নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা আমিনুর রহমানকে হয়রানি করতে একটি চক্র কর্তৃক একের পর এক অভিযোগ তোলা হচ্ছে বলে দাবী করেছেন তিনি। টানা কয়েক বছর ধরে চলছে এভাবেই। তবে কোন উপায় না পেয়ে নতুন করে আবারও উঠে পড়ে লেগেছে ওই চক্রটি।
চক্রটির অভিযোগ, শ্যামনগর নকিপুর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা থাকাকালীন আমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে আমন মৌসুমে ৮শ মেট্রিকটন সরকারি চাল সংগ্রহ ও বিতরণে এক কোটি টাকা আতœসাতের অভিযোগ তোলেন মানিকখালি গ্রামের হুমায়ূন কবির। ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল হুমায়ূন কবির আদালতে একটি মামলা দাখিল করেন। বিচারকের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ২৫ মার্চ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন দুদক খুলনা কর্যালয়ের তৎকালীন সহকারি পরিচালক তরুণ কান্তি ঘোষ। প্রতিবেদনে তিনি বলেন, মামলার বাদীর অভিযোগের বিষয়ের সত্যতা পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন।
এ বিষয়ে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা আমিনুর রহমান বলেন, ভেটখালি খাদ্য গুদামের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছিলেন হুমায়ূন কবির। এনিয়ে খাদ্য বিভাগ ও হুমায়ূন কবিরের মধ্যে আদালতে মামলা ছিল। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের পক্ষে মামলাটি আমি আদালতে তদারকি করায় আমার উপর ক্ষিপ্ত ছিলেন হুমায়ূন কবির। সেকারণে আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে মামলাটি দাখিল করেছিলেন তিনি। তবে তদন্তে দুর্নীতির কোন চিত্র পায়নি দুদক।
আরেকটি অভিযোগ, বাবার ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি করছেন আমিনুর রহমান। এমন অভিযোগেও একাধিকবার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে পরিচয়বিহীন পত্র পাঠানো হয়েছে। নথিপত্রে দেখা যায়, আমিনুর রহমানের বাবা কেশবপুর উপজেলার আব্দুল করিম। তার ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রæয়ারি বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর তৎকালীন অধিনায়ক মুহাম্মদ আতাউল গণী ওসমানীর স্বাক্ষরিত স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র রয়েছে। পত্রটি স্বাক্ষর রয়েছে আট নম্বর সেক্টরের আঞ্চলিক অধিনায়কের। যার সনদপত্র নম্বর ১২৬০৪৫। ক্রমিক নম্বর ১১৫১৪। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার থাকাকালীন গঠণ হয় মুক্তযোদ্ধা মন্ত্রনালয়। নতুন করে ২০০৪ সালে যাচাই বাছাই শেষে ২০০৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় আরেকটি সনদপত্র দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে আব্দুল করিমের অবদান স্বীকার করে। প্রকাশ হয় গেজেট যার নম্বর ২৬৭২। এরপর থেকে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের মত তিনিও সরকারি সুযোগ সুবিধপ্রাপ্ত হন।
২০১০ সালের দিকে কেশবপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তৎকালীন বিতর্কিত কমান্ডার মোহাম্মদ আলী কেশবপুর উপজেলার ৪২ জন মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে তিনি দাবি করেন, ২০০৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় থেকে ৪২ জনকে দেওয়া সনদপত্র ভূয়া। মন্ত্রনালয় যশোর জেলা প্রশাসকের তদন্তের নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসকের আদেশে তদন্ত করেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তদন্ত প্রতিবেদনে, ৪২ জনকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বলে উল্লেখ করেন তিনি। এরপর একই অভিযোগ, বিভিন্ন দপ্তরে দিয়ে তদন্ত হয়রানি করতে থাকেন বিতর্কিত কমান্ডার মোহাম্মদ আলী।
সাতক্ষীরা সদর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা আমিনুর রহমান বলেন, ২০১৮ সাল থেকে সেদিন খাদ্য বিভাগের দখলকৃতজমি ভূমিদস্যুুর কবল থেকে উদ্ধারের জন্য মামলার বাদী হয়েছি, সেইদিন থেকে এই অভিযোগ শুরু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ৫ আগষ্টের আগে সরকারি বিভিন্ন প্রোগ্রামের সময় পতিত সরকারের অনেক জনপ্রতিনিধি অংশ নেয়। তৎকালীন সময়ে উঠানো সেই সব ছবি ব্যবহার করে আমাকে তাদের সহযোগী প্রচার করে হয়রানি করার অপচেষ্টাও করছে এই কুচক্রি ব্যক্তিরা।