খেলাধূলা ডেস্ক :
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অনড় অবস্থানে শেষ পর্যন্ত বেটউইনার নিউজের সঙ্গে চুক্তি থেকে সরে এসেছেন সাকিব আল হাসান। তবে তার বিতর্কিত কাণ্ডে সমালোচনায় সরব সামাজিক মাধ্যম। টাইগার অলরাউন্ডারের এমন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন জানান, সাকিবের যদি এতই টাকা লাগে তিনি তার সঞ্চয়ের ৩ লাখ টাকা সাকিবকে দিয়ে দিবেন।
গত ২ আগস্ট বেটউইনার নিউজের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন সাকিব। ওই প্রতিষ্ঠানটির শুভেচ্ছাদূত হন তিনি। এ খবর ফেসবুকে নিজেই জানিয়েছিলেন সাকিব। যে বিষয়টি মানতে পারেনি দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা বিসিবি। কারণ বেটউইনার নিউজ হচ্ছে বেটউইনার ডটকমের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান, যা অনলাইনে জুয়া খেলার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে বেটিং নিষিদ্ধ। এখানেই আপত্তি বিসিবির।
সাকিবের চুক্তির ব্যাপারে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল না করলে জাতীয় দলেই জায়গা হবে না তার। বোর্ডের অনড় অবস্থানে শেষ পর্যন্ত নিজের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটেন টাইগার অলরাউন্ডার। বোর্ডকে আনুষ্ঠানিক চিঠিতে জানিয়ে দেন, বেটউইনারের সঙ্গে চুক্তি থেকে সরে আসছেন তিনি।
কিন্তু জেনে শুনে সাকিব কেন জুয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছাদূত হলেন? সমর্থকদের অনেকের প্রশ্ন, অর্থেই কি তাহলে টাইগার অলরাউন্ডারের কাছে সবকিছু? এমন প্রশ্ন ছিল, ব্যারিস্টার সুমনেরও। যুব সমাজকে ধ্বংসের বার্তা দেয় এমন সংস্থার শুভেচ্ছাদূত হয়ে অর্থ আয়ে সাকিবের সমালোচনা করে শুক্রবার (১২ আগস্ট) নিজের ফেসবুকে দেয়া এক ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের কৃতি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে ৩ লাখ টাকা দিতে চাই। আমার কাছে ৩ লাখ টাকা আছে পারিবারিক খরচের জন্য, সেটা দিয়ে দিব। তার তো টাকার অভাব নাই। আল্লাহ তারে অনেক টাকা দিছে। যদি খরচের কারণে তার এত টাকা লাগে, আমি তিন লাখ টাকা জমা রাখছি তার জন্য, তার পরিবারের খরচের জন্য। এই ৩ লাখ টাকা দিলে যদি অন্তত তার টাকা আয়ের তাড়না কমে।’
বর্তমান টাইগার ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিব আল হাসান। দেশকে তিনি প্রতিনিধিত্ব করছেন প্রায় ১৬ বছর। দেশ ও দেশের বাইরে তার লাখ লাখ অনুসারী। তরুণ ক্রিকেটারদের অনেকেই তাকে আইডল হিসেবেই মানেন। এমন একজন তারকা ক্যাসিনো বা জুয়া সাইটের শুভেচ্ছাদূত হয়ে কোন বার্তা দিচ্ছেন প্রশ্ন করে সুমন আরও বলেন, ‘দায়িত্ব সব কি রাজনীতিবিদদেরই? ফেসবুকে সাকিব আল হাসানের দেড় কোটি অনুসারী। সব তরুণ অনুসারী। বাংলাদেশের মানুষদের কী সিগন্যাল দিতে চাচ্ছেন তিনি?’
জবাবটাও অবশ্য সুমন নিজেই দিয়েছেন। ইঙ্গিতটা যে দেশের জন্য অশুভ বয়ে আনবে, সেটা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘সে সিগন্যাল দিচ্ছে, যেভাবে পারো তুমি বাংলাদেশ থেকে টাকা পয়সা আয় করে বিদেশ চলে যাও। যেভাবে পারো বাংলাদেশের মাটি, বাতাস এসব ব্যবহার করে তারকা হও। তারপর বাংলাদেশের চিন্তা বাদ দাও। জুয়া হোক, যেভাবে হোক যদি সুযোগ পাও দেশ বেঁচে দাও। তারপরও তুমি তোমার বউ বাচ্চা নিয়ে সুন্দর আরামে থাকো।’
সাকিবকে নিয়ে বিতর্ক অবশ্য নতুন কিছু নয়। দর্শকদের সঙ্গে বাজে আচরণ, টিভি ক্যামেরায় অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, জাতীয় দল ছেড়ে দেয়ার হুমকিসহ মাঠে আম্পায়ারদের সঙ্গে বাজে আচরণ, বাজিকরদের সঙ্গে যোগাযোগ, কী করেননি সাকিব? এসব কারণে বিসিবি এবং আইসিসি থেকে নিষিদ্ধও হয়েছেন বেশ কয়েক দফায়।
সে সব বাধা পেরিয়ে আসলেও, এবার বিসিবির কঠোরতা থেকে সহজে রেহাই পাচ্ছেন না সাকিব। শুধু চুক্তি থেকে সরে আসাতেই সন্তুষ্ট নয় বোর্ড। টেস্ট অধিনায়কের এমন দায়িত্বহীন আচরণে ক্ষিপ্ত ক্রিকেট বোর্ড। তাই তো, নতুন কোনো দায়িত্ব দেয়ার আগে সাকিবের মনোভাব জানতে চান তারা। এ কারণে সভাপতি পাপনের জরুরি বার্তা পেয়ে নির্ধারিত সময়ের দু’দিন আগেই শুক্রবার (১২ আগস্ট) রাতে দেশে ফিরে আসছেন মিস্টার সেভেন্টি ফাইভ।