হোম রাজনীতি মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন করাই সরকারের লক্ষ্য: প্রধানমন্ত্রী

রাজনীতি ডেস্ক:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা কেউ দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন কোনো কাজ করেনি। মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন করাই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য। সাড়ে ১৪ বছরে আজকের বাংলাদেশ, বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) মুন্সিগঞ্জের মাওয়াতে পদ্মা সেতু হয়ে রেল চলাচল উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর যখন আমরা সরকার গঠন করি তখন রেলকে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আলাদা মন্ত্রণালয় করে বাংলাদেশে রেল যোগাযোগের যেন ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে, সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করি। সাড়ে ১৪ বছরে আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। ট্রান্স এশিয়ান রুটের সঙ্গে বাংলাদেশের রেলকে যুক্ত করাই এ সরকারের লক্ষ্য। এজন্য গত সাড়ে ১৪ বছরে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু হয়েছিল। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও স্বাধীনতার চেতনাকেও ধ্বংস করা হয়েছিল। জনগণের ভাতের অধিকার ও ভোটের অধিকারও কেড়ে নেয়া হয়। আবার ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এদেশের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার। সেই লক্ষ্য নিয়েই ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।

শুধু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা নয়, এ রেলসেতুর মধ্য দিয়ে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল, ঝালকাঠী এবং পটুয়াখালীতেও রেল সংযোগ নেবার পরিকল্পনা আছে বলেও জানান তিনি।

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা অবাধ নির্বাচনের দাবি করেন; তাদের মনে রাখা উচিত আওয়ামী লীগই অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে জানে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে এমন প্রত্যয় জানিয়ে বিএনপির ধ্বংসাত্মক রাজনীতির কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। একজন ব্যক্তি একটা ব্যাংকের এমডি থাকতে পারবে না। যদিও তিনি জগৎ বিখ্যাত। তার কারণে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করবে না, বলেছিল বিশ্বব্যাংক। বলেছিলাম, নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করবো, করেছি।’

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য দেশকে আরও উন্নত করা। ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। আড়াই কোটি শিক্ষার্থী বৃত্তি-উপবৃত্তি পাচ্ছে। যাতে দেশটা এগিয়ে যায়। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, এখন আমাদের লক্ষ্য, স্মার্ট বাংলাদেশ। প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। ল্যাব করে দিয়ে কম্পিউটার শিক্ষা দিচ্ছি। লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং কর্মসূচির মাধ্যমে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সারকে প্রশিক্ষিত করছি। তারা ইউনিয়নে বসে দেশ বিদেশের কাজ করে উপার্জন করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘রেলের সার্বিক উন্নয়নে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। আমরা সাড়ে ১৪ বছরে ৮৭৩ কিলোমিটার নতুন রেল লাইন নির্মাণ করেছি, ২৮০ কিলোমিটার মিটারগেজ রেলপথকে ডুয়ালগেজে রূপান্তর করা হয়েছে। ১৩৯১ কিলোমিটার লাইন পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। এক হাজার ৩৭টি নতুন রেল সেতু নির্মাণ ও ৭৯৪টি রেল সেতু পুনর্নির্মাণ করেছি। ১৪৬টি নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ ও ২৩৭টি স্টেশণ ভবন পুনর্নির্মাণ করেছি। অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় গুরুত্ব দিয়েছি। আশা করি, ৩ থেকে ৪ বছরেরর মধ্যে বাংলাদেশে রেল যোগাযোগ আরও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।’

তিনি বলেন, ২১ বছর পর আমরা সরকার গঠন করি। তখন থেকেই জনগণের সেবা শুরু করি। এর আগের ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা কেনো মানুষের জন্য কিছু করতে পারেনি? আসলে তারা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না। তারা চায় না, স্বাধীন দেশটি এগিয়ে যাক।

এর আগে সকাল ১০টা ১০ মিনিটে সড়ক পথে গণভবন থেকে মাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন শেখ হাসিনা। সকাল ১০টা ৫৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী মাওয়া পৌঁছান। এরপর সুধী সমাবেশে বক্তব্য শেষে এটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর টিকিট কেটে ভাঙ্গায় যান প্রধানমন্ত্রী।

দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের আরেকবার দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হলো পদ্মা সেতু হয়ে রেল চলাচলে। দক্ষিণের পথে নতুন রেলপথটি ঢাকার গেন্ডারিয়া, কেরানীগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাদারীপুর–ফরিদপুর মিলেছে। আগামী বছর এ রেলপথের বাকি অংশ ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন