হোম আন্তর্জাতিক রাশিয়াকে ‘শায়েস্তা’ করতে সৌদি সফরে যাচ্ছেন বাইডেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

সৌদি আরব সফরে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। চলতি মাসের শেষের দিকেই রিয়াদ সফরে যাবেন তিনি। সাক্ষাৎ করবেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে। মূলত জ্বালানি তেলের দাম কমানো ও ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোয় রাশিয়াকে শায়েস্তা করাই তার এ সফরের লক্ষ্য। বৃহস্পতিবার (২ জুন) মার্কিন গণমাধ্যমে এ খবর জানানো হয়েছে।

সৌদি সাংবাদিক ও মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটনপোস্টের কলামিস্ট জামাল খাসোগিকে হত্যা করায় সৌদি আরবকে একঘরে তথা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাইডেন। তবে ইউক্রেন সংঘাত শুরুর পর সেই অবস্থান থেকে সরে এসে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। গত কয়েক মাস ধরে মার্কিন কূটনীতিকদের অব্যাহত দৌড়ঝাপের পর দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠকে সম্মত হয়েছে রিয়াদ।

এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাইডেন চান জ্বালানি তেলের দাম কমাতে সৌদি তেল উৎপাদন বৃদ্ধি করুক। বিনিময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেনের এ দুই প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে সৌদি। এর কয়েকঘণ্টা পর এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট ও সিএনএন জানায়, মূলত ইসরাইল সফর করবেন বাইডেন। সফরকালে সৌদি আরব যাত্রা বিরতি করবেন তিনি। দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোয় রাশিয়াকে ‘শায়েস্তা’ করতে সৌদি সফরকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন বাইডেন।

তবে বাইডেনের সৌদি সফরের ব্যাপারে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এখনও ঘোষণা দেওয়া হয়নি। প্রেস সেক্রেটারি কারিন জ্যঁ-পিয়েরে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতে সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন। যুবরাজ মোহাম্মদের সঙ্গে বাইডেনের সাক্ষাতের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই।

ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের কারণে জ্বালানি তেলের দাম চড়তে শুরু করেছে। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্বজুড়ে। এ বিষয়ে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও আবুধাবির যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে জরুরি আলোচনার সুযোগ চাচ্ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

কিন্তু দুই যুবরাজ বাইডেনকে পাত্তা দেননি বলে ওই সময় মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে খবর প্রকাশ করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমটি জানায়, প্রেসিডেন্ট বাইডেন সৌদি যুবরাজ ও আবুধাবির যুবরাজকে ফোনও করেছিলেন। তবে তাদের কেউই বাইডেনের ফোন কলে সাড়া দেননি।

ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল আরও জানায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে ক্রমবর্ধমান তেলের দাম কমানোর চেষ্টা করছেন বাইডেন। কিন্তু বাইডেনের এ চেষ্টাকে সমর্থন দিতে নারাজ তেল সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুটি।

সিএনএন সম্প্রতি জানায়, সৌদি যুবরাজ ও মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যে একটি বৈঠক আয়োজন কয়েক মাস ধরেই চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন মার্কিন কূটনীতিকরা। অবশেষে বাইডেন ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদের মধ্যে সাক্ষাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

সিএনএন আরও জানায়, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা বাইডেনের বিদেশ সফরকালে যুবরাজের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের বিষয়ে সৌদি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

সৌদি আরব বর্তমানে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে আগামী মাসেই জিসিসির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকের মধ্যেই যুবরাজ মোহাম্মদের সঙ্গে বাইডেনের বৈঠক হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি নেতাদের মধ্যে বৈঠক একসময় ‘রুটিন’ হিসেবে গণ্য হতো। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের সাম্প্রতিক টানাপোড়েনের কারণে এ ধরনের বৈঠক কমে গেছে। তাই মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে জো বাইডেনের সম্ভাব্য সাক্ষাতের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে।

 

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন