মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি :
টাকা হলে সব কিছুই সম্ভব মণিরামপুর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে। টাকা দিলেই আইনের তোয়াক্কা করা হয় না এমন অভিযোগ উঠেছে কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে। একজন জনপ্রতিনিধির আর্শিবাদ নিয়েই তিনি দিদারচ্ছে দূর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি এমনই অর্থের বিনিময় দু’জন ভূয়া নিবন্ধনে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকের উচ্চতর স্কেল পাইবার সুযোগ করে দেন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার। উপজেলার সুবোলকাটি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (গণিত) কল্যাণ কুমার রায় এবং শরীর চর্চার শিক্ষক সন্ধ্যা মন্ডলকে এ উচ্চতর স্কেল পাইবার সুযোগ করে দেওয়া হয় এ অফিস থেকে।
গত জানুয়ারী মাসের বেতনের সাথে তাদের এ উচ্চতর স্কেল যোগ হয়েছে বলে জানাগেছে। খোঁজ খবর নিয়ে জানাযায় ভূয়া নিবন্ধনে এ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়া একাধিক শিক্ষক থাকায় আলোচিত হয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। অভিযোগে জানাযায়, গণিত বিষয়ে শিক্ষক হিসেবে কল্যাণ কুমার রায় যোগদান করেন ০১/০১/২০১০ সালে। তিনি ০১/১১/২০১০ তারিখ হতে সরকারী বেতন ভাতা ভোগ করে চলেছেন। যার বেতন সূচক সংখ্যা ১০৫২৯৪০। অভিযোগ উঠেছে কল্যাণ কুমার ২০০৯ সনে পাশ করা যে নিবন্ধন পত্রের মাধ্যমে নিয়োগ দেন সেটি ভুয়া বলে দাবী করেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
তার ওই নিবন্ধন নম্বর ১২২৮৯৮৫৯/২০০৯। সন্ধ্যা মন্ডল শরীর চর্চা শিক্ষক হিসেবে ০৭/১১/২০১০ সালে যোগদান করেছেন ওই প্রতিষ্ঠানে। তিনিও সরকারী বেতন ভাতা গ্রহণ করছেন ০১/১১/২০১০ তারিখ হতে। ২০০৭ সালে পাশ করা যে নিবন্ধন পত্র দাখিল করা হয়েছে তার নিবন্ধন নং- ০৬৮১৪৫/২০০৭। অভিযোগ উঠেছে সন্ধ্যা মন্ডলের নিবন্ধনটিও ভুয়া। কম্পিউটার শিক্ষক শিমুল রায় যার বেতন সূচক সংখ্যা-১০৬২১৭৮। তার নিবন্ধন নম্বর ১০০১৫১৩১/২০০৯। ২০০৯ সালে পাশ করা এ নিবন্ধন ধারীর রোল নং- ৩১৮১২৩৭৭ বলে জানা গেছে। ১৬/০৪/২০১২ তারিখ থেকে তিনিও সরকারী বেতন ভাতা গ্রহণ করে চলেছেন। ব্যবসায়ী শিক্ষায় শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন দেবাশীষ রায়। তিনিও ভূয়া নিবন্ধনে দীর্ঘদিন ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরী করছেন বলে জানাগেছে। এ ব্যাপারে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিপক কুমার ঘোষ দাবী করেন, তাদের নিবন্ধন ভুয়া কিনা সেটা আমার জানা নেই। বিদ্যালয়ের আগের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ তাদের নিয়োগ দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানাযায়, গত ২২/১০/২০২০ তারিখে স্মারক নং- বেশিনিক/শি.শি/নিয়োগ অভিযোগ/৯০৩ পত্রে বেরকারী শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন (এনটিআরসিএ) এর এক পত্রালোকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস উপজেলার স্কুল ও মাদ্রাসায় নিবন্ধন সনদ মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকদের তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করেন। সূত্রমতে এ সময় মণিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ নেওয়া শতাধিক ভুয়া নিবন্ধন চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। অভিযোগ রয়েছে এ সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ লক্ষ লক্ষ টাকার অর্থ বাণিজ্য করেন।
তবে সে ভুয়া নিবন্ধনধারীদের ব্যাপারে চুড়ান্ত কোন সিধান্ত আসেনি বলে জানাগেছে। এদিকে অভিযোগ উঠেছে ভুয়া নিবন্ধনে চাকরী নেওয়া শিক্ষকদের চাকরী নিয়েই বৈধতার প্রশ্ন উঠেছে। তার মাঝেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় থেকে এদের অনেকেই বিধিমোতাবেক দাবী করে উচ্চতর স্কেল গ্রহণ করছেন। যেমনি সুবোলকাঠি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক কল্যাণ কুমার এবং সন্ধ্যা মন্ডলই দৃষ্টান্তর।
এছাড়াও গোপিকান্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম) অর্পণা মন্ডল ভুয়া নিবন্ধনে চাকরী নিয়ে তিনিও উচ্চতর স্কেল গ্রহনের প্রস্তুতি চালাচ্ছেন। ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি নেতাই চন্দ্র পাল জানান, অর্পণা মন্ডলের উচ্চতর স্কেল পাইবার ১২/০১/২০২১ তারিখে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রাদি প্রস্তুত করে দেওয়া হয়েছে। গত ২০/০৯/২০১০ তারিখ হতে অপর্না মন্ডল ভুয়া নিবন্ধনে ওই বিদ্যালয়ে চাকরী করছেন। তার বেতন সূচক সংখ্যা ১০৫৩৬১৯।
এব্যাপারে কথা বলতে মুঠোফোনে জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল খালেকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ফোনটি রিসিভ করেননি তিনি। এব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দূর্নীতির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ভুয়া নিবন্ধনধারী শিক্ষকদের চাকরী নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে, তারপরে আবার উচ্চতর স্কেল কিসের? সুবোলকাটি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের দু’জন শিক্ষকের উচ্চতর স্কেল পাওয়ার বিষয় জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান অজান্তে অহতো বা চলে যেতে পারে।
s