খেলাধূলা ডেস্ক:
কলকাতার ক্রীড়া সংগঠক শতদ্রু দত্তের আমন্ত্রণে কলকাতা সফরে আসার কথা ছিল এমি মার্টিনেজের। কিন্তু বিশ্বকাপের সময় বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন মুগ্ধ করে তাকে। তাই কলকাতা সফরের সময় নিজে থেকেই বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। সোমবার (৩ জুলাই) কলকাতা সফরের আগে সংক্ষিপ্ত সফরে বাংলাদেশে পা রেখেছেন এমি। বিশ্বকাপজয়ী এই তারকাকে সাধারণ সমর্থকরা দেখার সুযোগ না পেলেও সুযোগ পেয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা।
৩৬ বছর ধরে অপ্রাপ্তির বেদনায় পোড়া আর্জেন্টাইন সমর্থকরা গত বছর পেয়েছে বিশ্বকাপ শিরোপার স্বাদ। লিওনেল মেসি জাদুকরি ফুটবলে আর্জেন্টিনাকে এনে দিয়েছেন তাদের ইতিহাসের তৃতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা। তবে মেসির পাশাপাশি দারুণ ভূমিকা রেখেছেন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজও। তাই বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষক হিসেবে জিতেছেন গোল্ডেন গ্লাভসও।
আক্ষেপ ঘুচানোর সেই নায়ক মার্টিনেজ এখন বাংলাদেশে। তাই আনন্দ বয়ে যাচ্ছে আকাশি নীল সমর্থকদের মধ্যে। তবে সাধারণ সমর্থকরা পাচ্ছেন না প্রিয় তারকাকে দেখার সুযোগ। তবে নিমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা পেয়েছেন প্রিয় তারকাকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ।
মার্টিনেজকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে ফান্ডেডনেক্সট নামক আইটি কোম্পানি। সোমবার সকাল সাড়ে নয়টার কিছু পরে মার্টিনেজ প্রতিষ্ঠানটির উত্তর বাড্ডাস্থ অফিস পরিদর্শনে আসেন। আয়োজকরা মার্টিনেজকে বরণ করে নিতে আমন্ত্রণ জানায় জাতীয় সংসদের সদস্য ও জাতীয় দলের সাবেক তারকা মাশরাফীকে।
নেক্সট ভেঞ্চার কার্যালয়ে প্রায় একঘণ্টা সময় কাটান ম্যাশ। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি দীর্ঘ পোস্টে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন জাতীয় দলের এই সাবেক অধিনায়ক।
আর্জেন্টিনার কট্টর সমর্থক মাশরাফি। কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে বিশ্বকাপ জিততে দেখাটা ছিল তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ। মাশরাফী বলেন, ‘এমিকে ভালো লাগার শুরু কোপা আমেরিকা থেকেই, যেখানে সে টাইব্রেকারে দুটি গোল আটকে দিয়ে দলকে জয় এনে দিল। কত বছর পর বড় কোনো শিরোপা জিতল আর্জেন্টিনা! লিওনেল মেসিও পেল দেশের হয়ে প্রথম বড় ট্রফির স্বাদ। স্বাভাবিকভাবেই পাখির চোখে তাকিয়ে ছিলাম বিশ্বকাপের দিকে। কিন্তু সৌদি আরবের সাথে হেরে মনে হয়েছিল, আরেকটি বিশ্বকাপও হয়তো শেষ হবে হতাশায়। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়ানো এবং পরে বিশ্বকাপ জয় দেখতে পারাটা ছিল অনেক দিনের লালিত স্বপ্ন পূরণের মতো।’
এমিকে কাছে পেয়ে তাই মাশরাফী দারুণ উচ্ছ্বসিত, ‘সেই জয়ের অন্যতম নায়ক এমির সঙ্গে দেখা হলো আমাদের এই ঢাকায়। খুব অল্প সময়ের জন্য দেখা, কিন্তু দারুণ এক অনুভূতি। বিশ্বকাপ জয়ী দলের গোলকিপার চোখের সামনে! সে তো জানে না, আমার এবং আমার মতো আরও কত কোটি মানুষের কত বছরের অপেক্ষা শেষ হলো, যেদিন তার ঐ হাত ধরেই আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয় করল!’
বিশ্বকাপ ফাইনালের একদম শেষ মুহূর্তে কোলো মুয়ানির শট অবিশ্বাস্যভাবে ঠেকিয়েছিলেন মার্টিনেজ। সেই শটটি গোল হলে আর্জেন্টিনার অপেক্ষার প্রহর হতো দীর্ঘ। আর্জেন্টিনার কোটি কোটি সমর্থদের হৃদয় ভেঙে যেত। কিন্তু আকাশি-সাদা সমর্থকদের স্বপ্নের ত্রাতা মার্টিনেজ সেই পায়েই আঁকিয়েছেন ট্যাটু, ধরে রেখেছেন সেদিনের স্মৃতি।
মাশরাফির ভাষায়, ‘আজকে সে ইন্টারভিউয়ের মাঝেই একবার ট্রাউজার উঠিয়ে দেখাল, পায়ের ঠিক সেই জায়গায় একটি ট্যাটু করিয়েছে, বিশ্বকাপ ফাইনালে শেষ বাঁশির ১৮ সেকেন্ড আগে কোলো মুয়ানির শটটি আটকিয়ে দিয়েছিল যে জায়গা দিয়ে। এক সেকেন্ডের জন্য মনে হলো, আসলে বিশ্বকাপটাতো ওখানেই জিতে নিয়েছে।’
মাশরাফীর আনন্দ আরও বেড়ে গেছে তার সন্তানদের সঙ্গে এমির দেখা হওয়ায়। মাশরাফী লিখেছেন, ‘আজকে আসলে বেশি ভালো লাগছে আমার সন্তানদের জন্য। যখন বললাম, ‘এমি আসছে, তোমাদের কি দেখা করার ইচ্ছা আছে?’ ওরা লাফাচ্ছিল। সবশেষ দুটি দিন ওরা ঠিকমতো ঘুমাতে পারছিল না এমিকে দেখবে বলে। আজকে এমির সঙ্গে দেখা হওয়ার পর বললাম, ‘বাচ্চারা তোমার অটোগ্রাফ নিতে চায়।’ সে এত আন্তরিকতা দেখাল, এক কথায় অসাধারণ। এমনকি সে ছবিও তুলে দিল ওদের সঙ্গে। এখন তারা মহাখুশি, আর ওদের খুশিতে আমিও এখন মহাখুশি।’
লেখার শেষদিকে এসে মাশরাফী বাংলাদেশে স্বাগত জানান বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষককে। সেই সঙ্গে একদিন বাংলাদেশের বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্নের কথাও জানান, ‘এমি, আপনাকে স্বাগত এই বাংলার মাটিতে। এখানে আপনাদের অগুনতি ভক্ত আছে, যুগ যুগ ধরে। আশা করি, আপনারও ভালো লাগছে এই মাটিতে পা রেখে।’
‘পাশাপাশি এটাও ভাবি, সত্যি বাংলাদেশ একদিন বিশ্বকাপ ফুটবলে কোয়ালিফাই করবে আর আমরা আমাদের পতাকা নিয়ে মিছিল করব, ইনশাল্লাহ। অনেকের কাছে এখন এটা অবাস্তব মনে হতে পারে। তবে আমি বিশ্বাস করি, কাজটা কঠিন, খুব কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। স্বপ্ন পূরণের সেই দিনটির অপেক্ষায় আছি, ইনশাল্লাহ।’