অনলাইন ডেস্ক :
প্রতিটি দেশের কূটনৈতিক শিষ্টাচার আছে। ভিয়েনা কনভেনশন অনুসারে কিছু নিয়ম-নীতি মেনেই বিভিন্ন দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যা সার্বজনীন। কিন্তু কখনো-কখনো বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ এই সব নিয়মের তোয়াক্কা করে না। নিজ দেশের স্বার্থ হাসিলে এবং আজ্ঞাবহ সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন ধরনের অপচেষ্টায় তারা লিপ্ত হয়। এরই অংশ হিসেবে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস তাদের ফেসবুক পেজে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে পোস্ট করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে দেশটির দূতাবাসের এমন আচরণ অনেকটা রাজনৈতিক সংগঠনের মতো।
সম্প্রতি বাংলাদেশের আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব) নিয়ে ‘ডেথ স্কোয়াড: ব়্যাবের ভেতরের কথা’ শিরোনামে জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করে। ওই তথ্যচিত্র নিজেদের ফেসবুক পেজে শেয়ার করে মার্কিন দূতাবাস। একইসঙ্গে তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথাও বলছে।
বাংলাদেশ সরকার এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়ে সংবাদ প্রচার হতেই পারে। তবে বিষয়টিকে কোনো দেশের দূতাবাস যদি ফেসবুকের মতো জায়গায় তুলে ধরে মন্তব্য করে, তখন তা কূটনৈতিক শিষ্ঠাচার পরিপন্থী হয় বলে মনে করেন সিনিয়র সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত।
সব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সমান আচরণ করে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। প্রশ্ন রেখে অজয়দাশ গুপ্ত আরও বলেন, বাংলাদেশের বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিষয়ে ধনী দেশগুলো এমন আচরণ করে। ফিলিস্তিনিদের ওপর প্রতিনিয়ত হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। এগুলো নিয়ে কত প্রতিবেদন হচ্ছে, সেগুলো কী যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন দেয়? লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণভয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে, বহুলোককে হত্যা করা হয়েছে, তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সেগুলো কী মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিজেদের ওয়েবসাইটে দেয়?
ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যায়িত করে মার্কিন দূতাবাসের অতি আগ্রহ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। বার্তা সংস্থা ইউএনবির সম্পাদক ফরিদ হোসেন বলেন, কোনো দেশে যুক্তরাষ্ট্রের অপছন্দের সরকার থাকলে, তারা যে সরকার ব্যবস্থা চায়, সেটি যদি না হয়, তাহলে সে সরকারকে কীভাবে হটাতে হবে; সেটা আমরা দক্ষিণ আমেরিকা ও আরব বিশ্বে দেখেছি।
অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা নষ্ট করতে সুইডেনে বসে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন তাসনিম খলিল। নিজের অপকর্ম ঢাকতে ২০০৭ সালে তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত বলেন, ‘যারা এসব করেছে, তারা বাংলাদেশবিরোধী প্রচারে জড়িত। তাদের প্রতিবেদনকে আদর্শ হিসেবে ধরে নেয়ার কারণ নেই।’
এই সিনিয়র সাংবাদিক আরও বলেন, ‘জঙ্গি মোকাবিলা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় র্যাব সফল ভূমিকা রেখেছে। ভুলভ্রান্তি যেকোনো বাহিনীতে থাকতে পারে। আমেরিকার সেনাবাহিনী নানা দেশে অপরাধ করছে। এসব বাহিনী অপরাধ করলে তার প্রতিকারও সেই দেশে আছে।’
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে সরাসরি জড়িতদের বিচারের বিরোধিতা করে নিজের ব্লগে লেখালেখি করে আলোচনায় এসেছিলেন ড. কামাল হোসেনের জামাতা ডেভিড বার্গম্যান। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যাসহ সব ধরনের অপকর্মে সম্পৃক্তদের বিচার শুরু হলে তা নিয়ে নেতিবাচক লেখালেখিও করেন বার্গম্যান।
ড. কামাল হোসেনের জামাতা ও ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। যে কারণে নেত্র নিউজ চালাতে ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট অফ ডেমোক্রেসি (এনইডি) থেকে একটি মোটা তহবিল পাচ্ছেন বার্গম্যান।
নেত্র নিউজ এনইডির দায়িত্ব পালন করছে। তারা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছামতো শাসন পরিবর্তনের ক্রিয়াকলাপে জড়িত মিডিয়া ও অন্যান্য সামাজিক প্ল্যাটফর্মের জন্য বাজেট সংগ্রহ করে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে ‘গণতন্ত্রকে’ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম পদাতিক সেনা হচ্ছে দ্য ন্যাশনাল ইনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্র্যাসি (এনইডি)। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে এই সংস্থাটিকে ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে পুতুল সরকার বসিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে র্যাব নিয়ে জার্মানিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন এ দাবি করেন।