খুলনা অফিস :
করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই খুলনা জেলা প্রশাসনের তত্বাধানে নিয়োগ পরীক্ষার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এ নিয়ে শহর জুড়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। প্রায় সাড়ে ৭ শ’ পরীক্ষার্থী অংশ নেয় এ পরীক্ষায়। জনাকীর্ণ পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণে স্বাস্থ্যবিধি সংরক্ষন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অংশগ্রহণকারী এবং সুশীল সমাজের লোকজন। বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক এবং বিশেষ সুবিধা গ্রহনের জন্য করা হয়েছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখার দাবি তুলেছেন তারা। খুলনা জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ পরীক্ষা হয় শনিবার। এক দিনেই লিখিত, ভাইভা ও ব্যবহারিক পরীক্ষা সহ সামগ্রীক কার্যাবলী সম্পন্ন করা হয়েছে।
নিয়োগ সংক্রান্ত স্মারক পত্রে উল্লেখ করা হয়, গত ৪ জুন নিয়োগ কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০ জুন সকাল ১০টায় খুলনা জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে ৫৪ জন হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর এর শুন্য পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। খুলনার জিলা স্কুল, সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও খুলনা কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে ভীড় ছিল চোখে পড়ার মত। পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলের জন্য নিয়মিত মাইকিং করা হলেও তা মানছিল না অধিকাংশরাই। একে অপরের গা ঘেঁষে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেখা যায় অংশগ্রহণকারীদের। বিকেল ৪টায় নগরীর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল দপ্তরে ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৪টায় খুলনা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে মৌখিক পরীক্ষার সময় দেওয়া হলেও পরে তা সন্ধ্যা ৭টায় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু করোনা সংক্রমণ এড়াতে জেলায় পাবলিক পরিবহন ও যান চলাচল সীমিত থাকায় পরীক্ষার্থীরা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নগরীতে আসতে বিড়ম্বনায় পড়েন।
রাতের মধ্যেই চুড়ান্তদের তালিকাও প্রস্তুত করা হয়। এরমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পাঁচজন, নারী কোটায় আটজন, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা কোটায় পাঁচজন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটায় একজন, শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটায় একজন ও মেধা কোটায় ৩০ জনকে মনোনীত করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অংশগ্রহণকারীর অভিযোগ, করানোর মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে তাদেরকে বিপদের মুখে ঠেলে ফেলা হয়েছে। দুর্যোগের মধ্যেই হঠাৎ কী কারণে এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সে বিষয়েও ওয়াকিবহাল নন তারা। বাধ্য হয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছেন অংশগ্রহণকারীরা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনা জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা বলেন,খুলনায় বিশেষভাবে লকডাউন চলছে। তার মধ্যে এ ধরনের পরীক্ষা নেওয়া বিশেষ কোন উদ্দ্যেশ্য রয়েছে কিনা সেটা পরিস্কার নয়। করোনার মোকাবেলায় যদিও নিয়োগ দেওয়ার উদ্দেশ্য হয় তবুও আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। এতে বহু মানুষ ঝুঁকির মধ্যে পড়লেন। এটি দু:খজনক।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, করোনা সংক্রমনের এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে এ ধরনের নিয়োগ পরীক্ষা মানুষকে বিপদেও ফেলতে পারে। এ ধরনের পরীক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা পুরোপুরিভাবে সম্ভব হয় না। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আরও বেশি কৌশলী হতে পারতো।
তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন কর্তৃপক্ষ। খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ হেলাল হোসেন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল সরকারি কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে। যার নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। নিয়োগ সংক্রান্ত সকল কাযর্ক্রমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হয়েছে।