প্রেসবিজ্ঞপ্তি :
শোককে শক্তিতে পরিনত করে প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের ভাষায় সকল দুর্নীতি, অনিয়ম, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ,সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ রুখে দেওয়ার মধ্যেই রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুপ্ত স্বপ্ন। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন করে আবারও সংগঠিত হতে হবে। দেশে গনতন্ত্রের অবিরাম ধারা প্রসারিত করে এগিয়ে যেতে হবে। একইসাথে যারা বাংলাদেশের স্থপতিকে সপরিবারে হত্যা করেছিল তাদের বিচার বাস্তবায়নেরও দাবি এ দেশের মানুষের।
রোববার সাতক্ষীরা সাংবাদিক ঐক্য আয়োজিত ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুর ৪৬তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় একথা বলেন সাংবাদিক ঐক্য সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
তারা বলেন, স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাংলাদেশ নামক এই ভুখন্ডকে আবারও মিনি পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্র হয়েছিল। দেশী ও বিদেশী ঘাতকরা বহু কষ্টে অর্জিত বাঙালির স্বাধীনতাকে লন্ডভন্ড করে দিয়ে বাঙালি জাতিকে আরও পেছনে ঠেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। বঙ্গবন্ধু এমন ষড়যন্ত্রের আঁচ পেয়ে নিজেই অনেকটা বিচলিত ছিলেন। আর এ কারনেই তিনি সকলকে সতর্ক করার পাশাপাশি নিজের কথা একেবারে ভাবেননি। এর ফল হিসাবে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার স্থপতির রক্ত দেখতে হয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে ২১ বছর ধরে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ওপর এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ১৯৯৬তে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে জাতির জনক হত্যার বিচার কাজের সূচনা করেন। ২০১০ সালে বিচারের মাধ্যমে পাঁচ ঘাতকের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। এই ঘাতকদলের আরও পাঁচ সদস্য এখন পর্যন্ত বিদেশে পালিয়ে রয়েছে। তাদের ধরে এনে বিচার বাস্তবায়নের জোর দাবি করে বক্তারা বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন হত্যার বিচার মাত্র ৩ মাসে হয়েছিল। জন এফ কেনেডি হত্যার বিচার স্বল্পতম সময়ের মধ্যে হয়েছিল। ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী হত্যাকারীর বিচার হয়েছিল ২ বছরে।
এছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী হত্যার বিচার হয়েছিল ৪ বছরের মাথায়। এমন সব তথ্য উল্লেখ করে সাংবাদিক বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার বিচার হতে সময় লেগেছিল ৩৫ বছর।
তারা বলেন, এই সুযোগে দেশে ফের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি, দুর্নীতিবাজ এবং জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে যায়। তাদের এই উত্থানকে ঠেকাতে না পারলে বাঙালি জাতি আবারও পেছনে ফিরে যাবে বলে উল্লেখ করেন তারা।
১৫ই অগাস্ট রাতের ভয়াবহ ঘটনাবলী, তার পূর্ব এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের অবস্থার কথা বিভিন্নভাবে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। একটি উন্নত সংবিধান পেয়েছি। অথচ দেশকে এখন পর্যন্ত ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত করতে পারিনি। এখন বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব হবে দেশকে সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কবল থেকে রক্ষা করে সমাজকে এগিয়ে নেওয়া।
শোক দিবস অনুষ্ঠানের আগে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয় এবং বঙ্গবন্ধু সহ ১৫ই অগাস্ট শাহাদাৎ বরনকারী সকলের রুহের মাগফেরাত কামনা করা হয়।
প্রবীণ সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুল ওয়াজেদ কচির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শোক দিবসের আলোচনা সভায় আরও অংশগ্রহণ করে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম, সাবেক সহসভাপতি ও দক্ষিণের মশাল সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাপ্তাহিক সূর্যের আলো সম্পাদক ওয়ারেশ খান চৌধুরী, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির আবুল কাশেম, দেশ টিভির শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন, চ্যানেল ২৪ এর আমিনা বিলকিস ময়না, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল জলিল, কবি ও সাহিত্যিক শাজাহান সিরাজ, দৈনিক প্রবাহর এ্যাড. খায়রুল বদিউজ্জামান, ডিবিসি টিভির এম জিল্লুর রহমান, সাপ্তাহিক সূর্যের আলোর মুনসুর আহমেদ, দৈনিক পত্রদূতের আব্দুস সামাদ, দৈনিক পত্রদূতের মোঃ শহীদুল ইসলাম, সুদয় মন্ডল প্রমুখ সাংবাদিক।
সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, দেশে এখন নতুন করে সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ মাথা উঁচু করার চেষ্টা করছে। তারা তালেবানদের অনুসারী এমন জাহির করছে। এই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে প্রতিহত করার জন্য সরকারকে আরও শক্ত ভ‚মিকা নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন তারা। তারা বলেন ১৫ অগাস্টের শোককে শক্তিতে পরিনত করে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ভাষা প্রয়োগ করতে হবে।