বাণিজ্য ডেস্ক :
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা বলেছেন, ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। জনপ্রতি মাংসের প্রাপ্যতা দৈনিক ১৬০ গ্রাম এবং বছরে ডিমের প্রাপ্যতা ২০৮টিতে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এ লক্ষ্য পূরণ করতে হলে একদিকে যেমন উৎপাদন ব্যয় কমাতে হবে, সাশ্রয়ী মূল্যে সবার জন্য ডিম ও মাংসের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে; অন্যদিকে তেমনি ডিম, দুধ ও মাংসকে অধিকতর নিরাপদ করতে হবে।
শনিবার (২২ অক্টোবর) ঢাকার একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ভেটেরিনারি পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউভিপিএ) বাংলাদেশ শাখা আয়োজিত দুই দিনব্যাপী পঞ্চম ডব্লিউভিপিএ এশিয়া মিটিং-২০২২-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে চাই এবং এ ক্ষেত্রে পোলট্রিশিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ শিল্পের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে বেসরকারি উদ্যোক্তা, শিক্ষক, গবেষক এবং সরকার একযোগে কাজ করছে।
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) নির্বাহী সদস্য এবং ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) সিনিয়র সহসভাপতি আবু লুৎফে ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতিতে পোলট্রিশিল্পের অবদান অনস্বীকার্য়। গ্রাম থেকে শহরমুখী মানুষের যে স্রোত আগে দেখা যেত, পোলট্রিশিল্পের বিকাশের কারণে তা অনেকাংশে কমেছে।
শাহরিয়ার বলেন, ‘কীভাবে উৎপাদন খরচ কমানো যায়, সেটিই এখন প্রধান বিবেচ্য। রোগ-জীবাণুর সংক্রমণ কমাতে পারলে উৎপাদন খরচ এমনিতেই কমে আসবে। আমরা রফতানির কথা ভাবছি, কিন্তু নিরাপত্তার মাপকাঠিতে ডিম ও মুরগির মাংসের মান আরও বাড়াতে না পারলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে বেগ পেতে হবে।’
গ্লোবাল ডব্লিউভিপিএ প্রেসিডেন্ট নিকোলাস ইতেরাদোসি বলেন, বিশ্বব্যাপী রোগ-জীবাণুর সংক্রমণ বাড়ছে। পোলট্রিশিল্পের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভেটেরিনারিয়ানরা দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখছেন।
এ সময় পরিযায়ী পাখির মাধ্যমে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস কীভাবে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে– নিকোলাস তা তুলে ধরেন এবং ফ্রান্সের অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের জন্য কিছু সুপারিশ উপস্থাপন করেন।
ফ্রান্সের অপর এক গবেষক ক্রিস্টোফি কাজাবান বলেন, একসঙ্গে একাধিক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটলে মুরগির মৃত্যুর হার বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। কখনো কখনো লো-প্যাথজনিক ভাইরাসও হাইলি প্যাথজনিক ভাইরাসের মতো ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করছে।
ডব্লিউভিপিএ বাংলাদেশ শাখার সভাপতি প্রফেসর ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, কোভিড মহামারি একদিকে যেমন বৈশ্বিক সংক্রমণের ভয়াবহতাকে তুলে ধরেছে, একই সঙ্গে রোগ-জীবাণুর সংক্রমণ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিষেধক আবিষ্কার ও তার যথাযথ প্রয়োগ যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটিও বিশ্বকে শিখিয়েছে।
তিনি বলেন, পোলট্রিশিল্পকে এগিয়ে নিতে হলে বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে এগিয়ে নিতে হবে এবং ভেটেরিনারিয়ানদের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনে মোট ১২টি প্লেনারি বক্তৃতা এবং ৭০টি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র ও পোস্টার উপস্থাপন করা হবে। বিজ্ঞানীরা পোলট্রি ও জনস্বাস্থ্য (ওয়ান হেলথ) বিবেচনায় নতুনভাবে আবির্ভূত পোলট্রি রোগগুলো শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) প্রশমনে করণীয় বিষয়ে জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন।
এ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যভিত্তিক হাউটন ট্রাস্ট-মালয়েশিয়ার অধ্যাপক মোহাম্মদ হেয়ার বিন বেজোকে পোলট্রি স্বাস্থ্য গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘এভিয়ান প্যাথলজি এশিয়া লেকচার অ্যাওয়ার্ড’ দেয়া হয়।