রিপন হোসেন সাজু, মনিরামপুর (যশোর) :
যশোরের মনিরামপুরে হঠাৎ করেই ডায়রিয়া প্রকোপ আকার ধারন করেছে। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। গত ১১ দিনে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে তিন শতাধিক ব্যক্তি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হবার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে প্রায় দেড় শতাধিক ব্যক্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এখনও ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৫৬ জন।
দিন দিন ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শয্যার অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে আক্রান্তদের মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানাযায়, হটাৎ করে গত ১১ দিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন বর্তমান আবহাওয়া জনিত কারনে (দিনে গরম, রাতে ঠান্ডা) ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গত ১১ দিনের ব্যবধানে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে অন্তত তিন শাতাধিক ব্যক্তি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগ থেকে অন্তত দেড় শতাধিক ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়েছেন। বাকীরা বিভিন্ন ক্লিনিক ও অথবা অন্য কোন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। সাধারন ওয়ার্ডের পাশাপাশি মহিলা ও শিশুদের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দোতলায় মহিলা ওয়ার্ডের দক্ষিন পাশে ১০ টি শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে।
তবে আক্রান্তদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শনিবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিন পাশের ওয়ার্ডে শয্যার অভাবে মহিলা ও শিশু রোগিদের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কথা হয় বাকোশপোল গ্রাম থেকে আসা গৃহবধু শান্তা ইসলামের সাথে।
তিনি বলেন, আমি এবং আমার তিনমাস বয়সী মেয়ে নুসরত জাহান ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এখন একটু সুস্থ্যের দিকে। বাহিরঘরিয়া গ্রামের শাহাবুদ্দিনের আট মাস বয়সী মেয়ে মালিহাকে ভর্তি করা হয়েছে গতকাল শনিবার সকালে।
কিন্তু শয্যা না থাকয় তাকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আবার ভর্তি করা হয়েছে মোহনপুর গ্রামের তুহিন আহম্মদের ২০ মাস বয়সী মেয়ে তাহা, ভরতপুর গ্রামের ইকবাল হোসেনের ১৬ মাস বয়সী মেয়ে সায়মুন, গোপালপুর গ্রামের শামছুর রহমানের ১৩ মাস বয়সী মেয়ে আবু হানিফ, পাড়দীয়া গ্রামের মাসুম বিল্লাহর ১৩ মাস বয়সী ছেলে আবিদ, ঘুঘুরাইল গ্রামের শহিদুল ইসলামের দুই মাস বয়সী মেয়ে মারিয়াকে।
এছাড়াও ওই ওয়ার্ডে গতকাল আরো ভর্তি হয়েছেন দোনার গ্রামের আব্বাস আলীর স্ত্রী শাহিদা খাতুন, তাহেরপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের স্ত্রী রাজিয়া বেগমসহ আটজন। সব মিলিয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৫৬ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহিদা বেগম ও মিডওয়াইফারি সুপ্রিয়া জানান, প্রয়োজনীয় সংখ্যক শয্যার অভাবে মেঝেতে রেখে রোগীদের চিকিৎসা চলছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তন্ময় বিশ্বাস জানান, হঠাৎ করে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান মেট্রোনিডাজল সাসপেনশনের সরবারহ নেই। তবে অন্যসব ওষুধের সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। ফলে ডায়রিয়া পরিস্থিতি স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়ন্ত্রণে আছে।