হোম জাতীয় শেখ হাসিনা সরকার থেকে যা যা পেয়েছিলেন ড. ইউনূস

শেখ হাসিনা সরকার থেকে যা যা পেয়েছিলেন ড. ইউনূস

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 114 ভিউজ

জাতীয় ডেস্ক:

বেশ কিছুদিন ধরে শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্নভাবে নিজেকে আলোচনায় নিয়ে আসছেন। কথাবার্তায় তিনি যেনো বুঝাতে চান, দেশের জন্য অনেক কিছু করেও তিনি অযথাই সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নিজেকে ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা দাবিসহ পদে পদে তার নানা কারসাজি রয়েছে। ক্ষুদ্রঋণের ধারণা কি তার? গ্রামীণ ব্যাংক থেকে শুরু করে অন্যান্য গ্রামীণ প্রতিষ্ঠানগুলো কি তিনি নিজেই করেছেন, নাকি সরকারি সহযোগিতা নিয়েছেন; বিতর্ক শুরু হয় এই মৌলিক প্রশ্নগুলো থেকেই। যদিও ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন এই ক্ষুদ্রঋণের জন্যই।

আওয়ামী লীগ সরকার থেকে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গ্রামীণ টেলিকম থেকে শুরু করে গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের বিকাশ হয় আওয়ামী লীগের আমলেই। কিন্তু তিনি তার প্রতিফল দিয়েছেন বিশ্বাসঘাতকতা দিয়ে। তদবির করেও গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদ টেকাতে না পেরে পদ্মাসেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকে সরাতে ষড়যন্ত্র করেন ড. ইউনূস। বিশ্লেষকরা বলছেন, একটা মানুষ কতটা দুর্বৃত্ত ও প্রতারক হলে এমন বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারেন, তার উদাহরণ শুধুই ড. ইউনূস।

১৯৮৪ সালে র‌্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারের মাধ্যমে লাইমলাইটে আসেন ইউনূস। বাড়তে থাকে সমাজের নানা স্তরের সঙ্গে তার সম্পর্ক। এর সুবাদে দেশে মোবাইল ফোন কোম্পানি প্রতিষ্ঠার ধারণার জনক ইকবাল জেড কাদিরের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। ইকবাল কাদিরের আইডিয়া নিজের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্প্রসারণের জন্য ড. ইউনূস সহায়তা নেন ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের।

ইকবাল কাদিরের মস্তিস্কপ্রসূত ধারণা গ্রামীণ টেলিকমকে তৃণমূলে ছড়িয়ে দিতে নরওয়ের টেলিনরের বিনিয়োগ আনেন তিনি। এরপর দেশটির সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে ইউনূসের। নোবেল পাওয়ার দুই বছরের মাথায় প্রতারণার অভিযোগে সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিক্ততা বাড়ে তার, যা প্রচারিত হয় বিদেশি গণমাধ্যমে।

কিন্তু সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় থাকায় ইউনূসের সেই খবর গুরুত্ব পায়নি দেশীয় কোনো গণমাধ্যমে। কেননা, দেশি কিছু গণমাধ্যম তখন ব্যস্ত ছিল বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ায়।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর সমর্থনে এবং ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। এরপরই রাজনৈতিক দল গঠনে তৎপর হয়ে ওঠেন ইউনূস। একই বছরের জানুয়ারির শেষের দিকে ভারত সফরে যান তিনি। সে সফরে তিনি রাজনীতিতে যোগ দেবার জোরালো সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।

১১ ফেব্রুয়ারি দেশের মানুষের উদ্দেশে খোলা চিঠি দেন ইউনূস। সে চিঠিতে তিনি নিজের রাজনীতি সম্পর্কে পরামর্শ ও সহযোগিতা কামনা করেন। রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের পদ ছেড়ে দেয়ার কথাও বলেছিলেন তিনি।

উইকিলিকসের ফাঁস হওয়া একটি তারবার্তা বলছে, রাজনৈতিক দল গঠনের অভিলাষে সে সময় কলকাতায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপরাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও কথা বলেন ড. ইউনূস।

গ্রামীণ ব্যাংকের ৫৪ প্রতিষ্ঠানের বিকাশ যেভাবে

এম মোরশেদ খানকে একচেটিয়া মোবাইল ফোন ব্যবসার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল বিএনপি সরকার। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে টেলিকম ব্যবসাকে উন্মুক্ত করে দেয়। তখন গ্রামীণফোনকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল। গ্রামীণফোন ১৯৯৬ সালের ২৮ নভেম্বর বাংলাদেশ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে মোবাইল ফোন অপারেটর হিসেবে অনুমতিপত্র পায়।

অনুমতিপত্র পাওয়ার পর গ্রামীণফোন ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে তার কার্যক্রম শুরু করে। লাইসেন্স প্রদান অনুষ্ঠান হয় জাঁকজমকপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে লাইসেন্স দেয়া হয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূস অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘কোথাও আমাকে এক কাপ চা পর্যন্ত খাওয়াতে হয়নি এই লাইসেন্স পাওয়ার জন্য।’ ওই অর্থবছরের বাজেটে গ্রামীণ দারিদ্র্য মোচনের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকে ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।

১৯৮৩ সালে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। শুরুতে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ছিল ৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের ছিল ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ঋণ গ্রহীতাদের ১ কোটি ২০ লাখ টাকা।

বিধি অনুযায়ী, ৬০ বছর বয়সে তার অবসরে যাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি তা করেননি। ২০১১ সালে তার অবসরের বয়সসীমা ১১ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর তার এমডি পদে থাকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ওই বছরেরই মার্চে বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে এই পদ থেকে অব্যাহতি দেয়।

কিন্তু এটিকে একটি ইস্যুতে পরিণত করে দেশে-বিদেশে নিজের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে চেষ্টা করেন ইউনূস। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যান। উচ্চ আদালতও তার পক্ষে রায় দেননি। অথচ এ নিয়ে তিনি প্রচার অব্যাহত রাখেন।

আরও পড়ুন: ড. ইউনূসের মামলার বিষয়ে সরকারের কোনো হাত নেই: আইনমন্ত্রী

যুগ্ম সচিবের পদমর্যাদায় এমডি পদে চাকরি করে তিনি কত সম্পদের মালিক হয়েছেন, তার ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে কত টাকা আছে, এই টাকা তিনি কীভাবে আয় করেছেন, এর জন্য আয়কর দিয়েছেন কি না সে সব জানার অধিকার যেমন এই ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের আছে, তেমনি আছে সরকারেরও।

সব পেয়েও ইউনূসের বিশ্বাসঘাতকতা

আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে সবকিছু পেয়েও বিশ্বাসঘাতকতায় মেতে ওঠেন নোবেলজয়ী ইউনূস। সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ বোরহান কবীর বলেন, এরশাদের আমলে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। কিন্তু আধুনিক গ্রামীণ ব্যাংক পূর্ণতা পেয়েছে আওয়ামী লীগের আমলে।

‘২১ বছর পর প্রথম আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে গ্রামীণ ব্যাংককে ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেয়। আওয়ামী লীগ সরকারই গ্রামীণ ব্যাংককের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান গ্রামীণ কল্যাণ, এরপর গ্রামীণ টেলিকমের অনুমোদন দিয়েছে। গ্রামীণ টেলিকমের মাধ্যমেই গ্রামীণ ফোন আসে। যেখানে ৩৪ শতাংশ শেয়ারহোল্ডার হল গ্রামীণ টেলিকম। আওয়ামী লীগই এসব অনুমোদন দিয়েছে।’

পরিপ্রেক্ষিতের এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, আওয়ামী লীগ যখন এই অনুমোদন দেয়, তখন ড. ইউনূস বলেছিলেন, এই অনুমোদন নিতে কাউকে এক কাপ চা-ও খাওয়াতে হয়নি। একটা মানুষ কতটা দুর্বৃত্ত, কতটা প্রতারক হলে, আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে যে প্রধানমন্ত্রী তাকে এত কিছু দিলেন, তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন।

তিনি বলেন, ২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন ড. ইউনূস। যেটার সদস্য সচিব ছিলেন ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম।

‘রাজনৈতিক দল গঠন করে প্রথমেই বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ‘অতি আশ্রয়ী’ বলে মন্তব্য করেন ইউনূস। তারা বলেছিলেন, অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে লাভ নেই। আমাদের সামনের দিকে তাকাতে হবে। তার মনে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অস্বীকার করেছিলেন তারা,’ যোগ করেন তিনি।

গড়ে তোলেন সুশীল নেটওয়ার্ক

বাংলাদেশে অনির্বাচিত সরকার গঠনে কথিত সুশীল সমাজের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন ইউনূস। বোরহান কবীর বলেন, ২০০৭ সালে এক-এগারো আসার ক্ষেত্রে যারা কুশীলবের ভূমিকা রেখেছিলেন, তাদের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বলা যায়। এ ঘটনার একাধিক প্রমাণ আছে। জেনারেল মইন ইউ আহমেদের ‘শান্তির স্বপ্নে’ নামের বইয়ে এই বিষয়ে বলা আছে। মইন ইউ আহমেদ তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।

‘তখনকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পেট্রিসিয়া বিউটিনেসের তারবার্তাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা একটি তৃতীয় শক্তিকে ক্ষমতায় বসাতে চেয়েছিলেন।’

‘প্রতিটি ক্ষেত্রে বিরাজনীতিকরণের পরিস্থিতি তৈরি করতে চেয়েছিলেন তারা। ইউনূস বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণ চেয়েছিলেন। একটি অনির্বাচিত সরকারকে চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় বসাতে চান তিনি। যাতে পশ্চিমাদের স্বার্থগুলোকে সহজে রক্ষা করতে পারে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা যা যা চায়, তা দিয়ে দেবে। যে কারণে একটা দীর্ঘমেয়াদি অরাজনৈতিক সরকার চেয়েছিল ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সুশীল সমাজ,’ যোগ করেন এই সাংবাদিক।

তিনি বলেন, হোসেন জিল্লুর রহমান থেকে শুরু করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সবাই কোনো না কোনোভাবে ইউনূসের মাধ্যমে উপকৃত। এটা স্বার্থের লেনদেনের বিষয়। অনির্বাচিত সরকার গঠনের মাস্টার প্ল্যানের অংশ হিসেবেই তারা কাজ করেন।

ড. ইউনূসের রাজনীতিতে আসার ঘোষণা নিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, হঠাৎ করে একজন ব্যক্তির রাজনীতিতে আসা ভয়ংকর হতে পারে এবং তার উদ্দেশ্য যথেষ্ট সন্দেহজনক।

যদিও বিএনপি ড. ইউনূসের রাজনীতিতে আসাকে স্বাগত জানায়। সে সময় দলটির আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ বলেছিলেন, ‘ড. ইউনূসকে রাজনীতিতে স্বাগত জানাই, আমি তার সাফল্য কামনা করি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি রাজনীতিতে না আসাই তার জন্য ভালো হবে।’

পদ্মাসেতুতে বিশ্বের তহবিল বন্ধে ইউনূসের ভূমিকা

২০২২ সালের ১৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মাসেতুতে বিশ্বব্যাংকের তহবিল যে ব্যক্তির কারণে বন্ধ হয়েছিল, আওয়ামী লীগ সরকার তাকে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিল। কিন্তু দেশের মানুষের সঙ্গে তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।

মার্কিন বার্তা সংস্থা এপির তথ্য বলছে, হিলারি ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে ড. ইউনূস তার সঙ্গে তিনবার দেখা করেছেন এবং কয়েকবার টেলিফোনে কথা বলেছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের দায়িত্বে থাকতে হিলারির সাহায্য চেয়েছিলেন ইউনূস। হিলারি তাকে সাহায্য করার পন্থা খুঁজে বের করতে সহকারীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। হিলারিকে খুশি করতে তার ফাউন্ডেশনে ২০ কোটি টাকা অনুদানও দেন ইউনূস।

ড. ইউনূসকাণ্ডের দুই মাস আগে পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণচুক্তি করে বিশ্বব্যাংক। পদ হারানো ইউনূস ঋণচুক্তি বাতিলে শুরু করেন তদবির। মার্কিন দফতর থেকে আসতে থাকে চাপ। আমেরিকা চায় ড. ইউনূসকে যেন নিজ গতিতে মর্যাদার সঙ্গে তার উত্তরাধিকারীর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করার সুযোগ দেয়া হয়।

এক পর্যায়ে দুর্নীতির কল্পিত অভিযোগ করতে থাকে বিশ্বব্যাংক। যদিও কোনো অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ দিতে পারেনি তারা। ২০১২ সালের জুনে এসে ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংকসহ দাতা সংস্থাগুলো।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের পদ হারানোর পর পদ্মাসেতু বিরোধী ষড়যন্ত্রে নামেন ইউনূস। সফলও হন তিনি। তার কারণে ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। ৭ বছর পিছিয়ে যায় পদ্মা সেতুর কাজ। অথচ বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল না করলে ২০১৫ সালে উদ্বোধন হতো স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

দখলমুক্ত হলো গ্রামীণ ব্যাংকের ৮ প্রতিষ্ঠান

গ্রামীণ টেলিকম ভবনে ৮টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদে কিছু পরিবর্তন এনেছে গ্রামীণ ব্যাংক, গ্রামীণ কল্যাণ ও গ্রামীণ ফান্ড। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ শক্তি, গ্রামীণ সামগ্রী, গ্রামীণ ফান্ড, গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশন, গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশন এবং গ্রামীণ উদ্যোগ।

প্রতিষ্ঠানগুলো এতোদিন গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমেই পরিচালিত হচ্ছিল। প্রতিষ্ঠিতও হয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থায়নে। এছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালকরাই প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালক পদে ছিলেন।

সম্প্রতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) না থাকায় এবং ব্যাংকে ইউনূসপন্থী পরিচালকদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় নতুন ম্যানেজমেন্ট তার আওতাভুক্ত অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনায়ও পরিবর্তন আনে। এই পরিবর্তনটিকেই প্রতিষ্ঠানগুলো দখল করে নেয়া বলে প্রচারণা চালাচ্ছে বিএনপিপন্থী ও ইউনূসপন্থী কয়েকটি গণমাধ্যম।

গ্রামীণ ব্যাংক ১৯৯৪ সালে ৫০ কোটি টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে গ্রামীণ ফান্ড গঠন করে। গ্রামীণ ফান্ডের অর্থায়ন ও ঋণে ১৫টি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এগুলো হলো, গ্রামীণ ব্যবসা সেবা লিমিটেড, গ্রামীণ বাইটেক লিমিটেড, গ্রামীণ সাইবারনেট লি, গ্রামীণ নীটওয়্যার লি, গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লি, গ্রামীণ সলিউশন লি, গ্রামীণ আইটি পার্ক লি, টিউলিপ ডেইরী এন্ড ফুড প্রোডাক্টস লি, গ্লোব কিডস ডিজিটাল লি, গ্রামীণ ইনফরমেশন হাইওয়ে লি, গ্রামীণ স্টার এডুকেশন লি, রফিক অটোভ্যান ম্যানুঃ ইন্ডাঃ লি, গ্রামীণ উদ্যোগ, গ্রামীণ শিক্ষা, গ্রামীণ সামগ্রী।

অন্যদিকে, গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থায়নে ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আরেকটি প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ কল্যাণ কর্তৃক অর্থায়নকৃত (ইকুইটি/ঋণের মাধ্যমে) ১৩টি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এগুলো হলো- গ্রামীণ নিটওয়্যার লি, গ্রামীণ ব্যবসা বিকাশ, গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লি, গ্রামীণ আইটি পার্ক লি, গ্রামীণ সলিউশন লি, গ্রামীণ ডানন ফুডস লি, গ্রামীণ হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস লি, গ্রামীণ স্টার এডুকেশন লি, গ্রামীণ টেলিকম লি, গ্রামীণ শিক্ষা, গ্রামীণ ডিস্ট্রিবিউশন লি, গ্রামীণ ফেব্রিক্স এন্ড ফ্যাশনস, গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশন।

গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গ্রামীণ কল্যাণ। আবার গ্রামীণ কল্যাণের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গ্রামীণ টেলিকম। আবার গ্রামীণ টেলিকমের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আরো ১২টি প্রতিষ্ঠান। যেমন- গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গ্রামীণ কল্যাণ। গ্রামীণ কল্যাণের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গ্রামীণ টেলিকম। গ্রামীণ টেলিকমের অর্থায়নে গ্রামীণ উদ্যোগ গঠিত হয়েছে। গ্রামীণ উদ্যোগের অর্থায়নে গ্রামীণ টেক্সটাইল মিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা কে?

স্বাধীনতা যুদ্ধের পর প্রথম ক্ষুদ্রঋণের ধারনাটি দিয়েছিল কুমিল্লা বার্ড মডেল, ১৯৭১ সালে। সমবায় সমিতির অগ্রদূত ও সমাজবিজ্ঞানী আখতার হামিদ খান ১৯৫৯ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি পদ্ধতির মাধ্যমে প্রান্তিক ও ভূমিহীন বর্গাচাষীদের মধ্যে ঋণ দেয়া শুরু করেন। তারপর ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংক ও আশাসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের সক্রিয় অংশগ্রহণে এর পূর্ণতা পায়।

সাংবাদিক সৈয়দ বোরহান কবীর বলেন, ‘কুমিল্লা বার্ড মডেলের পর ক্ষুদ্রঋণের প্রচলন করেছিল ব্র্যাক। স্বাধীনতার পরই ব্র্যাক এই কার্যক্রম চালু করে সিলেটের সুনামগঞ্জের হাওড়ে। ইউনূস যেটা করেছেন, তিনি এটিকে একটি প্রকল্প বানিয়ে সরকারের কাছে নিয়ে গেছেন।’

তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংক কিন্তু সরকারি। এটা কোনো ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান না। ব্র্যাককে সরকার নিচ্ছে না কেন? তারাও তো ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম করে। ব্র্যাক ব্যাংক যেমন পূর্ণ বাণিজ্যিক ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক সেটা না। আইন দিয়ে প্রণীত একটি বিশেষায়িত ব্যাংক গ্রামীণ ব্যাংক।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন