হোম এক্সক্লুসিভ মনিরামপুরে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি

মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি :

মনিরামপুরের হাট-বাজারে তরিতরকারি ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোক্তা সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা প্রায়। বাজার মূল্যের অস্থিতিশীল পরিবেশে ক্রেতা সাধারণ দোকানে কমই ভিড়ছে। গত কয়েক দিনের ব্যবধানে বাজারদর কয়েক দফা বেড়ে গেছে বলে বিভিন্ন হাটবাজারে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে।

বুধবার মনিরামপুর পৌর শহরের কাঁচা তরিতরকারির বাজারে যেয়ে জানা যায়, ২৫০ গ্রাম রসুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে, কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ গ্রাম ৫০ টাকা, পাইকারি বাজারে ফার্মের ১ হালি ডিম ৫৬ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেলেও খোলা বাজারে এক পিচ ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা দরে। প্রতি কেজি বেগুন ৭০ টাকা, করল্লা ১০০ টাকা, কাঁচাকলা ৪০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ টাকা, ঝিঙে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, কচুরলতি ৫০ টাকা, কচুরমুখি ৭০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪৫ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, খিরাই ৭০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, ধনে পাতা ১৫০ টাকা, কাগজী লেবু প্রতি পিচ ১০ টাকা, গোলআলু ৪০ টাকা, পেঁয়াজ ৮০ টাকা, রসুন ২৫০ টাকা, কাঁচা ঝাল ২০০ টাকা, ডাটা ৩০ টাকা, পুঁইশাক ২০ টাকা, লালশাক ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে সবজির যথেষ্ট আমদানী থাকা সত্ত্বেও পাইকারদের সিন্ডিকেট মূল্য বেশী হওয়ার কারণ হিসেবে দুষছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

মনিরামপুর পৌর শহরের কাঁচা বাজারের খুচরা দোকানী সেলিম জানান, পাইকারদের কাছ থেকে এখন চড়া দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। তাই যেমন দরে কিনছি তার চেয়ে একটু বেশি দরেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এদিকে বাজারদর নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রশাসনের উদ্যোগে প্রতিটি দোকানে মূল্য তালিকা টানানোর জোরালো নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সে মোতাবেক মনিরামপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ সোমবার পৌর শহরে মাইকিং করেছেন। মনিরামপুর কাঁচা তরিতরকারি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামকে তার দোকানে বাজারদরের নিয়মিত মূল্য তালিকা টানানো দেখা গেলেও অন্য কোন দোকানে টানাতে দেখা যায়নি।

মুদি ব্যবসায়ী ফারুক জানান, ভোজ্য তেল, মসলা, ডাল, আটা, চিনিসহ সকল পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। খোলা বাজারে সয়াবিন তেল প্রতি কেজি ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, সরিষার তেল বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। দাম বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি একই কথা বলেন, পাইকারদের কাছ থেকে বেশি দামে প্রতিটি পণ্য কিনতে হচ্ছে। যেমন দামে আমরা কিনছি সেই অনুযায়ী আমাদের বিক্রি করতে হচ্ছে। ১০০ গ্রাম ওজনের লাক্স সাবান ৬০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রত্যেক পণ্যের মূল্য বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি জানান।

উপজেলার নেহালপুর বাজারেও প্রতিটি নিত্য পণ্য বেশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বলে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে। এই বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, পণ্য সামগ্রীর দাম গত কয়েক দিনে বেশ বেড়ে গেছে। যে হারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে খরিদ্দারের কাছে বিশ্বস্থতা বজায় রাখা দুষ্কর হয়ে পড়ছে। ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, ভোজ্য তেল, চাল, ডাল, আটা, চিনি, বিস্কুট, ডিম, মসলাসহ সকল পণ্যের দাম কয়েক দফা বেড়ে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মনিরামপুরের নেহালপুর গ্রামের জনৈক ব্যক্তি জানান, তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে মাসে ৭ হাজার টাকার বেতনে অস্থায়ী চাকরি করেন। এই অল্প আয়ে বর্তমান ঊর্ধ্বগতির বাজারে সওদা করে সংসার চালাতে যেয়ে তাকে বেশ হিমসিম খেতে হচ্ছে। সংসারের চাহিদা অনুযায়ী পণ্যসামগ্রী তিনি কিনতে পারছেন না। এই রকম বহু অল্প আয়ের মানুষ রয়েছে যারা বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে।

অন্যদিকে বর্তমানে মাছ ও মাংসের দামও বেড়ে গেছে। উপজেলার নেহালপুর গ্রামের রিপন হোসেন, ইকবাল হোসেন, দত্তকোনা গ্রামের কামাল হোসেন সহ অরও কয়েকজন হতদরিদ্র মানুষ জানান, বাজারে জিনিসপত্রের যা দাম বেড়েছে তাতে চাহিদা মাফিক জিনিসপত্র কিনতে পারছি না, দাম অনেক বেশি। কি করে সংসার চালাবো, এই ভেবেই তারা সবাই এখন হতাশাগ্রস্ত।

জানা গেছে, মনিরামপুর, নেহালপুর, কোনাকোলা, মশিয়াহাটী, মনোহরপুর, কপালিয়া, রাজগঞ্জ, চিনাটোলা, ঢাকুরিয়া, কুয়াদা ও খেদাপাড়া বাজারসহ বিভিন্ন হাট-বাজারের বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পণ্য সামগ্রীর মূল্য তালিকা নেই। ইচ্ছা খুশি মোতাবেক ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম হাকিয়ে বিক্রি করছে। এলাকার সচেতন নাগরিকদের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন