অনলাইন ডেস্ক:
অল্প টাকায় অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি নেয়ার প্রলোভন দেয় দালালচক্র। অনেকেই সেই প্রলোভনে পড়ে। কিন্তু মাঝপথে লিবিয়ার বন্দিশালায় আটকে নির্যাতন করে পরিবার থেকে আদায় করে মুক্তিপণের লাখ লাখ টাকা। দালালদের এই ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন মাদারীপুরের শত শত যুবক।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, রাতারাতি বড়লোক হওয়ায় স্বপ্নে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। এজন্য প্রয়োজন দালালচক্রের বিচার হওয়া। যদিও রাষ্ট্রপক্ষের পিপির দাবি, যথা সময়ে সাক্ষী আদালতে হাজির না হওয়ায় থমকে আছে মানবপাচার মামলার বিচার কার্যক্রম।
ফয়সাল মৃধা, মাদারীপুরের রাজৈর পৌরসভার পূর্ব স্বরমঙ্গল গ্রামের বাসিন্দা। দালালের খপ্পরে পড়ে নিঃশেষ তিনি। ফয়সালের অভিযোগ, মানবপাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য বদরপাশা গ্রামের রনি আকন ১৩ লাখ টাকার বিনিময়ে ৮ মাস আগে ইতালির উদ্দেশ্যে লিবিয়া নেয়। সেখানে একটি কক্ষে তাকে আটকে রাখে একমাস। শুরু হয় নির্যাতন। দেয়া হয় না তিনবেলা খাবারও। এরপর সমুদ্রপথে ইতালি পাড়ি দিতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়লে তিনমাস জেল খেটে দেশে ফেরেন।
ফয়সালের মতো শত শত যুবকের অভিযোগ, মিষ্টি মধুর কথা বলে লোভ দেখায়। পরে বাংলাদেশ থেকে যুবকদের লিবিয়া নিয়ে সেখানকার মাফিয়াদের হাতে বিক্রি করে, পরিবারের কাছ থেকে আদায় করে মুক্তিপণের লাখ লাখ টাকা। ভিটেমাটি বিক্রি আর উচ্চ সুদে টাকা এনে দালালদের হাতে দিলেও অনেকের মুক্তি মেলে না।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, সচেতনতার অভাবেই বার বার ঘটছে এমন ঘটনা। রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলির দাবি, একদিকে পুলিশ রিপোর্ট আসতে দেরি, অন্যদিকে আদালতে সাক্ষী হাজির না হওয়ায় ঝুলে আছে শত শত মানবপাচার মামলা।
জেলা পুলিশের তথ্য মতে, গেল ১০ বছরে মাদারীপুরে ৩২৯টি মানবপাচার মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এক হাজার ৪৬৬ আসামি থাকলেও গ্রেফতার হয়েছে ২৮৭ জন। আদালতে অভিযোগপত্র জমা পড়েছে ৯৬টি ও চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে ৮৭টি মামলার। ১১১টি মামলা মীমাংসা হলেও বাকিগুলো তদন্তাধীন পুলিশের বিভিন্ন দফতরে।
বিভিন্ন মামলা ও জেলা পুলিশ সূত্রে শক্তিশালী দালালচক্র হলো, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের সুন্দরদীর মোশারফ কাজী, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বড়দিয়া গ্রামের টুটুল ফকির, মাদারীপুর সদরের গাছবাড়িয়ার নাসির শিকদার, চাছার গ্রামের ইউসুফ খান জাহিদ, ধুরাইলের দাসেরবাড়ি এলাকার আলমগীর খাঁ, রাজৈর উপজেলার দত্তপাড়া গ্রামের সিরাজ মাতুব্বর ও রাজৈর উপজেলার বদরপাশার জুলহাঁস তালুকদার।
মানবধিকার কর্মী মশিউর রহমান পারভেজ বলেন, গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী দালালচক্র। এই সিন্ডিকেটকে বিচারের মুখোমুখি আনা গেলে এমন অপরাধ কমে আসবে। এজন্য পুলিশ, আইনজীবী ও আদালত সবারই সঠিক দায়িত্ব পালন করতে হবে।
মাদারীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু সাফর মিয়া বলেন, রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে যুবকরা অবৈধপথে ইতালি পাড়ি জমাচ্ছে। অনেক সময় ভুমধ্যসাগরে ডুবে মৃত্যু হচ্ছে অনেকের। এজন্য জনসচেতনা বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন। এছাড়া মামলার বিচার হলে অপরাধ কমে যাবে।
মাদারীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট মোছলেম আলী আকন বলেন, একদিকে অধিকাংশ মামলার বাদীরা আসামিদের সঙ্গে মীমাংসা হয়ে যায়। যার কারণে আদালতেরও কিছুই করার থাকে না। অন্যদিকে এসব মামলায় সাক্ষী আদালতে যথাসময়ে হাজির না হওয়ায় থমকে আছে মানবপাচার মামলা।