হোম অন্যান্যসারাদেশ শ্রুতিলেখকের সহায়তায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেন আদনান

শ্রুতিলেখকের সহায়তায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেন আদনান

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 19 ভিউজ
ইবি সংবাদদাতা:
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তার স্বপ্নকে থামিয়ে রাখতে পারেনি। অসীম মনোবল, প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর পরিবারের সাহচর্যে নিজেকে প্রমাণের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে আদনান-উজ্জামান। শুক্রবার (০৯ মে) সমন্বিত গুচ্ছভুক্ত ১৯টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের বিজ্ঞান অনুষদ ভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) কেন্দ্রে শ্রুতিলেখকের সহায়তায় অংশ নিয়েছে এই অদম্য তরুণ।
আদনানের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার দক্ষিণ ভবানিপুর গ্রামে। বাবা মোহাম্মদ আজগর আলী ও মা সাবিনা সুলতানা লিলি দুজনেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। দুই ভাই-বোনের মধ্যে আদনান বড়। ছোট বেলায় অন্য দশজন ছেলের মতো স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে উঠছিল আদনান। তবে দেড় বছর বয়স পার হলেও সে বসতে পারেনি। পরে চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। ধীরে ধীরে তার চলাফেরা, কথা বলা ও হাতের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতায় প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়।
তবে এসব বাধা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। নিজের সীমাবদ্ধতাকে পাশ কাটিয়ে আজ সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার একজন যোদ্ধা। নানা প্রতিবন্ধকতা নিয়েও ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয় সে। কথা বলতে কষ্ট হয়, হাত কাঁপে, তবুও লেখার বিকল্প খুঁজে পেয়েছে সে। তার স্বপ্নযাত্রার সঙ্গী হয়েছে ছোটবোন আতিকা জিনাত প্রাপ্তি, যিনি এবার শ্রুতিলেখকের ভূমিকা পালন করেছে। ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রাপ্তি ভাইয়ের জন্য লিখে দিয়েছে ভর্তি পরীক্ষার উত্তর।
জানা যায়, আদনান তার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন কুষ্টিয়ার সবুজ কানন প্রিপারেটরি স্কুল থেকে। ২০২১ সালে কুষ্টিয়ার আড়ুয়াপাড়া দিনমনি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ৪ দশমিক ৫৬ জিপিএ নিয়ে মাধ্যমিক এবং ২০২৩ সালে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ৪ দশমিক ০৮ জিপিএ নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। তিনি গত বছরও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। সেবার আশানুরূপ ফল না হওয়ায় এবার দ্বিতীয়বারের মতো ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছেন আদনান।
আদনানের বাবা আজগর আলী বলেন, ‘আদনান ছোট থেকেই পড়াশোনায় অত্যন্ত মনোযোগী । তাকে কখনো পড়ার জন্য বলতে হয়নি। আজ পরীক্ষার দিনেও সকালে তাকে পড়ার টেবিল থেকে ডেকে আনতে হয়েছে। আদনানের শিক্ষকরা তাকে অনেক সহযোগিতা করেছে। এছাড়া তার আম্মু তার জন্য অনেক কষ্ট করেছে। আমাদের প্রত্যাশা সে একটা ভালো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাক।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের যদি একটু সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা দেওয়া যায়, তাহলে তারা সমাজের বোঝা নয়, বরং গর্ব হয়ে উঠতে পারে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিক সহায়তা প্রত্যাশা করছি।’
আদনান বলেন, ‘পরীক্ষা আলহামদুলিল্লাহ ভালো হয়েছে। আশাকরি ভালো কিছু হবে। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম, কিন্তু সেখানে শ্রুতিলেখকের অনুমতি না থাকায় পরীক্ষা ভালো দিতে পারিনি। বাবা-মা সবসময় আমার পাশে ছিলেন। তাদের সাহস ও ভালোবাসা আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।’
ভবিষ্যতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করার স্বপ্ন দেখে আদনান। তার পথচলায় শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নেই কোনো বাধা, বরং প্রতিটি চ্যালেঞ্জ তাকে আরও দৃঢ় করে তুলেছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন