হোম জাতীয় মূল্যস্ফীতি কমছে না, ফেব্রুয়ারিতে বাজেট সংশোধন

মূল্যস্ফীতি কমছে না, ফেব্রুয়ারিতে বাজেট সংশোধন

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 9 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক:
প্রতি বছর মার্চে বাজেট সংশোধন করলেও এবার কিছুটা আগেভাগে সেটা করতে চায় সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারি মাসে বাজেট সংশোধন করবে। এক্ষেত্রে রাজস্ব বাজেট কমানো খুব একটা সম্ভব হবে না। ফলে উন্নয়ন বাজেট কমিয়ে বাজেট সংশোধন করতে হবে। এদিকে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি খুব একটা কমানো যাচ্ছে না।

সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ তথ্য জানান।

উপদেষ্টা বলেন, সংশোধিত বাজেট সাধারণত মার্চ মাসে করা হয়। তবে আমরা আরও আগে এটা সংশোধন করতে চাই। এ জন্য কিছু প্রাক্কলন প্রয়োজন পড়বে। যেমন- জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে কতটা কর সংগ্রহ হচ্ছে, বৈদেশিক সাহায্য কতটা পাওয়া গেছে—এর ওপর নির্ভর করবে সহনীয় পর্যায়ে বাজেটের ঘাটতি রেখে উন্নয়ন বাজেটের আকার ঠিক করবো। আমাদের ওপর সমন্বয়ের ভারটা এসে পড়েছে—উন্নয়ন বাজেটের ওপর, অন্য জায়গাটা ঠিক রেখে। কারণ সামগ্রিক স্থিতিশীলতার জন্য এটা করতে হবে। বেশি ঘাটতি বাজেট করা যাবে না।

তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারীদের বহু ধরনের দাবি-দাওয়া মেটাতে গিয়ে কিছু কিছু বেতন-ভাতা বাড়ানোর বিষয় আছে। মহার্ঘ্য ভাতা বাড়ানোর বিষয় আছে। কাজেই রাজস্ব খাতের ব্যয় কমিয়ে রাখা খুব কঠিন। সবকিছু আমাদের ঘাড়ে এসে পড়েছে যে উন্নয়ন বাজেট কমাতে হবে। তবে উন্নয়ন বাজেটের আকার ছোট হলেই প্রবৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকর সেটা কিন্তু নয়। এক বছরের বড় বিনিয়োগ থেকে থাকলেও উৎপাদন যেকোনও খাতে বাকি থাকে। আমাদের দেশে দারিদ্র্য দূরীকরণ, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থানের জন্য খুব বেশি বিনিয়োগের দরকার হয় না। দরকার পড়ে এমন প্রকল্প নেওয়া যেটা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। জনগণের উপকারে আসে। বাজেটের আকার কতদূর হলো তার থেকে বড় কথা হচ্ছে—প্রকল্পগুলো মানুষের কাজে আসছে কিনা।

উপদেষ্টা বলেন, একটা বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি তো খুব একটা কমানো যাচ্ছে না। একটু একটু কমানো যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি এখনও কমছে না। কমিয়ে আনতে হবে। এটা কমিয়ে এনে সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। তবে মূল্যস্ফীতি আর মূল্যস্তর কিন্তু এক কথা নয়। আলুর দাম অনেক বেশি। কিন্তু আলুর দাম যদি এখানেই থাকে, তাহলে কিন্তু আলুর ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি শূন্য। এটা হয়তো অনেকে বোঝেন না।

তিনি বলেন, রেমিট্যান্স বাড়ছে এটা খুবই ভালো খবর। বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য ফিরে এসেছে। কেবল মূল্যস্ফীতিটা এখনও সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসছে না। মূল্যস্ফীতি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সেক্টরে কাকে কত ভর্তুকি দিতে হবে, কোথায় বেতন ভাতা বাড়াতে হবে, এটা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। আমরা প্রকল্প ঠিকভাবে নেওয়া হয়নি—এমন প্রকল্পগুলো কাটছাঁটে ব্যস্ত ছিলাম। এখন সময় এসেছে মুদ্রানীতি, বাজেটনীতি ও এডিপি সমন্বয় করে পুরো বাজেটের আকারটা দেখবো। সংশোধিত বাজেট তৈরি করবো। এটা জানুয়ারির শেষের দিকে হওয়া ভালো। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে যদি একটা সংশোধিত বাজেট দেওয়া যায়, যাতে সবারই লাভ হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক তার মুদ্রা সংকোচন নীতি এবং অর্থ মন্ত্রণালয় জানবে বাজেটের ঘাটতি কোথায় রাখতে হবে, কতটা বৈদেশিক সাহায্য লাগবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় তার হাতে থাকা প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করার পরিকল্পনা নিতে পারবে। কর্মসংস্থান না বাড়ানো গেলে জনগণের দুর্ভোগ কমবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

চিলমারী এলাকায় (রমনা, জোড়গাছ, রাজিবপুর, রৌমারী, নয়ারহাট) নদী বন্দর নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পের প্রসঙ্গ টেনে উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, অনেক প্রকল্প রয়েছে যেটা মানুষের জন্য ভালো এবং অল্পতে অনেক লাভবান হওয়া যায়। এমন অনেক প্রকল্প ফেলে রাখা হয়। আবার অনেক বড় বড় প্রকল্প নিয়ে নেওয়া হয়। চিলমারী এলাকায় নদীবন্দর নির্মাণ প্রকল্পটাকে আমাদের ভালো প্রকল্প মনে হয়েছে। কিন্তু এটা অনেক দিন ধরে পড়ে ছিল। নৌমন্ত্রণালয় এটা খুঁজে বের করেছে। আমরা এটাকে সচল করেছি। কারণ আমরা চাই অল্প সময়ের মধ্যে কিছু ভালো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে, যেটা জনগণের কাজে লাগে। আমরা চাই ছোট ছোট প্রকল্প, সেটি মানুষের বেশি কাজে লাগে।

সব মন্ত্রণালয়ের মতো পরিবেশ মন্ত্রণালয়ও অদক্ষ মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, প্রায় সব প্রকল্পেই পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লেষ থাকে। কোনও প্রকল্প পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে তারা কিছু দিন পর হ্যাঁ অথবা না বলে। আমাদের মতো ঘন বসতি এলাকার দেশে যেকোনও প্রকল্প নিলে পরিবেশগত ক্ষতি কিছু হবেই। বাস্তবতা হলো, পরিবেশের ক্ষতি কতদূর হচ্ছে তার বিপরীতে লাভ কতটা হচ্ছে, সেটি দেখতে হবে। বিদ্যমান পদ্ধতিতে প্রকল্প প্রণয়নের পর পরিবেশ অধিদফতরে পাঠানো হয়, তারা কিছু দিন পর হ্যাঁ অথবা না বলে দেয়। এটার মাধ্যমে প্রকল্পটা বাস্তবে পরিবেশবান্ধব কিনা বা লাভজনক কিনা সেটি তো নিশ্চিত হওয়া যায় না। এজন্য আমরা প্রস্তাব করেছি—পরিকল্পনা কমিশন থেকে প্রকল্প প্রণয়নের সময় পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্তকরণ। এটা হলে পরিবেশ অধিদফতর অতটা গুরুত্বপূর্ণ হবে না। প্রকল্পগুলো এমনভাবে প্রণয়ন করা হবে, যাতে পরিবেশের জন্য সব চেয়ে কম ক্ষতি হয়।

কুমিল্লা অঞ্চলের সেচ প্রকল্প প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, প্রকল্পগুলো দেখে মনে হয়—ওপর থেকে তৈরি করা হয়েছে। কারা এর সুবিধাভোগী তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে কিনা? তারা কী ধরনের সেচ ব্যবস্থা চায়, সেটা বিবেচনা না করে প্রকল্প হবে! কারণ সেচ প্রকল্প সনাতনী প্রকল্পের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ রেখে আধুনিক করতে হবে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা ছাড়া বেশি সুফল পাওয়া সম্ভব নয়।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রকল্প “ভোলা নর্থ গ্যাস ক্ষেত্রের জন্য ৬০ এমএমএসসিএফডি ক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেস প্লান্ট সংগ্রহ ও স্থাপন” প্রকল্প, “রশিদপুর-১১ নম্বর কূপ (অনুসন্ধান কূপ) খনন” প্রকল্প ও “২ডি সাইসমিক সার্ভে ওভার এক্সপ্লোরেশন ব্লক ৭ অ্যান্ড ৯” প্রকল্পের প্রসঙ্গ টেনে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, এই প্রকল্পগুলো আমাদের অগ্রাধিকারভুক্ত। প্রাকৃতিক গ্যাসের অনুসন্ধান, উত্তোলন এবং যেগুলো আবিষ্কৃত করা হয়েছে, তা প্রক্রিয়াকরণ ও কাজে লাগানো। এই প্রকল্প তিনটি থেকে যে ধারণা হয়েছে তা হলো— এগুলো কখন পাস হয়েছে। এটা ৭/৮ বছর আগে শুরু হয়েছে। এরমধ্যে একটি কাজ সব সম্পন্ন করে উৎপাদন পর্যায়ে এসে থেমে রয়েছে। প্রকল্পগুলো দেখে আমার মনে হলো, বাংলাদেশের অনেক জায়গায় গ্যাসের মজুত রয়েছে। বাপেক্সের মতে, এটা থেকে গ্যাস পাওয়া সম্ভব। আমার প্রশ্ন হলো, এই গ্যাসের দিকে না তাকিয়ে কেন এলএনজি বা কয়লা আমদানির দিকে এত বেশি ঝুঁকে গেলাম। হয়তো দরকার হতো। কিন্তু নিজেদের যে গ্যাস আছে, সেটা কাজে লাগাতে আরও বেশি অনুসন্ধান করা উচিত ছিল। সব থেকে মনে হয়েছে, গ্যাস খাতকে অনেকদিন ধরে অবহেলিত রাখা হয়েছে।

বর্তমান সরকার নিয়মের মধ্যে থেকে কূপ খননের অনুমোদন দিতে চায় বলে জানান উপদেষ্টা।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন