স্পোর্টস ডেস্ক:
পুনের টিম হোটেলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়েছেন জাতীয় দলের ওপেনার লিটন কুমার দাস। নিরাপত্তাকর্মী ডেকে টিম হোটেল থেকে সাংবাদিকদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। যদিও পরে এই ঘটনায় সামাজিকমাধ্যমে এক বিবৃতিতে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেন লিটন। এবার এই ঘটনায় বাংলাদেশ দলের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
বিসিবির পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেন টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। পুনেতে টিম হোটেলে সোমবার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে লিটনের হুট করে খেপে যাওয়ার পেছনে কারণও ব্যাখ্যার চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। তার মতে, দলের পরাজয় ও নিজে রান না পাওয়া এক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে থাকতে পারে।
রোববার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে বাংলাদেশ দলের ঠিকানা কনরাড পুনে হোটেলে আলোচিত এই ঘটনার জন্ম দেন লিটন। দলের অনুশীলন না থাকায় ভারতে বিশ্বকাপ কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকরা টিম হোটেলে যান প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর সাক্ষাৎকার নিতে। প্রধান নির্বাচক তখন হোটেলে না থাকায় লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয় তাদের।
নিয়ম অনুযায়ী, হোটেলের টিম লবিতে অপেক্ষা করছিলেন সাংবাদিকরা। ওই সময় ছোট ছোট দলে মধ্যাহ্নভোজের জন্য বের হচ্ছিলেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। সংবাদকর্মীরা তাদের ছবি তোলেন ও ভিডিও করেন। মাহমুদউল্লাহ, তাসকিন আহমেদ, নাজমুল হোসেন শান্ত, হাসান মাহমুদসহ বেশ কজন ক্রিকেটার হাসিমুখে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে টুকটাক কথা বলেন। ছবি তোলা বা ভিডিও করা নিয়ে কোনো আপত্তি তারা জানাননি।
এ সময় লিটন দাসও মধ্যাহ্নভোজের জন্য বের হন। তখন নিরাপত্তাকর্মী ডেকে জিজ্ঞেস করেন সেখানে সাংবাদিক কেন। এরপর লিটনের চাওয়া মতো সাংবাদিকদের হোটেল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন হোটেলের নিরাপত্তাকর্মী। শেষ পর্যন্ত প্রধান নির্বাচকের দেখা না পেয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর সংবাদকর্মীরা হোটেল ছাড়তে শুরু করেন। লিটন যখন লবির বাইরে আসেন, ততক্ষণে অনেক সংবাদকর্মীই হোটেলের বাইরে চলে গেছেন। তিন-চারজন যারা ছিলেন তখনও তারা লিটনের ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে থাকেন। এই ওপেনার তখন হোটেলের নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে কিছু বলেন, হাত দিয়ে সাংবাদিকদের দিকে ইশারাও করেন।
ওখানে থাকা সংবাদকর্মীরা জানান, নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে লিটন জিজ্ঞেস করেন, মিডিয়া এখানে কেন? পাশাপাশি আরও কিছু বলেন। পরে নিরাপত্তাকর্মীরা এসে সাংবাদিকদের চলে যেতে বলেন ওখান থেকে। টিম হোটেলে সাংবাদিকদের যাওয়া নিয়ে অনেক সময় বিধিনিষেধ থাকলেও এদিন হোটেল কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা বা বাধা ছিল না। তবে বাংলাদেশের এক ক্রিকেটার অভিযোগ করেছেন বলেই চলে যেতে বলা হচ্ছে, সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান ওই নিরাপত্তাকর্মী।
বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হয়ে ওই ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সামাজিকমাধ্যমে। তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হতে থাকে। সোমবার সকালে নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পাতায় দুঃখপ্রকাশ করেন লিটন। ওই বিবৃতিতে লিটন জানান, টিম হোটেলে এত সংবাদকর্মী আছে বুঝতে পারেননি তিনি। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি অল্পসংখ্যক সংবাদকর্মী থাকলে তার এই কাণ্ড সঠিক হতো? এমন প্রশ্নের বিপরীতে নিজের অবস্থান থেকে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন খালেদ মাহমুদ।
‘আমরা জিনিসটাকে ইতিবাচক বা নেতিবাচক, দুইভাবেই নিতে পারি। তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি আমি জানি না। লিটন বা বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার কখনও এমন করেছে কি না, আমার জানা নেই। লিটন এরোগেন্ট ছেলে, এমন আমি কখনও দেখিনি। কিন্তু ও কেন বলল ওই সময়ের কথাটা, সেটা তো বলেনি। যেটা ওর বিবৃতি ছিল, আমি যেটা বলেছি… ও আমাকে বলেছে, ‘স্যার আমি নির্দিষ্ট কোনো কারণে বলিনি। আমি শুধু তখন অস্বস্তিবোধ করছিলাম। যে কারণে আমি বলেছি।’ হয়তোবা যেটা হয়, একটা দল হারলে অনেক সময় অনেক নেতিবাচকতা কাজ করে। নিজেদের গুটিয়ে রাখতে চায়।’
‘আমরা চেষ্টা করছি, বাইরে নিয়ে একসঙ্গে খাবার খেতে, একসঙ্গে সবকিছু করার চেষ্টা করছি। তবে দিন শেষে ক্রিকেট খেলাটা তো শারীরিক চাপের চেয়ে মানসিক চাপ বেশি যে, রান করতে পারছে না বা ধারাবাহিকতা হচ্ছে না। এটা একটা সমস্যা হচ্ছে। তো ওই কারণে কিছু (প্রতিক্রিয়া) এলো কি না জানি না। তবে আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ও বিসিবির পক্ষ থেকে এই ঘটনার ব্যাপারে সরি বলছি। আমি এটার জন্য দুঃখপ্রকাশ করলাম। আপনারা এটাকে ইতিবাচকভাবে নিয়েন।’
এ সময় সংবাদমাধ্যমের কাছে অন্য যেকোনো সময়ের মতো স্বাভাবিক সমর্থনের আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশের টিম ডিরেক্টর।
‘আমরা চাই বাংলাদেশের যে বাকি ৬টা ম্যাচ… আপনারা যেমন সমর্থন করেন সবসময় তেমনই করবেন। যাতে আমরা ইনশাআল্লাহ্ ভালো করতে পারি। আমরা এখানে এসেছি ভালো ক্রিকেট খেলতে। আমাদের অনেক ইচ্ছা ছিল এখানে… ইচ্ছাগুলো এখনও শেষ হয়ে যায়নি। আমরা এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারি। দুইটা বড় ম্যাচের মধ্যে যদি জিততে পারি, আমরা আমাদের লক্ষ্যে হয়তো পৌঁছাতে পারব।’
‘লক্ষ্য থেকে আমরা এখনও সরিনি। আমরা জানি, আমরা ভালো খেলছি না। স্বপ্ন দেখানোর কিছু নেই। তবে আমরা এখনও বাস্তবতা বিশ্বাস করতে চাই এবং সেরা ক্রিকেটটা খেলতে চাই। বাংলাদেশ যদি সেরা ক্রিকেটটা খেলে এবং তারপরও যদি হারি, আমি এটি গ্রহণ করব।’