জাতীয় ডেস্ক:
কতিপয় চিকিৎসক এবং সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ এবং অবহেলায় রোগীর মৃত্যু উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। রোগীদের হয়রানি ও মৃত্যুর ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলেও জানান তিনি।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানান তিনি।
বিজ্ঞিপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৭ জানুয়ারি গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘প্রসূতির পেট ছিল কাটা, মা-সন্তান দু’জনই মৃত’ শীর্ষক সংবাদ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে আসে।
সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বরগুনার বামনার ডৌয়াতলা কলেজ রোডে অবস্থিত সুন্দরবন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মেঘলা আক্তার (১৯) নামে এক তরুণীকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নেয়া হয়। পরিবারের অভিযোগ, সেখানে মেঘলার ভুল চিকিৎসা হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে জীবিত নবজাতক সন্তানকে ফের মায়ের পেটে ঢুকিয়ে দ্রুত বরিশালে নিতে বলেন চিকিৎসকরা।
মেঘলা আক্তার বরগুনার বামনা উপজেলার উত্তর রামনা গ্রামের রফিকুল ইসলাম তারেকের স্ত্রী। ভুক্তভোগী নারীর পরিবার জানায়, সুন্দরবন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ১৫ জানুয়ারি বিকেলে প্রসব ব্যথায় কাতর মেঘলাকে ভর্তি করানো হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সবুজ কুমার দাসসহ পাঁচ-ছয়জন মিলে তার অস্ত্রোপচার করেন। দুই ঘণ্টা পর মেঘলাকে বরিশালে নেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। বরিশালে যাওয়ার পথে অবস্থা খারাপ দেখে তাকে ভাণ্ডারিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মা-নবজাতকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
এ বিষয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ মনে করেন, ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক, অমানবিক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। সম্প্রতি ভুল চিকিৎসা এবং চিকিৎসায় অবহেলার কারণে রোগীদের মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। কতিপয় চিকিৎসক এবং সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ এবং অবহেলার কারণে রোগীদের হয়রানি এবং কখনো কখনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনা, প্রয়োজনীয় মনিটরিংয়ের অভাবে যত্রতত্র অনুমোদনহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিক প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। যেখানে চিকিৎসক এবং নার্সদের ন্যূনতম যোগ্যতা ছাড়াই অস্ত্রোপচার এবং চিকিৎসা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। অনতিবিলম্বে এ সব অনুমোদনহীন হাসপাতাল চিহ্নিত করে বন্ধ করার পাশাপাশি, দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
উল্লেখ্য: প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অভিযোগ আমলে নিয়ে কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) এবং জেলা জজ মো. আশরাফুল আলমকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটি সরেজমিন তদন্ত করে বুধবার কমিশনের কাছে সংযুক্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। কমিটির সুপারিশগুলো বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিতব্য বেঞ্চ সভায় আলোচনার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।