আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে শিগগিরই বৈঠক হতে পারে বলে জানিয়েছে গ্রিস। বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদের ঘূর্ণায়মান সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে দেশটি। জাতিসংঘ সদরদপ্তরে শুক্রবার (২ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত আসিম ইফতিখার আহমদ বলেন, ‘সমস্ত বিকল্পই বিবেচনায় রয়েছে। এর মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি তোলা অন্যতম। আমরা উপযুক্ত সময়ে সিদ্ধান্ত নেব।’ পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন এ খবর জানিয়েছে।
গ্রিসের রাষ্ট্রদূত ইভাঞ্জেলোস সেকেরিস বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘আমরা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছি … এবং এটি সম্ভবত খুব শিগগিরই ঘটতে পারে। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আজ আমাদের (নিরাপত্তা পরিষদের) সভাপতিত্বের প্রথম দিন।’
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জমা পড়েনি। তবে এমন একটি আলোচনা মূল্যবান হতে পারে।
‘যদি বৈঠকের জন্য অনুরোধ আসে, তাহলে আমি মনে করি অবশ্যই এটি হওয়া উচিত। কারণ এটি একটি সুযোগ হতে পারে মতামত প্রকাশের এবং এটি কিছুটা উত্তেজনা প্রশমনে সহায়তা করতে পারে।’
রাষ্ট্রদূত আসিম সতর্ক করে বলেন, চলমান সংকট দ্রুত উত্তেজনায় রূপ নিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অস্থিতিশীল আচরণের ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও উত্তেজনাপূর্ণ এই পরিবেশে … আমাদের কাছে নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক অভিযানের আশঙ্কা রয়েছে।’
তিনি জানান, ইসলামাবাদ ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মহলকে অবহিত করেছে যে, ‘আমরা জাতিসংঘ মহাসচিব, সাধারণ পরিষদের ও নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিদের, নিউ ইয়র্কে ওআইসি গ্রুপ এবং নিরাপত্তা পরিষদের অন্যান্য সদস্যদের এ বিষয়ে অবহিত করেছি। আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গেও আমাদের অবস্থান ও উদ্বেগ শেয়ার করেছি।’
তিনি বলেন, ভারত যদি আগ্রাসন শুরু করে, তবে পাকিস্তান জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী তার অন্তর্নিহিত এবং বৈধ আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করবে।
একই সময়ে রাষ্ট্রদূত আসিম সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান জানান। বলেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের সব ধরনের রূপ ও প্রকাশকে ঘৃণাভরে নিন্দা জানায়। নিরীহ বেসামরিকদের লক্ষ্য করে হামলার কোনও ন্যায্যতা নেই। পাহেলগামে প্রাণহানির ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন এবং শোক প্রকাশ করেছি।
তিনি ভারতের পানি চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তকেও অবৈধ ও একতরফা বলে অভিহিত করেন। তিনি জানান, ‘চুক্তি স্থগিত করার কোনও বিধান নেই। ভারতের একতরফা ও অবৈধ পদক্ষেপ দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করবে।’
রাষ্ট্রদূত সেকেরিস বিষয়টির গুরুত্ব স্বীকার করে বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ে আমরাও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরাও অন্যান্যদের সঙ্গে একমত যে, উত্তেজনা প্রশমন ও সংলাপ জরুরি যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে না চলে যায়।’
পেহেলগাম হামলার বিষয়ে সেকেরিস বলেন, ‘এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। আমরা নীতিগতভাবে সন্ত্রাসবাদের যে কোনও কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাই এবং এটিই আমরা করেছি। নিরীহ বেসামরিকদের ওপর এই জঘন্য হামলা অবশ্যই নিন্দনীয়।’
তিনি বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তান—উভয়ই গ্রিসের তুলনায় অনেক বড় রাষ্ট্র। তাই বিষয়টির মাত্রাও ভিন্ন। আমরা সংলাপ ও উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বানে অন্যদের সঙ্গে একমত।’