একটি আবাসিক ঘর, একটি শোচাগার নির্মাণ করেছি। আর রাস্তা সংলগ্ন গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

প্রতিটি স্টলে টেবিল-চেয়ার দিয়ে সুন্দর পরিবেশে কাস্টমারদের সেবা দিয়ে আসছি। এই কফি হাউজের মধ্যখানে বিনোদনের জন্য টিভি ও অডিও’র ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিযুক্ত করা হয়েছে নিয়মিত ও অনিয়মিত দশজন সার্ভিসবয়কে। আপ্যায়নের জন্যে কী কী আইটেম প্রচলন করা হয়েছে জানতে চইলে তিনি জানান,কফি-চা তো আছেই। পাশাপাশি চটপটি, ফুসকা, বার্গার, নুডুস, স্যানউইজ, ভ্যাজিটেবল রোল,বিভিন্ন ধরনের পানীয়সহ নানা ধরনের রেস্তুরেন্টের আইটেম আপ্যায়নের জন্য রাখা হয়েছে। লোকসমাগম যা হচ্ছে তা গ্রামীণ পরিবেশের তুলনায় বেশ বেশী বলে তিনি দাবি করেন। তবে শুক্র ও শনিবারে লোকসমাগম বেশী হয় বলে বেচা বিক্রিও বেশি হয়। প্রতিমাসে কর্মীদের বেতন বাবদ ত্রিশ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে।

ফলে প্রত্যাশিত আয়-রোজগার এখনও করতে পারেননি। তবে তিনি এইটাকে ঘিরে আরও একটু বড় কিছু করা যায় কী না? তাই নিয়েই তিনি ভাবছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মহাপরিকল্পনা গ্রামকে শহর করার প্রত্যয়ে তিনি আশান্বিত হয়ে তার এই কফি হাউজ নির্মাণের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন আজ পূরণ হতে চলেছে। এটিকে আরও বড় কিছু করতে গেলে বেশ টাকার প্রয়োজন। তাই তিনি তার কফি হাউজকে ঘিরে কাংখিত আরও কিছু করার পরিকল্পনা অর্থাভাবে করতে পারছেন না বলে জানান । এ ব্যাপারে সদাশয় সরকারের দৃষ্টি আরোপ করেছেন তিনি। তার এই কাজে আর্থিক সাপোর্ট পেলে কাফি হাউজের সেই হারিয়ে যাওয়া বিনোদনের আড্ডা এই অজ পাড়া গাঁয়ে জমিয়ে তুলতে প্রানান্তর চেষ্টা করবেন বলে তিনি বেশ আশাবাদি।

s

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন