হোম এক্সক্লুসিভ যমুনার পানিতে তলিয়ে ২৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট

জাতীয় ডেস্ক:

উজানের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জামালপুর জেলার যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার দেওয়ানগঞ্জ, বকশিগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ি উপজেলার যমুনার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইসলামপুর উপজেলার ২৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। এছাড়াও দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলার প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। যমুনা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ১৩২৮ হেক্টর ফসলি জমি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত।

শুক্রবার (০১ সেপ্টম্বর) সকালে সরেজমিনে দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, যমুনার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। যমুনা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারীদের অনেকের ঘরে পানি ঢুকেছে। এসব এলাকার কিছু কিছু রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও ইসলামপুর উপজেলার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে। নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানায়, জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার দেওয়ানগঞ্জ, বকশিগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ি উপজেলার যমুনা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

জেলা প্রশাসনের কার্যালয় সূত্র জানায়, বন্যার কারণে জেলার ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত ওই ১৭টি ইউনিয়নের ৮ হাজার ২৩০টি পরিবারের প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ওই দুই উপজেলায় দুইটি আশ্রয়ণকেন্দ্রে ১০৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া ইসলামপুর উপজেলার দুইটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা ও ২৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

বন্যার কারণে ইসলামপুর উপজেলায় চিনাডুলী উচ্চ বিদ্যালয়, সাপধরী উচ্চ বিদ্যালয় ও সাপধরী মাদ্রাসাসহ ওই উপজেলার ২৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে জেলার দেওয়ানগঞ্জ, বকশিগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়িসহ ৬টি উপজেলার ১৩২৮হেক্টর রোপা আমনের ক্ষেত বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। তারমধ্যে ৪১০ হেক্টর রোপা আমন সম্পূর্ণরূপে ও ৯১৮ হেক্টর রোপা আমন আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে। অন্য কোনো ফসল এখনও পানিতে নিমজ্জিত হয়নি।

ইসলামপুর উপজেলার পাথর্শী ইউনিয়নের ঢেঙ্গারগড় এলাকার মো.মুখলেছুর রহমান বলেন, ‘বাড়ির চারপাশে বন্যার পানি। রান্না করে খাওয়ার উপায় নাই। চুলাতে পানি উঠে গেছে। আগলা চুলাই কোনো রকমে রান্না করে জীবন চলতেছে। এদিকে ফসলের খেতে পানি ওঠে সব ফসল নষ্ট করে ফেলেছে। দ্রুত পানি না কমলে আমাদের দুঃখের শেষ থাকবে না।’

ওই উপজেলার চিনাডুলী ইউনিয়নের বামনা এলাকার রওশন আরা বলেন, ‘ক্ষেত-খামারের সব ফসল তলিয়ে গেছে। ধান, শাক-সবজি সব ফসলের খেতে পানি ওঠেছে। রাস্তা-ঘাটে পানি। চলাফেরা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।’

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো. ইমরান আহমেদ সময় সংবাদকে বলেন, ‘যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। ওই সকল বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় বরাদ্দকৃত ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আমি আগামীকাল (০২ সেপ্টেম্বর) দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করবো। বন্যা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন