হোম বিনোদন রুপালি গিটারের জাদুকরের জন্মদিন আজ

বিনোদন ডেস্ক:

আশির দশকে সংগীত জগতে গানে গানে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। তার রুপালি গিটারের জাদু আজও যেন মোহিত করে শ্রোতাদের। তিনি আর কেউ নন, সব সময়ে সবার প্রিয় আইয়ুব বাচ্চু। আজ বুধবার (১৬ আগস্ট) প্রয়াত এ কিংবদন্তির জন্মদিন।

আইয়ুব বাচ্চু চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। তার বাবা ইশহাক চোধুরী ও মা নুরজাহান বেগম। তাদের পরিবার ছিল একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবার। তার মতে, তাদের পরিবারে সবাই ‘অতি ধার্মিক ছিলেন এবং সংগীত নিজের পেশা হিসেবে বেছে নেয়াটা কেউ গ্রহণ করেননি।’

১৯৭৩ সালে তার বাবা তাকে তার ১১তম জন্মদিনে একটি গিটার উপহার দেন। পরে তিনি গিটার বাজানো শিখতে শুরু করেন। তাকে গিটার শেখাত জেকব ডায়াজ নামে একজন বার্মিজ মানুষ, তিনি সে সময় চট্টগ্রামে বসবাস করতেন। পরে ১৯৭৬ সালে আইয়ুব বাচ্চু তার এক বন্ধুর ইলেকট্রিক গিটার ধার নিয়ে বাজাতেন। একসময় তার বন্ধু তাকে গিটারটি দিয়ে দেয়।

এই রক অ্যান্ড রোল শিল্পী কিশোর বয়সে পশ্চিমা সংগীতের প্রেমে পড়েন। কৈশোরের চঞ্চল সময় থেকেই পাশ্চাত্য রক ধাঁচের গানের প্রতি আকৃষ্ট হন। হয়তো স্বপ্ন দেখতেন জিমি হেন্ড্রিক্স হওয়ার। যাকে আইয়ুব বাচ্চুর টিশার্টে প্রায় দেখা যেত।

রুপালি গিটারের জাদুকর
১৯৭৯ সালে চট্টগ্রামে কলেজজীবনে সহপাঠী বন্ধুদের নিয়ে তিনি একটি ব্যান্ডদল গড়ে তোলেন। নাম ছিল ‘গোল্ডেন বয়েজ’। পরে নাম বদলে রাখা হয় ‘আগলি বয়েজ’। সেই ব্যান্ডের গায়ক ছিল কুমার বিশ্বজিৎ এবং বাচ্চু ছিল গিটারিস্ট। বিয়েবাড়ি, জন্মদিন আর নানা অনুষ্ঠানে গান করত তাদের এই ব্যান্ড। ১৯৮০ সালে বাচ্চু ও বিশ্বজিৎ যখন সোলসে যোগ দেন তখন ব্যান্ডটি ভেঙে যায়।

তবে একসময় এই ব্যান্ডের সদস্যরা একেক দিকে ছড়িয়ে পড়েন। সত্তরের দশকের শেষ দিকে কাজ করেন ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের সঙ্গে, যা এখন ভক্তদের কাছে ‘নগর বাউল’ নামে পরিচিত।

পরবর্তী সময়ে ১০ বছর আইয়ুব বাচ্চু সোলস-এর মূল গিটারবাদক, গীতিকার এবং গায়ক হিসেবে কাজ করেন। তিনি সোলসের সঙ্গে চারটি অ্যালবামে কাজ করেছিলেন: সুপার সোলস (১৯৮২) যা ছিল বাংলাদেশের প্রথম গানের অ্যালবাম, কলেজের করিডোরে (১৯৮৫), মানুষ মাটির কাছাকাছি (১৯৮৭) এই অ্যালবামটিতেই বাচ্চুর সোলসের হয়ে গাওয়া প্রথম গান ‘হারানো বিকেলের গল্প’ প্রকাশ পায়।

সোলসের সঙ্গে আইয়ুব বাচ্চুর শেষ অ্যালবামটি ছিল ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট, যা প্রকাশ পেয়েছিল ১৯৮৮ সালে। ১৯৯০ সালের শেষের দিকে বাচ্চু ব্যান্ডটি ছেড়ে নিজের ব্যান্ড লিটল রিভার ব্যান্ড গঠন করেন, যা পরবর্তী সময়ে লাভ রানস ব্লাইন্ড বা সংক্ষেপে এলআরবি নামে জনপ্রিয়তা লাভ করে।

১৯৯২ সালের জানুয়ারি মাসে তারা বাংলাদেশে প্রথম ডাবল অ্যালবাম এলআরবি ১ এবং এলআরবি ২ প্রকাশ করে। ব্যান্ডটির তৃতীয় স্টুডিও অ্যালবাম সুখ, জুনে মুক্তি পায় এবং এটি বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ রক অ্যালবামগুলোর মধ্যে একটি।

৪০ বছরের গায়কি জীবনে ১২টি ব্যান্ড, ১৬টি একক ও বহু মিশ্র অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে আইয়ুব বাচ্চুর।

তার উল্লেখযোগ্য গানগুলো তালিকায় রয়েছে সুখ (১৯৯৩), তবুও (১৯৯৪), ঘুমন্ত শহরে (১৯৯৫), স্বপ্ন (১৯৯৬), আমাদের বিস্ময় (ডাবল এলবাম) (১৯৯৮), মন চাইলে মন পাবে (২০০১), অচেনা জীবন (২০০৩), মনে আছে নাকি নাই (২০০৫), স্পর্শ (২০০৭), যুদ্ধ (২০১২)।

এ ছাড়া একক শিল্পী হিসেবে তার অ্যালবামের মধ্যে রয়েছে রক্ত গোলাপ (১৯৮৬), ময়না (১৯৮৮), কষ্ট (১৯৯৫), সময় (১৯৯৮), একা (১৯৯৯), প্রেম তুমি কি! (২০০২), দুটি মন (২০০২), কাফেলা (২০০২), প্রেম প্রেমের মতো (২০০৩), পথের গান (২০০৪), ভাটির টানে মাটির গানে (২০০৬), জীবন (২০০৬), সাউন্ড অব সাইলেন্স (২০০৭), রিমঝিম বৃষ্টি (২০০৮), বলিনি কখনো (২০০৯), জীবনের গল্প (২০১৫)।

আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া অসংখ্য কালজয়ী গানের মধ্যে রয়েছে সেই তুমি, কষ্ট পেতে ভালোবাসি, এখন অনেক রাত, মেয়ে, কেউ সুখী নয়, হাসতে দেখো গাইতে দেখো, এক আকাশের তারা ইত্যাদি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন