বিনোদন ডেস্ক:
কলকাতার পুরানো জমিদার পরিবারের এক আদুরে সন্তান ঢাকায় এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন শরণার্থী শিবিরে। এরপর জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করে, বহু ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে একদিন হয়ে ওঠেন বাংলা চলচ্চিত্রের রাজপুত্র। আস্তে আস্তে ঢালিউড নামক রাজ্যের এক রাজাধিরাজে পরিণত হন। সেই রাজাধিরাজের নাম আব্দুর রাজ্জাক। ভালোবেসে মানুষ তাকে উপাধি দিয়েছিলেন ‘নায়করাজ’।
হতে চেয়েছিলেন ফুটবলার। আন্তঃস্কুল ফুটবলে খেলতেন, ছিলেন গোলকিপার। কলকাতায় তখন ফুটবলাররা সুপারস্টার হিসেবে গণ্য হতেন। একদিন গোলবারে একটা বল ধরতে গিয়ে স্ট্রাইকারের প্রচণ্ড জোরে মারা লাথি লাগে বুকে। তারপরেই বিদায় জানান সাধের ফুটবলকে। মনোযোগ দেন অভিনয়ে।
সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন। এরপর নিয়মিত মঞ্চ আর নাটক নিয়ে পথ চলতে থাকে। এপার বাংলায় আসার আগে কলকাতায় তিনটি সিনেমায়ও অভিনয় করেন এ অভিনেতা। সেখান থেকে একদিন মুম্বাই চলে যান। মুম্বাইয়ে সুবিধা করতে না পেরে সিনেমার নায়ক হওয়ার আশায় পা রাখেন ঢাকায়।
কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে প্রথমে তিনি থিয়েটারে কাজ শুরু করেন। এরপর নিজের প্রতিভা গুণে সুযোগ পেয়ে যান ছোট পর্দার নাটকে অভিনয় করার। ছোট পর্দায় ‘ঘরোয়া’ নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের নজরে চলে আসেন রাজ্জাক।
অবশেষে রাজ্জাকের স্বপ্ন পূরণ হয় ১৯৬৮ সালে। জহির রায়হানের চলচ্চিত্র ‘বেহুলা’তে প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। এরপর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘আনোয়ারা’ আর তৃতীয় ‘আগুন নিয়ে খেলা’। এই ছবি বের হওয়ার আগেই তিনি সুপারস্টার খেতাবে ভূষিত হন।
নায়করাজ রাজ্জাক চলচ্চিত্রে প্রথম জুটি বেঁধে কাজ করেছেন জনপ্রিয় নায়িকা সুচন্দার সঙ্গে। এরপর একে একে কবরী, শাবানা, ববিতার সঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ করেন। তবে রাজ্জাক-কবরী জুটি এক অনবদ্য সৃষ্টি। যুগের পর যুগ শেষ হলেও এই জুটির খ্যাতি শীর্ষে।
চলচ্চিত্র জীবনে পাঁচ শতাধিক ছবিতে অভিনয় করলেও তার তিনশ’ ছবি রয়েছে যেখানে তাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে গল্প। বাংলার পাশাপাশি, উর্দু চলচ্চিত্রও রয়েছে তার ক্যারিয়ারে। নায়ক হিসেবে রাজ্জাক সবশেষ অভিনয় করেন ১৯৯৪ সালে ‘অন্ধবিশ্বাস’ চলচ্চিত্রে। এরপর দীর্ঘ পাঁচ বছর চলচ্চিত্র থেকে বিরতি নেন। ফিরে আসেন সুপারহিট ‘বাবা কেন চাকর’ ছবির মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের পাশাপাশি তখন তিনি কলকাতার চলচ্চিত্রে অভিনয় করা শুরু করেন। দুই বাংলার চলচ্চিত্রে তিনিই ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক।
ব্যক্তিগত জীবনে রাজ্জাকের তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে জনপ্রিয় অভিনেতা বাপ্পারাজ ও ছোট ছেলে বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় নায়ক সম্রাট। চলচ্চিত্র জীবনে তিনি বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। পাঁচবার তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ পেয়েছেন নানা সম্মাননা। এরপর ভক্তদের কাঁদিয়ে ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট সন্ধ্যায় চির বিদায় নেন নায়করাজ রাজ্জাক।