অনলাইন ডেস্ক:
দায়িত্বে অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগে মাদারীপুরের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ঘণ্টাব্যাপী ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্বজনদের অভিযোগ, দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের পরিবর্তে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের নরমাল ডেলিভারিতেই মৃত্যু হয় লাকী বেগমের। এই ঘটনায় অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
নিহত লাকী বেগম (৩২) মাদারীপুর শহরের শান্তিনগর এলাকার মন্টু বেপারীর স্ত্রী। সাব্বির নামে ১০ বছরের এবং স্বাধীন নামে ৭ বছরের সন্তান রয়েছে তার।
পুলিশ বলছে, প্রসূতি লাকীর মৃত্যু হলেও সুস্থ আছে নবজাতক। এ ঘটনার তদন্ত করে নেয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা। অভিযুক্ত তাছলিমা বেগম প্রতিষ্ঠানে না থাকায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্বজনদের অভিযোগ, প্রসব যন্ত্রণা সইতে না পারায় বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মাদারীপুর জেলার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ভর্তি করা হয় লাকীকে। এর কিছু সময় পর প্রতিষ্ঠানের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক তাছলিমা বেগম, লাকীর নরমাল ডেলিভারি করেন। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ফোনে জানানো হয় দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার আমেনা খাতুনকে। তিনি না এসেই ফোনে লাকীকে সদর হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তড়িঘড়ি করে সদর হাসপাতালে নেয়া হলে সেখান থেকে ফরিদপুর মেডিকেলে পাঠান চিকিৎসক। মাঝ পথে মৃত্যু হয় লাকীর।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ করেন লাকীর স্বজনরা। একপর্যায়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে থানা পুলিশের পাশাপাশি জেলার গোয়েন্দা পুলিশ।
নিহত লাকীর স্বামী মন্টু বেপারী বলেন, আমরা গরীব মানুষ। সরকারি সেবা নিতে এখানে এসেছি। দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন চিকিৎসক নয়, একজন নার্স একাই নরমাল ডেলিভারি করাতে গিয়ে আমার স্ত্রীকে মেরে ফেলছে। আমার স্ত্রীর অনেক রক্তক্ষরণ হয়, এই ঘটনার বিচার চাই। আর ভাঙচুরের ঘটনায় আমি বা আমার পরিবারের কেউ জড়িত নয়। উত্তেজিত জনতা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
মৃত্যুর ঘটনার দায় কোনভাবেই নিতে চান না প্রতিষ্ঠানের কেউই। মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্বে) ডা. আমেনা খাতুন জানান, ভুল কিংবা অবহেলা নয়, সঠিকভাবে চিকিৎসা দেয়া হয় লাকীর।
এমন মৃত্যু কেন, প্রশ্ন করলে এক পর্যায়ে এই চিকিৎসক তেড়ে আসেন গণমাধ্যমকর্মীর ওপর। বলেন, নরমাল ডেলিভারি করতে গিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাকে জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপরে কি হয়েছে, সে ব্যাপারে আমাদের প্রতিষ্ঠান দায়ী নয়।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সেলিম সরদার জানান, প্রসূতি মায়ের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে জেলার একমাত্র মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে হামলা-ভাঙচুরের খবরে পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এখনও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন। এ ব্যাপারে নেয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা।