হোম অন্যান্যসারাদেশ মনিরামপুরে আম্ফান ঝড়ে একই গ্রামে নিহত ৫ পরিবারের খোঁজ রাখেনি কেউ, জোটেনি বিধবা কার্ড ও বাড়ি

মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি :

বছর পার হলেও আম্ফান তান্ডবে নিহত যশোরের মনিরামপুর উপজেলার একই গ্রামের ৫ নারী-পুরুষের বাড়ির খোঁজ রাখেনি কেউ। হতদরিদ্র এসব পরিবারে আজও জোটেনি নিহতের স্ত্রীর বিধবা কার্ড কিংবা সরকারি বাড়ি। ঝড়ের কয়েকদিন পর প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের মাধ্যমে নিহতদের পরিবারে হাতে ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়। তারপর কেউ আর ফিরেও তাকাইনি।

জনপ্রতিনিধিদের কাছে বার বার ধর্না দিওে মেলেনি সরকারি ঘর। তাদের কথার আশায় থেকে বছর পার হতে চলেছে। অনেকেই আবার ভোটের পর করে দেবার আশ্বাস দিয়েছেন। সোমবার নিহতদের স্বজনদের অনেকেই এসব কথা বলছিলেন আর শাড়ির আঁচল দিয়ে বোবা কান্নায় বের হওয়া চোখের পানি মুছছিলেন।

জানা যায়, গত বছরের ২০ মে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে বইয়ে যাওয়া আম্ফান তান্ডবে টিনের বেড়া ঘেরা বাড়ির ওপর গাছ পড়ে নিহত হন খোকন দাস (৬৫) ও তার স্ত্রী বিজন দাসী (৫৫), নজরুল ইসলাম ওরফে ওয়াজেদ আলী ও তার ছেলে ইছহাক আলী (১৮) এবং বৃদ্ধা আছিয়া বেগম (৭০)। নিহতরা সকলেই উপজেলার পারখাজুরা গ্রামের। ওই দিন গাছ চাপায় গুরুত্বর আহত উপজেলার সরসকাটি গ্রামের কামাল হোসেন নামের আরেক ব্যক্তি ৪দিন পর মারা যান।

নিহত খোকন দাস ও বিজন দাসীর বড় মেয়ে দিপালী দাস বলেন, ‘তাদের কোন ভাই না থাহাই আমি বাড়িতে বাপ-মায়ের কাছে থাকতাম। ঝড়ের কয়দিন পরে বাবা-মার সৎকারের সময় ৪০ হাজার টাহা দিছিল। এরপর থেকে কেউ ফিরেও তাকাইনি। ঘরের জন্যি মেম্বর-চেয়ারম্যানের গেলিও শুধু আশ্বাস দিয়ে রাইহেছে।’

বাধ্য হয়ে দিপালী দাস স্বামী-সন্তান নিয়ে বাপের ভিটাই ছনের ছাউনি ছাওয়া পলিথিন আর টিন ঘেরা বাড়িতে কোন রকম মাথা গুজে আছেন। গাছ চাপাই বাড়ি ভেঙ্গে যাবার পর অর্থাভাবে আর সংস্কার করা হয়ে উঠেনি।

নিহত ওয়াজেদের বাড়িতে গেলে দেখা যায় তার স্ত্রী মেহেরুন্নেছা পরের বাড়িতে ধান ঝাড়ার কাজ করছে। স্বামী নজরুল ইসলাম ওরফে ওয়াজেদ আলী ও তার ছেলে ইসহাক আলী নিহত হওয়ার পর থেকে তিনিই ছোট ছেলেকে আলাদ থাকেন।

এসময় মেহেরুন্নেছা ঘোমটার মধ্যে শাড়ির আঁচল দিয়ে বোবা কান্নায় বের হওয়া চোখের পানি মুছছিলেন আর বলছিলেন, স্বামী মারা যাবার পর তিনি ছোট ছেলেটাকে নিয়ে বেকায়দায় আছেন। অভাব-অনটনের সংসারে অর্ধহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করতে হয়। বাধ্য হয়ে পরের বাড়িতে ঝিয়ের কাজসহ শ্রমিকের কাজ করতে হয়। ছোট ছেলেটাকে নিয়ে তিনি আলাদা থাকেন।

কয়কেদিন করে মেম্বরের কাছে সরকারি ঘর ও বিধবা কার্ডের জন্য গেলেও ভোটের পরে করে দিবেন বলে তাকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, আম্ফান ঝড়ে পর থেকে বিধবা কার্ড আসেনি। আর সরকারি বাড়ির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বলা হয়েছিল। কিন্তু কি কারনে পাইনি, সেটি খোঁজ নেয়া হয়নি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন