হোম অন্যান্যসারাদেশ শার্শা ছাগলের খামারে সফল ইকবাল

শার্শা ছাগলের খামারে সফল ইকবাল

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 132 ভিউজ
বেনাপোল প্রতিনিধি :
বাণিজ্যিকভাবে ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন যশোরের শার্শা উপজেলার ইকবাল হাসান তুতুল।দেশে ছাগলের মাংসের যেমন চাহিদা রয়েছে, তেমনি দামও সন্তোষজনক হওয়ায় ছাগলের খামার গড়ে তিনি সাফল্য পেয়েছেন।
শখ থেকে শুরু হওয়া ছাগল পালন এখন তুতুলকে সফল এক খামারি করে তুলেছে।
আট বছর আগে চারটি ছাগল পালন শুরু করেছিলেন বেকার যুবক ইকবাল হাসান তুতুল। এখন তার খামারে ছাগলের সংখ্যা ৩০০; যার বাজার মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা। তার খামারে দেশি ছাগলের পাশাপাশি বিদেশি প্রজাতির ছাগলও রয়েছে। তুতুলের সফলতা দেখে অনেকেই ছাগলের খামার করতে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন।
যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআচড়া সাতমাইল এলাকায় তুতুল  তার বসতবাড়ির পাশেই গড়ে তুলেছেন ছাগলের এই খামার। অল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় শখের ছাগল পালন এখন তার পেশায় পরিণত হয়েছে।
ইকবাল হাসান তুতুল  বলেন, ২০১২ সালে শখের বশে ২০ হাজার টাকায় চারটি ছাগল কিনে লালন-পালন শুরু করেন। এক বছরের মধ্যে ছাগল চারটি বিক্রি করে ৪০ হাজার টাকা আয় হয়। এরপর তিনি ছাগলের খামার করার সিদ্ধান্ত নেন।উপজেলা প্রাণী সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শক্রমে ‘দেশি’ ও ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল’ প্রজাতির ছাগল কিনে ‘ম্যাচিং’ পদ্ধতিতে খামার গড়ে তোলেন; সেখানে এখন চার প্রজাতির ৩০০টি ছাগল রয়েছে ।
ইকবাল হাসান তুতুল আরো বলেন, তিনি ও তার স্ত্রী লিপি নিজেরাই ছাগলের খাওয়ানো পরিচর্যা থেকে শুরু করে দেখাশোনা করেছেন এতদিন। তবে খামারে ছাগলের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এখন তিনটি ছেলে রেখেছেন। এছাড়া বাড়ির পাশের পতিত জায়গায় ‘হাইড্রোপনিক’ ঘাস আবাদ করেছেন। এই ঘাস উৎকৃষ্টমানের; তাই এই ঘাস দিয়েই ছাগলের খাবারের বেশিরভাগ চাহিদা মেটান।
মাটি ছাড়া শুধু মাত্র পানি ব্যবহার করে যে ঘাস চাষ করা হয় তাকে হাইড্রোপনিক ঘাস বলে। দুধ ও মাংস উৎপাদন করতে হলে গরু-ছাগলের জন্য প্রচুর পরিমাণে কাঁচা ঘাসের প্রয়োজন। আমাদের দেশের অনেক খামারির ঘাস চাষের জমি নেই এবং আবার কিছু খামারি আবাদি জমিতে ঘাস চাষ করতে চান না। কিন্তু গরু ও ছাগলের জন্য কাঁচা ঘাস দিতে হয়। হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ঘাস চাষ করতে জমির প্রয়োজন হয় না, তাই ইচ্ছা করলেই সব খামারি খুব সহজেই এই পদ্ধতিতে ঘাস চাষ করে গরুকে খাওয়াতে পারেন।
এই ঘাসে মাঠের সবুজ ঘাসের প্রায় সব পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। তাছাড়া উৎপাদন খরচও খুবই কম।
তুতুলের স্ত্রী লিপি খাতুন বলেন, ছাগল বছরে দুইবার বাচ্চা দেয়। প্রতিবার প্রজননে একাধিক বাচ্চা হয়। রোগ-বালাইও কম হয়। বছরে একবার টিকা দিলেই আর কোনো ওষুধ লাগে না। তাই অল্প খরচে বেশি আয় করা সম্ভব।
তুতুল বলেন, “একটি বিদেশি গাভির জন্য প্রতিদিন ৩০০ টাকার খাবার লাগে। অথচ ৩০০ টাকায় প্রতিদিন ২০টি ছাগলকে খাওয়ানো যায়।”
ছাগলকে খাওয়ানো হয় গম, ভুট্টা, ছোলা বুটের গুড়ো, সয়াবিন ও ঘাস।
খামারের দেখভালের দায়িত্বে থাকা শরিফুল ইসলাম বলেন, “তিনজনে আমরা এই খামারে ছাগলের দেখাশুনা করি। মাসে সাত হাজার টাকা মাইনে পাই। এ দিয়ে আমরা ভালো আছি।”
শার্শা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার বলেন, ছাগল পালন করে মোটামুটিভাবে সফল হয়েছেন তুতুল দম্পতি। আমরা নিয়মিত তাদের ওই ছাগলের খামার পরিদর্শনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে দিচ্ছি। এখন অনেকেই ছাগলের খামার গড়ে তুলতে পরামর্শের জন্য আমাদের কাছে আসছেন। তাদেরকে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।উপজেলায় এক হাজার ৮৩০টি ছাগলের খামারে হয়েছে। এসব খামারে এক লাখ ১০ হাজার ছাগল রয়েছে।
এতে প্রায় দুই হাজার পরিবারে স্বচ্ছলতা যেমন ফিরেছে, তেমনি পুষ্টি ও মাংসের চাহিদাও মিটছে। বেকারত্ব কমাতেও সহায়তা করছে এই উদ্যোগ।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন