হোম অন্যান্যশিক্ষা সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে বাঘারপাড়ায় চলছে কিন্ডার গার্ডেন স্কুল, হচ্ছে পরীক্ষা

সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে বাঘারপাড়ায় চলছে কিন্ডার গার্ডেন স্কুল, হচ্ছে পরীক্ষা

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 697 ভিউজ

যশোর অফিস :

সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে যশোরের বাঘারপাড়ায় অন্তত: ৩০টি বেসরকারি কিন্ডার গার্ডেন স্কুল চলছে। হচ্ছে পরীক্ষা। টাকা আদায়ের জন্য নানা রকম টালবাহানা চালাচ্ছে স্কুলগুলো। অভিভাবকদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। সব কিছু প্রশাসনের নাকের ডগায় হলে নিবর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যশোরের বাঘারপাড়ায় অন্তত: ৩০টি বেসরকারি কিন্ডার গার্ডেন স্কুল রয়েছে।

এসব স্কুলে বছর শেষে মান উন্নায়নের নামে ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। করোনার কারণে সরকার যখন সারা দেশে একর পর এক স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে চলেছে, ঠিক তখনি টাকা আদায়ের জন্য বাঘারপাড়ায় স্কুল খুলে ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। অভিভাবকদের সাথে করা হচ্ছে প্রতারণা। সরেজমিনে এসব চিত্র দেখা গেছে। উপজেলার চড়াভিটা বাজারে তকোব্বার আলী স্মৃতি একাডেমি (তাসা) নামে একটি কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে ক্লাস ও পরীক্ষার নেওয়ার চিত্র দেখা যায়।

করোনার মধ্যে কিভাবে শিশু শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে স্কুল চলছে জানতে চাইলে ওই স্কুলের একজন সহকারী শিক্ষক জানান, উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে তারা স্কুল পরিচালনা করছেন। এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক চৌগাছা তরিকুল ইসলাম পৌর কলেজের আইসিটি ডিপার্টমেন্টের প্রধান। একজন শিক্ষক হয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা করায় স্থানীয় অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, কলেজ শিক্ষক টিটো ২০১৭ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে একটি রুটির বেকারিতে স্কুল শুরু করেন। দীর্ঘ ৩ বছরেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রূপ পায়নি বিদ্যালয়টি। এখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পাঠদান করানো হয় কোমলমতি শিশুদের। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নাই এটা কোন স্কুল। না আছে কোনও সাইনবোর্ড। আছে শুধু ভর্তি বিজ্ঞপ্তি সংশ্লিষ্ট একটি পুরাতন পোষ্টার। ক্লাস ও পরীক্ষা চলাকালে অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের মত স্কুলের বাইরে ছিল অভিভাবকদের অপেক্ষা।

কথা হয় কয়েকজন অভিভাকের সাথে। তারা জানান, ভেতরে বাচ্চাদের পরীক্ষা চলছে। বাচ্চাদের পরীক্ষা সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বেলা ১২ টায় শেষ হয়। বাচ্চাদের পরীক্ষা শেষ হলে তাঁদের নিয়ে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় বসে আছেন। করোনার জন্য স্কুল কলেজসব বন্ধ এখানে কিভাবে পরীক্ষা হচ্ছে জানতে চাইলে তারা জানান, স্কুলের স্যাররা তাদেরকে ফোন করে ক্লাস ও পরীক্ষায় হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন। সন্তানের ভালো হবে এজন্য তারা এসেছেন। এছাড়া সারা বছরের টাকা ও পরীক্ষার ফি’র জন্য স্যাররা বেশি তাগাদা দিচ্ছে। যখন টাকা দিতে হবে তখন ক্লাস ও পরীক্ষায় বসানোই ভালো হবে। ে
অভিভাবকদের সাথে কথা শেষ করেই স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করে চোখ চড়কগাছ হওয়ার উপক্রম।

সত্যিই রীতিমত প্রশ্ন-খাতা দিয়ে পরীক্ষা চলছে। সামাজিক দূরত্ব তো দূরের কথা একটি শ্রেণীকক্ষেই ঠাসাঠাসি করে চলছে কোমলপ্রাণ শিশুদের ইংরেজি পরীক্ষা। করোনা পরিস্থিতিতে দেশের সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার নির্দেশনা থাকার পরও কার নির্দেশে পরীক্ষা নিচ্ছেন প্রশ্নের জবাবে সহকারী শিক্ষক বলেন বাঘারপাড়া উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আলী আকবরের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এসেছেন। সরকারিভাবে ঘোষিত ছুটি একজন উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার কিভাবে স্থগিত করতে পারেন ? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে সহকারী শিক্ষা অফিসার আলী আকবরের দপ্তরে গেলে তিনি বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। বলেন, এসকল প্রতিষ্ঠান আমাদের আওতাভুক্ত নয়।

আমরা প্রাথমিক দেখভাল করে থাকি। তাসা স্কুল পরীক্ষা নিবে এ ব্যাপারে আমার সাথে কোন কথা হয়নি। তারা আমাকে জানিয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের মূল্যনের জন্য বাড়িতে মূল্যয়ন শীট পাঠানো হবে। অভিভাবকরা স্কুলে এসে মূল্যয়নশীট ও বেতন জমা দিবে। কোন শিক্ষার্থী স্কুলে আসবেনা। এরপর তার অনুমতির ব্যাপারে সহকারী শিক্ষকের ভিডিও ফুটেজ দেখালে নড়েচড়ে বসেন তিনি। তড়িঘড়ি করে আমাদের সাম্মুখেই তকোব্বার আলী স্মৃতি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক মি. টিটোকে ফোন করে বকাঝকা শুরু করেন। তবে এ ব্যপারে মি. টিটোর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শুধু আমার স্কুল নয়, আমাদের অ্যাসোসিয়েশন আছে। সমিতির ২৭টি স্কুল রয়েছে। সব স্কুলে পরীক্ষা হচ্ছে, ক্লাস হচ্ছে। সমিতির সিদ্ধান্তে আমরা পরীক্ষা ও ক্লাস নিচ্ছি।

অভিযোগের বিষয়ে বাঘারপাড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাহবুবুর রহমান বলেন, তারা আমাদের জরিপে নাই। জরিপে থাকলে সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা লাগবে। কিন্তু ২০১৯ সাল পর্যন্ত তারা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেনি। তারা আমাদের কাছ থেকে বই নেন। সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন অথচ সরকারি আইন মানবেন না তা হতে পারেনা। তারা যে কাজটি করেছে তা স্পষ্ট বেআইনি। ২০২১ সালে তাঁদেরকে আর একটি বইও দেয়া হবেনা। এ সমস্ত প্রতিষ্ঠান শিক্ষাসেবা নয় ,ব্যবসার জন্য আসে। তিনি আরও বলেন, এই উপজেলায় কিন্ডারগার্ডেন নামক এসব প্রতিষ্ঠানের কোনও প্রয়োজন নেই। এব্যাপারে তিনি সকল অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার আহŸান জানান।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন