হোম অন্যান্যসারাদেশ যুবলীগ নেতা জামাল হত্যা, গ্রেফতারদের একজন আ.লীগ নেতা

অনলাইন ডেস্ক :

আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেনকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব )। র‌্যাবের দাবি মামলার তিন আসামিকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এই তথ্য দিয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের এক নেতাসহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

রোববার (৭ মে) বেলা ১১টায় প্রেস ব্রিফিং করে এ সব তথ্য জানান র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা।

গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- তিতাস উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদার (৪০), উপজেলার জিয়ারকান্দি গ্রামের খুরশিদ মিয়ার ছেলে মো. ইসমাইল (৩৬) ও দাউদকান্দি উপজেলার গোপচর গ্রামের মৃত বজলুর রহমানের ছেলে শাহ আলম পা কাটা আলম (৩৬)। আসামিদের দাউদকান্দি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। 
 
এরমধ্যে ইসমাইল ও শাহ আলম স্থানীয় রাজনীতিতে সোহেল শিকদারের অনুসারী বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া শনিবার (৬ মে) মধ্যরাতে আসামিদের বহনকারী মাইক্রোবাসচালককে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গাড়িটিও জব্দ করে পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডে  অংশ নেয়া ছয় আসামি বিদেশে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে বলে র‍্যাব জানায়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে.কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা জানান, সব তথ্য উপাত্ত, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, মাঠ পর্যায় হতে প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত ৬ মে দিনে ও রাতে অভিযান পরিচালনা করে চট্টগ্রাম জেলার আগ্রাবাদ এলাকা, ঢাকা জেলার রায়েরবাগ এলাকা ও কালশী, মিরপুর এলাকা হতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এজাহারনামীয় ৩ নম্বর আসামি মো. ইসমাইল, ৪ নম্বর আসামি মো. শাহীনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদার এবং ৭ নম্বর আসামি শাহ আলম ওরফে পা কাটা আলমকে গ্রেফতার করা হয়।

এরদের মধ্যে ইসমাইলের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলাসহ মোট তিনটি, শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে তিন হত্যাসহ মোট ৯টি ও মো. শাহ আলমের বিরুদ্ধে একটি হত্যাসহ মোট ১০টি মামলা রয়েছে।
 
এজাহারনামীয় আসামি সুজন, আরিফ, বাদল, অলি হাসান ও কালা মনির বিদেশে পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। 
 
বিদেশে অবস্থানরত আসামিদের দেশে ফেরাতে এবং হত্যার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে  র‌্যাব-১১ এর প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে বলে জানান লে.কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা।
এ দিকে ঘটনাস্থল ও ঘটনাস্থলের আশেপাশে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, বোরকা পরিহিত তিন অস্ত্রধারী স্বাভাবিক পথচারীর বেশে ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় ইসমাইলকে এলাকার পূর্ব পরিচিত কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে একটি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বোরকা পরিহিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে অতর্কিত জামালকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় জামাল একজনকে জাপটে ধরে ফেলেন। তখন বোরকা পরিহিত আরেক সন্ত্রাসী জামালকে লাথি দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় এবং আরেকজন পিস্তল দিয়ে ভিকটিম জামালকে খুব কাছ থেকে মাথায় ও বুকে গুলি করে দ্রুত পালিয়ে যায়।
র‍্যাব জানায়, গত ৩০ এপ্রিল রাতে রোববার (৩০ এপ্রিল)  রাত সাড়ে ৭টায় দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর পশ্চিম বাজার এলাকার ভাড়া বাসা থেকে বের হয়ে নামাজে যাচ্ছিলেন জামাল। এমন সময় বোরকা পড়া অবস্থায় থাকা তিনজন এসে বাজারের সবার সামনে এলোপাতাড়ি গুলি করে দৌড়ে পালিয়ে যায়। জামাল গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যান।

গুলির শব্দ শুনে আশপাশ ও বিভিন্ন বাড়ি থেকে মানুষ বের হয়ে আসে। গুলির শব্দ শুনে জামালের শ্যালিকা বাড়ি থেকে বের হয়ে এসে তাকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর অন্যদের সহায়তায় দ্রুত তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে জামালকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। ঢামেকের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

হত্যাকাণ্ডের  ঘটনায় গত ০২ মে নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখসহ ৭/৮ জন অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে দাউদকান্দি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন