জাতীয় ডেস্ক:
বাড়িভাড়া বাবদ লাখ লাখ টাকা আয়, কিন্তু তাতেও সন্তুষ্ট নন ভবন মালিকরা। ছাদ দখল করে তৈরি চিলেকোঠায় কখনও আবাসিক, আবার কখনও তৈরি করা হচ্ছে রুফ টপ রেস্টুরেন্ট। সংকীর্ণ সিঁড়ি, পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা না থাকাসহ নানা অনিয়ম তো আছেই। বেইলি রোড ট্র্যাজেডির শিকার গ্রিন কোজি কটেজের ক্ষেত্রে ঘটেছে একই অনিয়ম। সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে ফেরাদের মতে, ছাদ খোলামেলা থাকলে বেঁচে যেত আরও কিছু প্রাণ।
একটা সময় কোলাহল, হই-হুল্লোড়, গল্প-আড্ডার গুঞ্জনে মেতে থাকা বেইলি রোড ট্রাজেডির গ্রিন কোজি কটেজটি ঘিরে এখন রাজ্যের নীরবতা। নিস্তব্ধতা। আগুনের পর গ্যাস সিলিন্ডারে মজুত ভবনটি পরিণত হয় জ্বলন্ত এক চিতায়। সংকীর্ণ সিঁড়ি, আলো-বাতাস বের হওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকার বিষয়টি সবার জানা।
সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, আবাসিকের অনুমতি নিয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) ম্যানেজ করে ভবনটিতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালানোর। এতসব প্রশ্নের মাঝে দৃষ্টি দেয়া যায় ভবনটির ছাদে, যেখানে আশ্রয় নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় বেঁচে ফেরেন অনেকেই।
ভবনটির ছাদ আয়তনে খুব বেশি বড় না হলেও, ছোট্ট ছাদটিও বাদ পড়েনি দখলের দৌরাত্ম্য থেকে। ছাদটি খণ্ড খণ্ড ভাগ করে গড়ে তোলা হয় একাধিক প্রতিষ্ঠান। রুফ টপ রেস্টুরেন্ট।
দুর্ঘটনার রাতে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে ফেরাদের একজন সজল রায়। আগুনের খবর পেয়ে প্রথমে চেষ্টা করেন সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামার। কিন্তু সিঁড়িজুড়ে আগুনের উত্তাপ সহ্য করতে না পেরে উঠে যান ছাদে। ছাদ উন্মুক্ত থাকলে আশ্রয় নিতে পারতেন আরও কয়েকজন, দাবি তার।
তিনি বলেন,ছাদে সামনের দিকটায় একটা রুফ টপ রেস্টুরেন্ট ছিল। ছাদটা খোলা থাকলে আমাদের জন্য ভালো হতো। কারণ, ওখানে এমন পরিস্থিতি ছিল যে একেকজন মানুষ আর্তনাদ করতে করতে কারো গায়ের ওপর পড়ে যাচ্ছিল। আমার সঙ্গে থাকা একজন রেলিং বেয়ে বেয়ে নিচে নেমেও যান।
বেইলি রোড ট্রাজেডির এত এত মৃত্যুর পর প্রশ্ন উঠেছে, রাজধানীজুড়ে অন্যান্য ভবনের ছাদের কী অবস্থা। সামান্য অর্থের লোভে আর কত কত ছাদ পরিণত হয়েছে অর্থ আয়ের পথ হিসেবে। রাগ আর ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন নগরবাসী।
বেঁচে ফেরারা বলছেন, টাকার লোভে ছাদে রুম করে তারা ভাড়া দেন। এ ছাড়া লিফটের পাশে যে একটা সিঁড়ি আছে, সেটা স্থানীয় লোক ছাড়া অন্য কারো বোঝার উপায় নেই।
শুধুই কি ছাদ? এর বাইরেও সবচেয়ে বড় অনিয়মটি হচ্ছে আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। পুড়ে যাওয়া ভবনটি এই দোষে দুষ্ট না হলেও, ঠিক গ্রিন কোজি কটেজের লাগোয়া ভবনগুলোর ক্ষেত্রেও একই অনিয়ম। আতঙ্কে অনেকে বাসা ছেড়ে দিতে শুরু করেছেন এসব বহুতল ভবন থেকে।
ছাদ দখলসহ সুনির্দিষ্ট অনিয়মগুলো অস্বীকার করছেন না রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও। কিন্তু অনিয়ম নিয়মে ফিরবে কবে?
ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রি. জে. (অব.) আবু নাঈম মো. শহীদুল্লাহ বলেন, লোকজন ছাদে গিয়ে আশ্রয় নেবে সে জায়গাও নেই। অথচ ছাদ খোলা রাখার কথা। পয়সার জন্য তারা সেখানেও ঘর করে ভাড়া দিয়েছে। তাই লেডারটা যে ওপরে নামাবে, সেটা কোথায় নামাবে? নামানোর জায়গাটা পর্যন্ত নেই! এ ছাড়া ওখানে সিঁড়ি মাত্র একটা, যা চিমনিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ভবন নির্মাণ নীতিমালা অনুসরণ করলে চিমনিতে পরিণত হওয়ার কথা না।
গ্রিন কোজি কটেজের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে রাজধানীর রমনা থানায় একটি মামলা করেছে।