হোম খুলনাযশোর মনিরামপুর হিংসার বানে বাঁধ ধ্বসে কয়েকশ’ কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গ:আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৯ কোটি টাকা

মনিরামপুর হিংসার বানে বাঁধ ধ্বসে কয়েকশ’ কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গ:আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৯ কোটি টাকা

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 19 ভিউজ

রিপন হোসেন সাজু:

হিংসার বানে বেড়িবাঁধ ধ্বসে ধুলিসাৎ হলো কয়েকশ’ কৃষকের স্বপ্ন। জমি মাছের ঘেরে হারি দিয়ে বোরো মৌসুমে আবাদের সুযোগ পান কৃষক। এতে সারা বছরের খোরাক হয় কৃষকদের। কিন্তু এই ধান ঘরে উঠার আগেই সব শেষ হয়ে গেছে। বেড়িবাঁধ ধ্বসে খালের পানি বিলে ঢুকে আবাদকৃত হাজার বিঘা বোরো ক্ষেত তলিয়ে যাওয়াসহ ঘের প্লাবিত হয়ে প্রায় তিন কোটি টাকার মাছ বেরিয়ে গেছে। তবে, কৃষকদের দাবি খালটি গভীর করে খনন করা হলে ভবিষ্যতে এমন ক্ষতির সম্ভাবনা থাকবে না। গত শনিবার রাতে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার বিল হরিনায় বেড়িবাধ ধ্বসে এ ঘটনা ঘটেছে। বাঁধ ধ্বসের নেপথ্যে ঘের নিয়ে দ্ব›দ্বকে দুষছেন ঘের মালিকসহ ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের অনেকেই। গ্রামবাসীর তিন দিন স্বেচ্ছাশ্রমে চেষ্টার পর পানি ঠেকানো সম্ভব হলেও তার আগেই শেষ হয়ে গেছে কৃষকের বোরো ক্ষেত। এখন ধান ক্ষেতে বুক পানি। ইতোমধ্যে রোপনকৃত ধানের চারা গাছ খেয়ে সাবাড় করছে মাছ। আর এমনিতেই পানি কিছুদিন থাকলে ধানের চারা পঁচে যাবার শতভাগ সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগ। সরেজমিন ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় গেলে এ চিত্র উঠে এসেছে। সরেজমিন ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় গিয়ে দেখা যায় উপজেলার বাটবিলা ও হরিণা গ্রামের মধ্যে দিয়ে দূর্বাডাঙ্গা খাল পার্শ্ববর্তী কেশবপুর উপজেলার কাটাখালি স্লুইচ গেট হয়ে বিল খুকশিয়ার স্লুইচ গেট সংলগ্ন শ্রী-হরি নদীতে গিয়ে মিশেছে। মনিরামপুর উপজেলার বিল শালিখা, জিলদার বিল, দূর্বাডাঙ্গাসহ কয়েকটি বিলের পানি এই দূর্বাডাঙ্গা খাল দিয়ে নিষ্কাশন হয়। বিল হরিণা হতে এই খাল প্রায় ৮-১০ ফুট উঁচু। এই খালের দুই পাশে বিল হরিণা ও দূর্বাডাঙ্গার বিল। দুই বিলেই প্রায় সারা বছর পানি থাকে। যে কারনে বাধ্য হয়ে কেবল বোরো মৌসুমে ধান আবাদের শর্তে কৃষকরা মাছের ঘেরে জমি লীজ দেয়। চলতি বোরো মৌসুমে ঘের মালিকরা এসব বিল হতে পানি সেচ দিয়ে কৃষকদের ধান আবাদের সুযোগ করে দেয়। সেচকৃত পানি গিয়ে পড়ে এই খালে। বিল হরিণায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ ঘের মালিক বিমল সরকার বাকরুদ্ধ কন্ঠে এ প্রতিবেদককে জানান, গেলো বছর এলাকার কৃষকরা তাকে ঘের করার জন্য জমি লীজ দেয়। তিনি ৮শ’৭০ বিঘা জমি লীজ নিয়ে ৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কৃষকদের ধান আবাদের সুযোগ করে দিতে তাড়াহুড়া করে কিছু মাছ বিক্রি করলেও প্রায় তিন কোটি টাকার মাছ থেকে যায়। এছাড়া ছোট ছোট মাছের ঘেরও প্লাবিত হয়ে আরও কোটি টাকার মাছ বেরিয়ে গেছে। তিনি এসময় অভিযোগ করে বলেন, ঘের নেবার সময় জনৈক আমিনুর রহমান নামের একজনের সাথে বিরোধ হয়। তার দৃঢ় বিশ্বাস রাতের কোন এক সময় হিংসা করে এই বেড়িবাঁধ কেটে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আমিনুর রহমানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ কারনে তার মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এসময় উপস্থিত রক্তিম বিশ্বাস, বিরেণ বিশ্বাস, তুষার রায়সহ ক্ষতিগ্রস্থ অনেকেই বলেন, মধ্যে আগস্টে আকস্মিক বন্যায় পানির প্রবল চাপে বেড়িবাধ ভাঙ্গেনি। অথচ বাঁধের ভাল জায়গা হতে ধ্বসে যাওয়াটা সন্দেহজনক। তবে, তারা দাবি করছেন খালটি গভীর করে খনন করা হলে ভষ্যিতে এমন ঘটনা এড়ানো সম্ভব। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাঃ মাহমুদা আক্তার জানান, বিল হরিণায় ৮শ ৬৫ জন কৃষকের ১শ’৪৪ হেক্টর বোরো ধানের ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এতে করে এক হাজার ৮০ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং টাকার পরিমানে প্রায় ৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকার ক্ষতি হতে যাচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না জানান, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বাঁধ নির্মাণে অর্থায়নের চেষ্টা হচ্ছে। তাৎক্ষণিক উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসারকে বাঁধ নির্মাণে আর্থিক সহযোগিতার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন