হোম এক্সক্লুসিভ সর্বস্ব খুইয়ে প্রবাসে গিয়েও মানবেতর জীবন, দেখার কেউ নেই!

অনলাইন ডেস্ক:

বিদেশ পাঠানোর নামে প্রতারণা যেন থামছেই না। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বাংলাদেশ রিক্রুটিং এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন (বায়রা)। হাত গুটিয়ে বসে আছে সরকারি দফতরগুলোও! ভিটেমাটি বিক্রি ও চড়া সুদে ঋণ নিয়ে প্রবাসে গিয়ে মানবেতন জীবন যাপন করছেন অনেকে।

৫০-এর কোঠায় পা রাখা হতভাগ্য রফিকুল ইসলাম, যাকে মাস সাতেক আগে ইনডোর ক্লিনারের ভিসা দিয়ে সৌদি আরব পাঠায় ফকিরাপুলের মক্কা ওভারসিজ। যদিও ভিসা বিক্রি করে বনানীর এবি ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস। চুক্তিপত্রে মাসে ১৫০০ রিয়াল বেতন-ভাতার পাশাপাশি নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্রি ইকামা, মেডিকেল, বাসস্থান, পরিবহন খরচ ও সরকারি অন্যান্য ফি দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। যদিও তার কাছ থেকে নেয়া হয় চার লাখ টাকা। তবে মরুভূমির দেশটিতে গিয়ে দেখেন সবই ফাঁকি। তপ্ত রোদে দিনভর কাজ করিয়ে বেতন না দেয়াসহ নানা মানসিক নির্যাতনের শিকারের অভিযোগ করেন তিনি।

পরিবারের সুদিনের জন্য সৌদি আরবে গিয়ে পড়া রফিকুলের আর্তনাদভরা কান্নার এক ভিডিও চিত্রে তাকে বলতে শোনা যায়, তার স্বপ্নের সঙ্গে প্রতারণা করেছে দালাল ও রিক্রুটিং এজেন্সি।

এ বিষয়ে সময় সংবাদের প্রতিবেদক কথা বলতে বনানীর এজেন্সিতে গেলে ভুক্তভোগীকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়।

এ সব বিষয়ে ভুক্তোভোগী রফিককে ফোন দেন দালাল শরীফ। ফোনে তিনি বলেন, ‘আমার অফিসে সাংবাদিক কেন পাঠিয়েছেন, এর জবাব আপনাকে দিতে হবে।’

অন্যদিকে অপকর্মের প্রচার বন্ধে প্রতিবেদককে টাকা দেয়ার চেষ্টা করেন বনানীর এজেন্সির কর্মীরা। এ বিষয়ে মক্কা ওভারসিজ জানিয়েছে, দ্রুতই সমস্যার সমাধান করবেন তারা।

মেসার্স মক্কা ওভারসিজের কর্মকর্তা শহিদুল্লাহ স্বপন জানান, ‘ফোনেও যদি সে (রফিক) আমাকে জানাত যে তিনি কষ্টে আছেন, তাহলে আমরা যার মারফতে পাঠিয়েছি তাকেও বলতাম বা আগেই চেষ্টা করতাম সমস্যার সমাধান করতে। আপনাদের (সাংবাদিক) এখানে আসতেই হত না। আমি জানলে আরও আগে সমস্যার সমাধান করতাম।’

এদিকে সৌদি আরবে যাওয়া বেশকিছু যুবকের রাস্তায় থাকা একটি ভিডিও ফুটেজ সময় সংবাদের হাতে আসে। সেখানে দেখা গেছে, বনানীর আয়াত ওভারসিজের মাধ্যমে সৌদি আরবে যাওয়া হত্যভাগ্যদের করুণ চিত্র। বাসস্থানের অভাবে রাস্তায় শুয়ে থাকা, ক্ষুধার তাড়নায় রাত ৩টায় চালভাজা খাওয়াসহ পচে যাওয়া খাবার উপকরণ এনে খাওয়ানোর অভিযোগও করেন তারা। এমনকি পরিত্রাণের জন্য এজেন্সি মালিককে ফোন দিলে হুমকি পাওয়াসহ নানা অভিযোগ এজেন্সিটির বিরুদ্ধে রয়েছে। যাদের নিয়ে এর আগেও প্রতিবেদন প্রচার করেছিল সময় সংবাদ।

ভুক্তভোগীরা জানান, ‘আয়াত ওভারসিজের মাধ্যমে চার লাখ টাকা দিয়ে সৌদি আরবে আমরা বিভিন্ন জন বিভিন্ন কাজে এসেছি। আমাদের নির্দিষ্ট কোনো কাজ দেয়া হয়নি। এমনকি যে খাবার খাব, জীবন চলাবো, আমাদের সেই ব্যবস্থাও নেই।’

আরেকজন জানান, ‘দালালরা বলে যখন মক্কায় ছিলে তখন দোজখে ছিলে, এখন বেহেস্তে আনা হয়েছে। একটা ঘরে ৫০ জনের বেশি মানুষকে থাকতে হয়। ৩ মাস কাজ করেছি, কোনো টাকা-পয়সা দেয়া হয়নি। আবার হুমকি দেয়, যদি বাংলাদেশে খবর দিস, তাহলে অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।’

অভিযোগের বিষয়ে আয়াত ওভারসিজে গেলে বরাবরের মতো এবারও সামনে আসেননি স্বত্বাধিকারী আহাসান হাবীব। ফোন করে অন্য দুই ব্যক্তিকে কথা বলতে পাঠিয়ে দেন, ক্যামেরা বন্ধ করতে জোর করেন তারা।

ওই ব্যক্তিরা বলেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রচারে আদতে লাভবান হবেন তারা। আয়াতের মার্কেটিং হবে।

এ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ এলেও ব্যবস্থা নেয়ার যেন কেউ নেই! এ কারণেই তারা বেপরোয়া বলে মনে করছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মনীর।

তিনি বলেন, ‘আইনের ঊর্ধ্বে কেউ না, যদি আমরা আস্তে আস্তে এটি বাস্তবায়ন করতে পারি এবং সেটা যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মধ্যদিয়ে হয়, তাহলে এ ধরনের কাজ কেউ করতে সাহস পাবে না। বাংলাদেশে প্র্রবাসীদের ক্ষেত্রেও আইন আছে; কিন্তু তার সুষ্ঠু প্রয়োগ আমরা এখনও দেখেতে পাইনি। এটা হচ্ছে একটি বড় দুর্বলতার জায়গা।’

নিজ ও দেশের ভাগ্য বদলাতে বিদেশে যাওয়া রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সঙ্গে প্রতারণা বন্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ চান ভুক্তভোগীরা।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন