বাণিজ্য ডেস্ক :
চলতি অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে ১৪টি এসএমইবান্ধব প্রস্তাবনা গ্রহণ করায় সরকারের প্রতি এসএমই ফাউন্ডেশন কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে।
আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরে করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ জাতীয় বাজেট প্রস্তাবনার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বিশাল অঙ্কের বাজেটে এসএমই খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বাজেটে এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে দেয়া ১৪টি প্রস্তাবনা গৃহীত হওয়ায় ফাউন্ডেশন মনে করছে, এসব প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে দেশের এসএমই উদ্যোক্তারা তথা এসএমই খাত নানাভাবে উপকৃত হবে।
তবে এসএমই উদ্যোক্তাদের, বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে অর্থায়নের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জও থাকবে বলে মনে করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। প্রতিবছর প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসএমই ফাউন্ডেশন কর্তৃক এসএমই খাতের উন্নয়নে জাতীয় বাজেটে বিবেচনার জন্য আয়কর, ভ্যাট, শুল্ক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং অন্যান্য সংস্থার কাছে উপস্থাপন করে থাকে।
এরই সূত্র ধরে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এসএমইবান্ধব প্রস্তাবনা অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে প্রস্তাবনা পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এসএমই অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড বডির কাছে প্রস্তাব চাওয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ১৮টি অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেডবডি থেকে এসএমই খাত সংশ্লিষ্ট ১২০টির বেশি প্রস্তাবনা পাওয়া যায়।
পরবর্তী সময়ে এসএমই অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেডবডির প্রতিনিধিদের সঙ্গে যৌক্তিকীকরণ সভার মাধ্যমে ৫০টি প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে প্রাক-বাজেট আলোচনায় উপস্থাপন করা হয়।
যেসব প্রস্তাব আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ গৃহীত হয়েছে:
১. ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রতিরক্ষণে উক্ত শিল্প কর্তৃক তৈরিকৃত কয়েকটি পণ্য আমদানিতে প্রযোজ্য শুল্ক কর বৃদ্ধি করা।
২. অ্যাগ্রোপ্রসেসিং ও কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনকারী উদ্যোক্তাকে ১০ বছর মেয়াদে কর অব্যাহতি প্রদান করা।
৩. হালকা প্রকৌশল শিল্পের সকল প্রকার পণ্য, যা কেবল শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত হবে এমন উদ্যোক্তাদের ১০ বছর মেয়াদে কর অব্যাহতি প্রদান।
৪. এসএমই খাতের ইনফরমাল উদ্যোক্তাদের ফরমাল হওয়ার উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে এক ব্যক্তি কোম্পানির (ওপিসি) করহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ করা।
৫. ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রতিরক্ষণে শিল্পের পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত কতিপয় উপকরণ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রদান করা।
৬. পেপারকাপ প্রস্তুতকারী শিল্পের সুরক্ষায় উক্ত শিল্প কর্তৃক তৈরিকৃত কয়েকটি পণ্য আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করা।
৭. পাওয়ার টিলারের উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি প্রদান করা ও ফাউন্ড্রি শিল্পে স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত স্ক্র্যাপ সরবরাহের ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতি প্রদান করা।
৮. নারী উদ্যোক্তাদের মালিকানাধীন এসএমই খাতের কোনো প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক টার্নওভারের পরিমাণ ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত হলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের আয়কে করমুক্ত রাখা।
৯. স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের জন্য শুধু আয়কর রিটার্ন দাখিল ব্যতীত অন্য সকল প্রকার রিপোর্টিয়ের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি প্রদান ও স্টার্টআপ কোম্পানির লোকসান ৯ বছর পর্যন্ত সমন্বয়ের বিধান রাখা।
১০. আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ব্যবসার প্রসারের জন্য স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে ব্যয়সংক্রান্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার ও টার্নওভার করহার শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশের পরিবর্তে শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
১১. মুড়ি ও চিনির ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা।
১২. শিল্পোন্নয়ন উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে বিভিন্ন কারিগরি বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদানে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানকে ১০ বছর মেয়াদে কর অব্যাহতি প্রদান করা।
১৩. সিএমএসএমই খাতের ঋণ ও অগ্রিমের নিট স্থিতির পরিমাণ প্রতিবছর কমপক্ষে ১ শতাংশ বৃদ্ধিসহ আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে ন্যূনতম ২৫ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
১৪. নতুন এসএমই উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জামানতবিহীন ও সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতসহ পুনঃ অর্থায়ন করার নির্দেশনা দেয়া।
উল্লেখ্য, ২০১১-১২ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে দেশের এসএমই খাতের উন্নয়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে উত্থাপিত ৪৬৭টি প্রস্তাবনার মধ্যে ৮৫টি পূর্ণাঙ্গ ও আংশিক গৃহীত হয়েছে।