হোম খুলনাযশোর মনিরামপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আঙ্গুর চাষ!

মনিরামপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আঙ্গুর চাষ!

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 57 ভিউজ

রিপন হোসেন সাজু:

যশোরের মনিরামপুরে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে আঙ্গুর চাষ। মিষ্টি স্বাদযুক্ত ,দেখতে আর্কষনীয় ,ফলন ও উচ্চ মূল্য পাওয়ায় আঙ্গুর চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষি উদ্যোক্তরা। উপজেলার মাছনা খানপুর গ্রামের চাষী হাফেজ বেলাল হোসাইন, হেলাঞ্চী গ্রামের জিয়াউর রহমান, আকবর আলী, কাঠালতলা গ্রামের সাহারাত আলী, কাশিমনগর গ্রামের হুমায়ন আলী, মুজগুন্নি গ্রামের আব্দুল করিম, লাউড়ী গ্রামের আফজাল হোসেন, বজয়রামপুর গ্রামের বিল্লাল হোসেন, চাকলা গ্রামের সাহারাত আলী, হায়াতপুর গ্রামের চাষী হাবিবুর রহমান, হাকোবা গ্রামের আসাদুজ্জামান মূলতঃ মিশ্র ফল চাষী। মাল্টা, ড্রাগন, কূল, লেবু, আম, পেয়ারা, স্ট্রব্রেরীসহ নানা জাতের নিয়মিত ফল চাষী। এসব ফল চাষে চাষীরা ব্যাপকভাবে সফল হয়েছেন। কিন্তু এবার বানিজ্যিক ভিত্তিতে হাফেজ বেলাল হোসাইন অন্ততঃ ২০জাতের, জিয়াউর রহমান তিন জাতের, আকবর আলী তিন জাতের, সাহারাত আলী চার জাতের, হুমায়ন আলী তিন জাতের আঙ্গুর চাষ করেন। এ চাষে সবাই আশানুরুপেরও বেশী ফলন পান। আঙ্গুরের মিষ্টি স্বাদ ও বর্ণ ক্রেতা সাধারণকে আর্কষনীয় করছে । বাজারে এর উচ্চ মূল্য পাওয়ায় এ জনপদটি এখন আঙ্গুরময় হয়ে উঠেছে সর্বত্র। আঙ্গুর চাষী জিয়াউর রহমান বলেন, ৪২শতক জমিতে বাইকুনুর ও অ্যাকুলো জাতের আঙ্গুর চাষ করেছি। এ পর্যন্ত ২ লাখ টাকা বিক্রি করেছি। আল্লাহ ফলন দিয়েছে।আমি লাভবান হবো বলে আশা করছি।যে খরচ তা এবার হয়ে গেছে। আগামীতে এর খরচ অনেক কম হবে। ৩৬বছর পর্যন্ত এর আয়ুস্কাল হবে।সুতরাং এ আবাদ থেকে দীর্ঘদিন লাভ করতে পারবো ইনশা আল্লাহ।আমি সর্বত্র এ চাষ ছড়িয়ে দিতে চাই।
কৃষিবিদ শাহারিয়া হোসেন জানান,গবেষণা করে দেখা গেছে বাংলাদেশে আঙুরের চাষের উপযোগী মাটি এবং জলবায়ু রয়েছে। ইদানীং দেশের বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে উন্নতজাতের আঙুরের চাষ হচ্ছে। এতে কৃষকেরা আঙুর চাষে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছেন। প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি একর জমিতে ৪৩৬টি আঙুর গাছ লাগানো যায় এবং জাতিতে ভিন্নতায় গড়ে প্রতিগাছে প্রতিবছর ৪ কেজি হিসেবে মোট ১৭৪৪ কেজি আঙুর উৎপাদন করা সম্ভব। হিসেব করে দেখা গেছে কৃষকের বসতভিটার ৯ বর্গমিটার জায়গায় চারটি গাছ লাগিয়ে বছরে সর্বোচ্চ তিনটি ফলনের মাধ্যমে ১৬ কেজি আঙুর উৎপাদন করা সম্ভব। দেশে সরকারি উদ্যোগে বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯৯০ সালের দিকে গাজীপুরের কাশিমপুরের বিএডিসি উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্রে। বর্তমানে আমাদের দেশে তিন প্রজাতির আঙুর উৎপন্ন হচ্ছে। এসব প্রজাতির মধ্যে রয়েছে—জ্যাককাউ, বøাকর্রেরী এবং বø্যাাকপার্ল। আঙুর চাষের জন্য জমি এবং মাটি নির্বাচনে দোআঁশযুক্ত লালমাটি, জৈবসার সমৃদ্ধ কাকর জাতীয় মাটি এবং পাহাড়ের পাললিক মাটিতে আঙুরের চাষ ভালো হয়। জমি অবশ্যই উঁচু স্থানে হতে হবে যেখানে পানি দাঁড়িয়ে থাকবে না এবং প্রচুর