নিজস্ব প্রতিনিধি :
হিন্দু স¤প্রদয়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পুজার বিজয়া দশমীতে এবারও সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার সীমান্ত নদী ইছামতিতে স্ব স্ব জলসীমানায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে থেকে প্রতিমা বিসর্জন দিতে হয়েছে। এর ফলে তেমন জাক-জমক পূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়নি শত বছরের ঐতিহ্যবাহী দুই বাংলার মানুষের মিলন মেলা।
সকাল থেকে ইছামতি নদীর দু’পারে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হলেও স্ব স্ব জলসীমার মধ্যে নৌকা ভাসানোর কারনে দুই বাংলার মানুষের মিলন মেলায় কিছুটা হলেও ভাটা পড়ে। আর এর ফলে অনেকটা হতাশ হয়ে ফিরে যান দু’বাংলার মানুষ।
এপারে দেবহাটার টাউন শ্রীপুরের জমিদার বাড়ি, ওপারে ভারতের দক্ষিন চব্বিশ পরগনা জেলার বশিরহাট মহকুমার হাসনাবাদ থানার টাকী জমিদারবাড়ি। দেড় কিলোমিটারের বেশী চওড়া ইছামতির মধ্যসীমা বরাবর বিজিবি ও বিএসএফ এর নজরদারি ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে বিসর্জন উপলক্ষ্যে নদী তীরে আসা প্রতিমাগুলিকে আগের মত ভাসতে দেখা যায়নি।
প্রতিমা বিসর্জনের সময় টাউনশ্রীপুর ইছামতি নদীর ধারে উপস্থিত ছিলেন, দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী, দেবহাটা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এসএম জামিল আহমেদ, দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্লাহসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এর আগে বিজিবি ও বিএসএফ যৌথ সমাবেশ করে দুই দেশের নিরাপত্তা বিষয়ক কৌশল গ্রহন করে।
মিলন মেলায় অংশ নেয়া বিভিন্ন স্থান থেকে আগতরা জানান, বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতি হিসাবে দুই বাংলার এই মিলন মেলা আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। শত বছর ধরে এই মেলা হয়ে আসছে। এ সময় একাকার হয়ে যায় সব ধর্ম বর্ণের মানুষ। তারা পরস্পরকে শারদীয়া শুভেচ্ছা জানান।
ইছামতি নদীর টাউনশ্রীপুরে এবং ভারতের টাকি পৌরসভা এলাকায় প্রায় ১০ কিলোমিটার জুড়ে এই মেলা বসত। এতে অংশ নিতো দুই বাংলার লাখো মানুষ। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে জঙ্গি হামলার আশংকায় এই মিলনমেলা স্তিমিত হয়ে যায়। এরপর নদীতে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র সহ দুই জনের সলিল সমাধি ঘটে। এছাড়াও করোনাকালীন বাধানিষেধের কারনে কয়েক বছর ধরে এই মিলনমেলা প্রানহীন হয়ে পড়েছে।
বিগত কয়েক বছর যাবত আইন-শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে এবং উভয় দেশের মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে পারাপারসহ সন্ত্রাসী, পলাতক আসামী, দুষ্কৃতিকারীরা যাতে করে অবৈধভাবে এক দেশ থেকে অন্য দেশে না যেতে পারে সেজন্য কঠোর এই ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন।
দু’দেশের জাতীয় ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কঠিন সিদ্ধান্তে ঐতিহ্যবাহী এই মিলন মেলা স্ব-স্ব জলসীমানায় অনুষ্ঠিত হলেও কেউই কোন দেশের স্থলে উঠতে পারেননি। অসুর শক্তিকে বিনাশ করে শান্তির বরাভয় আর শস্যশ্যামলা বসুন্ধরা উপহার দিয়ে মর্ত্যভূমির পিত্রালয় থেকে দোলায় চড়ে কৈলাসে ফিরে গেলেন দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মা তুমি আবার এসো উচ্চারনে ঝরালেন বিষাদে আনন্দাশ্রু। তবে দর্শক এবং এলাকাবাসীর দাবি, এই মিলনমেলার পুনরুজ্জীবনের। এর মধ্য দিয়ে তারা বাংলাদেশ ও ভারতে অসাম্প্রদায়িকতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে চান।