অনলাইন ডেস্ক:
সংস্কারের কারণে নির্বাচন পেছানোর যৌক্তিক হবে না বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘সংস্কার সংস্কারের মতো চলবে, নির্বাচন নির্বাচনের মতো। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করলে রাজনৈতিক সংকট অনেকটাই কেটে যাবে। অথচ একটি মহলের মধ্যে নির্বাচন পেছানোর প্রবণতা কাজ করছে।’
রবিবার (৩০ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সমসাময়িক ইস্যুতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না দেওয়া অন্তর্বতী সরকারের রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতা। কারণ সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ পেলে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের দিকে ঝুঁকে যাবে।’
রাজনীতি কোন দিকে যাচ্ছে? নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে কিনরা প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ কথা আমি গতকালও বলেছি, ড. ইউনূস যখন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন, তখন আমরা আশাবাদী হয়েছিলাম। সম্প্রতি আবার তিনি বললেন, নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে হবে। এটা আমাদের হতাশ করেছে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক সংকট রয়েছে, ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থান এবং এখনও ভারতের প্রভাব– এগুলো আমাদের জন্য ভালো একটি ভবিষ্যৎ তৈরি করছে না। আমাদের গণতন্ত্রের শত্রুকে ভারতে রেখে নির্বাচন পেছালে তা দেশের জন্য আরও সংকট তৈরি করবে। জনগণের রায়ে নির্বাচিত সরকার আর অনির্বাচিত সরকারের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। তাই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে আমরা ৪২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পরামর্শ করে কাঠামোগত সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি, যা ৩১ দফা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। যদিও এর জন্য আমাদের অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। সর্বশেষ গোলাপবাগের সমাবেশ থেকে ১০ দফা চূড়ান্ত সংস্কারের কথা বলেছি। অথচ এ বিষয়ে বিএনপির অবস্থানের বিষয়ে ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। এর একটাই কারণ বিএনপি সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল। দেশ ও গণতন্ত্রবিরোধী একটি পক্ষ এ বিষয়ে বলে ফায়দা লুটতে চায়।’
ভবিষ্যতে আবারও রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে প্রত্যাশা করে ফখরুল বলেন, ‘এ জন্য আমাদের অনেক কিছু চিন্তা করে চলতে হয়। আমাদের একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে হয়, অন্যদিকে চীনের সঙ্গেও আমরা সুসম্পর্ক রাখতে চাই। একইসঙ্গে অন্যান্য ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর সাথে আমাদের ভালো সম্পর্ক রাখতে হবে।’
গত ৫ আগস্টের আগে ও পরে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেমন দেখছেন প্রশ্নে ফখরুল বলেন, ‘৫ আগস্টের পর একটা মৌলিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। কারণ এর আগে ছিল একটা প্রেক্ষাপট। সে সময় ছিল একটি স্বৈরতান্ত্রিক সরকার। তখন চীনের বিনিয়োগসহ সবকিছু আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গেই করতে হতো। এর বাইরে কিছু করার সুযোগ তাদের ছিল না। তখন চীনও অন্য দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রাখেনি। বিএনপির সঙ্গে দেশটির বন্ধুত্ব ছিল পুরনো, অথচ আমাদের সাথেও দূরত্ব ছিল। গণঅভ্যুত্থানের পর তা সম্পূর্ণ বদলে গেছে এবং প্রথম বৈঠক আমাদের সঙ্গে হয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের একাধিক আলোচনা হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধি দল আমন্ত্রিত হয়ে চীনে গেছে। আগামীতে আরও যাবে।’ এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপি।
এক চীন নীতির বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে বাংলাদেশ বরাবরই সমর্থন দিয়েছে। শুধু এ সরকারই নয়, আগের সরকারও দিয়েছে। বিএনপিও দিয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক হওয়ার পর থেকেই এ নীতিকে নীতিগতভাবেই সমর্থন দেওয়া হয়েছে।’
রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোতে বংশানুক্রমিক রাজনীতি করলে দোষ হয় না। অথচ বাংলাদেশে করলে দোষ হয়ে যায়। বাস্তবতা হলো, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। এটা অস্বীকার করার কোনও সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘একদিকে তারেক রহমান অন্যদিকে অন্য কোনও নেতাকে দাঁড় করিয়ে দিলে বোঝা যাবে কার জনপ্রিয়তা কত? শুধু পারিবারিক কারণেই নয়, নিজের নেতৃত্ব গুণ প্রতিষ্ঠার কারণেই তারেক রহমান জনপ্রিয়। গত কয়েক বছরে তিনি দেশকে একটি পথ দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। এতে তিনি তার অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন।’
ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ। কীভাবে রাজনীতি করবে বা করবে না সে সিদ্ধান্ত পরের। তবে এতে কোনও সন্দেহ নেই, গণহত্যায় জড়িতদের দ্রুত বিচার সবাই দেখতে চায়।’ জনগণ কীভাবে সিদ্ধান্ত নেবে সে প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তা এখনই চূড়ান্ত বলা যাবে না।’
তারেক রহমান কবে দেশে আসবেন এ বিষয়ে বিএনপির সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনও বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। আমাদের নির্বাচনি কৌশল নির্ধারণের পরই তারেক রহমানের দেশে আসার বিষয়টি সুস্পষ্ট করতে পারবো।’
সামাজিক মাধ্যমে নৈরাজ্য তৈরি করে মব জাস্টিসকে উসকে দেওয়া হচ্ছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘আমরা যারা গঠনমূলক ও ইতিবাচক রাজনীতি করি, আমরা ভাঙতে চাই না, গড়তে চাই।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে আদালতের রায়কে ন্যায়ের বিজয় বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘এতে প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগের সময়ে নির্বাচন সঠিক হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘বড় দল হিসেবে বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চলছে। তারপরও বিএনপি একটি বৃহৎ জনপ্রিয় দল। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। ৫৪ বছরে এখানে কোনও ধর্মীয় উন্মাদনা হয়নি। আওয়ামী লীগ নিজেদের স্বার্থে জঙ্গিবাদকে ব্যবহার করেছে। তবে এখনও ভয় আছে। লিবারেল দলগুলোর কাজ সংকুচিত করলে জঙ্গিবাদের উত্থানের যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে।’