সূর্যের আলো পড়বে এমন জায়গায় আঙুর চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। শাহারিয়া আরও জানান,জমি তৈরির পদ্ধতি হলো ভালোভাবে চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে বড়ো আকারের গর্ত করে তাতে ৪০ কেজি গোবর, ৪০০ গ্রাম পটাশ, ৫০০ গ্রাম ফসফেট এবং ১০০ গ্রাম ইউরিয়া গর্তের মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন রেখে দিতে হবে যেন সারগুলো ভালোভাবে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। সংগৃহীত চারা গোড়ার মাটির সঙ্গে মিশে যায়। সংগৃহীত চারা গোড়ার মাটির বলসহ গর্তে রোপণ করে একটি কাঠি গেড়ে সোজা হয়ে উঠার সুযোগ করে দিতে হবে এবং হালংকা পানি সেচ দিতে হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আঙুর গাছের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় মার্চ-এপ্রিল মাস। আঙুর গাছ যেহেতু লতানো গাছ তাই এর বৃদ্ধির জন্য সময়মতো বাড়তি সার প্রয়োগ করতে হবে। পরিমিত সার এবং উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে একটি আঙুর গাছ ৩৬ বছর পযন্ত ফলন দিতে পারে। কৃষকরা সাধারণত বাঁশের মাচা তৈরি করে আঙুর গাছের লতা ছড়িয়ে দেন এবং নাইলনের জাল দিয়ে মাচা ঘিরে দেন, যাতে পাখি ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণী থেকে আঙুর রক্ষা পায়। আঙুর চাষে মাটির গুণমান, সঠিক পরিচর্যা এবং সেচ ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।স্থানীয় বাজারে মিষ্টি ও রসালো আঙুরের চাহিদা বাড়ছে। কৃষকরা বাগান থেকেই আঙুর বিক্রি করছেন এবং অনেকেই চারা বিক্রির মাধ্যমে অতিরিক্ত আয় করছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগকে উৎসাহিত করছেন এবং বৃহত্তর পরিসরে আঙুর চাষে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিচ্ছেন। মনিরামপুর উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার দেলোয়ার হোসেন বলেন, আগে শখের বসে চাষীরা আঙ্গুর চাষ করলেও চলতি বছর উপজেলায় অন্ততঃ এক হেক্টরেরও বেশী জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আঙ্গুরের আবাদ হয়েছে। মনিরামপুর উপজেলার কাঁঠালতলা গ্রামের সাহারাত আলী শখের বসে মাত্র ছয় শতাংশ জমিতে আঙ্গুর চাষ শুরু করেন।এক বছরের মধ্যেই তিনি ছয় মণ আঙ্গুর বিক্রি করেন ।এবার তিনি দুই বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। ।উপজেলার মাছনা খানপুর গ্রামের হাফেজ বেলাল হোসাইন তার ‘শুকরিয়া অ্যাগ্রো ফার্মে’ ২০ জাতের আঙ্গুরসহ বহু বিদেশি ফল চাষ করছেন, যা ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। হেলাঞ্চি গ্রামের চাষি জিয়াউর রহমান ও আকবর আলী,কাশিমনগর গ্রামের হুমায়ন আলী বাণিজ্যিকভাবে মিষ্টি অ্যাকুলো ও বাইকুনুর জাতের আঙ্গুর চাষে সফল হয়েছেন। কৃষি বিজ্ঞানী নিহার রঞ্জন হালদার বলেন, সঠিক পরিকল্পনা ও আধুনিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে আঙ্গুর চাষের এক উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে, যা কৃষকের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। মনিরামপুরে আঙুর চাষের এই সাফল্য স্থানীয় কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এটি শুধু আয়ের নতুন উৎস নয়, বরং কৃষিতে বৈচিত্র আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন