হোম অন্যান্যশিক্ষা রাবির হলে গরুর মাংস নিয়ে বিতর্কের সমাধান হলো যেভাবে

রাবির হলে গরুর মাংস নিয়ে বিতর্কের সমাধান হলো যেভাবে

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 81 ভিউজ

শিক্ষা ডেস্ক:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হলের ডাইনিংয়ে রমজান মাসে সেহেরিতে গরুর মাংস নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অবশেষে সেই বিতর্কের সমাধান করেছে হল প্রশাসন।

সনাতন ও মুসলিম শিক্ষার্থীসহ প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে মুসলিম শিক্ষার্থীরা রমজানে গরুর মাংস খাবে তবে তা খাওয়া ও রান্নার জন্য আলাদা পাতিল ও থালা বাসন ব্যবহার করবে।

শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, আমীর আলী হলে একটি মাত্র ডাইনিং। কোনো ক্যান্টিন নাই। এই ডাইনিংটি হলের শিক্ষার্থীরা নিয়ন্ত্রণ করে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইসাবেল ক্যাটারিং’। এটা শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করে। কিছুটা ছাত্রাবাসের মতো। যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেরা মিটিং করে, কি খাওয়া হবে, কারা বাজার করবে সিদ্ধান্ত নেয়। নিজেদের মধ্য থেকে ম্যানেজার নির্ধারণ করে শিক্ষার্থীরা এটা পরিচালনা করে। তবে এটি তদারকি করে হল প্রশাসন।

সামনে রমজান মাস আসায় গরুর মাংস চলবে কি চলবে না, তার জন্য মুসলিম ও সনাতন ধর্মের প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করে হল প্রশাসন। সেখানে শিক্ষার্থীদের সম্মতি নিয়ে রমজান মাসে গরুর মাংস রান্না না করার পক্ষে থাকে সবাই। কারণ, এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলে রমজান মাসে সনাতন শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবারে মুরগি মাংসের সাথে গরুর মাংসের মিশ্রণ পায়। এ নিয়ে তখন আন্দোলনও করে শিক্ষার্থীরা। পরে নিরাপদ খাবারের নিশ্চয়তা নিয়ে মানববন্ধনও করেছিল সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও গত বছর এসএম হলের ক্যান্টিনে সনাতন ধর্মের এক শিক্ষার্থীকে খাসির মাংস বলে গরুর মাংস দিয়ে খাওয়ানো হয়। পরে এ নিয়েও শুরু হয় বিভিন্ন বিতর্ক। এই সকল বিতর্ক ও দুর্ঘটনা এড়াতে হল প্রশাসন গরুর মাংস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি করে। তারই প্রেক্ষিতে নতুন করে মিটিং ডেকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়।

প্রথম মিটিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্বপন হোসাইন ও ডাইনিং কমিটির সদস্য বলেন, সারা বছর আমরা গরুর মাংস না খেলেও রমজান মাসে ৫ থেকে ৭ দিনের জন্য সেহরিতে গরুর মাংস খাওয়ার জন্য প্রাধ্যক্ষ স্যারের কাছে আবেদন জানাই। আবেদনের প্রেক্ষিতে গত পরশুদিন রাতে প্রাধ্যক্ষ স্যারের কক্ষে আমরা এবং ১০ থেকে ১৫ জন হিন্দু ভাইদের উপস্থিতিতে প্রাধ্যক্ষ স্যার মিটিং করেন। সেখানে আমরা গরুর মাংস খাওয়ার জন্য আবেদন জানালেও তারা গরুর মাংস খেতে নিষেধ করে। পরে প্রাধ্যক্ষ স্যার সিদ্ধান্ত নেন সেহরিতে গরুর মাংস চলবে না।

পরিসংখ্যান বিভাগে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের পলাশ মণ্ডল বলেন, সেহেরিতে গরু মাংস চলবে জানার পর প্রাধ্যক্ষ মহোদয়কে আমাদের আপত্তির কথা অবগত করি। কারণ এর আগে শাহ্ মখদুম হল ও শহিদ হবিবুর রহমান হলে ২টি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে এই গরু মাংস খাওয়া নিয়ে। তখন প্রাধ্যক্ষ স্যার আমাদের ও কয়েকজন মুসলমান ভাইদের একসঙ্গে নিয়ে মিটিং করেন। ওই মিটিংয়ে আমরা আবারও আপত্তি জানালে প্রাধ্যক্ষ স্যার গরু মাংস বন্ধ রাখতে সবাইকে অনুরোধ জানান।

শুক্রবারের (৮ মার্চ) মিটিংয়ে উপস্থিত সংস্কৃত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের দিলবর হোসেন ইমন বলেন, হলের ক্যাটারিংয়ে রমজান মাসে সেহরিতে গরুর মাংস রান্নার ব্যাপারে গত ৭ তারিখে প্রভোস্ট স্যারের রুমে একটি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মিটিংয়ে সনাতন ধর্মের ছেলেরা গরুর মাংস রান্নার বিরোধিতা করে ও গরুর মাংস রান্না বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। এতে মুসলিম শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয় ও প্রতিবাদ জানায়। পরে প্রভোস্ট স্যার পরদিন আবার দুই ধর্মের ছেলেদের নিয়ে ডাইনিং রুমে একটা মিটিংয়ের আহ্বান করেন। মিটিংয়ে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়, যেদিন গরুর মাংস রান্না হবে সেদিন ডেকোরেশন থেকে প্লেট থেকে শুরু করে রান্নার সকল সরঞ্জাম নিয়ে আসা হবে। ডাইনিংয়ের কোনো জিনিস রান্নার কাজে ব্যবহার করবে না। উভয়পক্ষই এতে সন্তুষ্ট প্রকাশ করে।

ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ডাইনিং কমিটির সদস্য সুরঞ্জন মজুমদার বলেন, কয়েকদিন ধরেই এটা বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এর আগেও দুইবার মিটিং হয়েছিল কিন্তু কিন্তু কোনো সুষ্ঠু সমাধান আসছিল না। তবে কালকের মিটিংয়ে এই সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে তাই আমরাও আপত্তি করিনি। ব্যক্তিগতভাবে আমি সবসময় চাই হলে শান্তি-সম্প্রীতি-ভ্রাতৃত্ব বজায় থাকুক।

সার্বিক বিষয়ে সৈয়দ আমীর আলী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম মাহমুদুল হক বলেন, সকল সমালোচনা নিয়ে গতকাল আবার সবাইকে নিয়ে মিটিংয়ে বসি। যেহেতু এই হলে একটা মাত্র ডাইনিং। তাই আলাদা আলাদা করে রান্না করা, আলাদা আলাদা করে খাওয়া এটা খুবই কঠিন হয়ে যায়। তাই গতকাল মিটিংয়ে সবার মতামতের প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, রমজান মাসে গরুর মাংস খাওয়া হবে। তাবে যেদিন গরুর মাংস রান্না করা হবে সেদিন বাইরে থেকে রান্নার এবং খাওয়ার যাবতীয় জিনিসপত্র ভাড়া করে নিয়ে আসা হবে এবং জিনিসপত্রের যা খরচ হবে তা হল প্রশাসন বহন করবে।

তিনি আরও বলেন, শুধু রমজান মাসের কথায় বলা হয়েছে কারণ, গরুর মাংস বলি আর খাসির মাংস এগুলোর খরচ অনেক বেশি। সব শিক্ষার্থীদের জন্য এটা কষ্টকর হয়ে যাবে। এখন তারা যদি কষ্ট করে ম্যানেজ করতে পারে তাহলে সব মাসেই তারা খাবে এতে কারোর কোনো সমস্যা নাই। রমজান মাসের জন্য যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এটা সাময়িক। এখন শিক্ষার্থীরা যদি নিয়মিত খেতে চাই তাহলে হল প্রশাসন থেকে আলাদা পাতিলসহ যা প্রয়োজন সব কিনে নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো ধরনের বাধা নেই। তারা এক্ষেত্রে যদি শিক্ষার্থীরা নিয়মিত খেতে চাই তাহলে তার ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। তবে পড়ালেখাকে ক্ষতি করে ছাত্ররা ডাইনিং ব্যবস্থাপনায় অধিক সময় ব্যয় করুক কিংবা সাধারণ ছাত্রদের সক্ষমতার বাইরে ব্যয়বহুল খাবার পরিবেশিত হোক তা হল প্রশাসন কখনোই সমর্থন করে না।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন