মিলন হোসেন,বেনাপোল:
দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি পণ্য সংরক্ষণে পণ্যগার ভাড়া বাবদ ৯৫ কোটি ৮ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৮৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। যা লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ঘাটতি হয়েছে ১১ কোটি ৬ লাখ। এসময় ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৮ মেঃটন বিভিন্ন ধরনের পন্য। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছর ভারত থেকে আমদানি পরিমান ছিল ১৮ লাখ ৩৬ হাজার ৯৫৩ মেট্রিক টন।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক(ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বন্দর সুত্রে জানা যায়, ভারত থেকে যে পণ্য আমদানি হয় প্রাথমিক অবস্থায় পণ্যচালানটি বেনাপোল বন্দরের ওয়ারহাউজ(পণ্যগারে) রাখা হয়। এসময় আমদানি পণ্য রক্ষানা-বেক্ষনা ও পণ্যগার ভাড়া বাবদ বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নির্ধারিত হারে এই রাজস্ব আদায় করে থাকে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, বেনাপোল বন্দরের বর্তমান ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৫০ হাজার মে:টন। তবে এখানে সব সময় পণ্য থাকে প্রায় দেড় লাখ মে:টন। চাহিদা অনুপাতে জাইগা না থাকায় মুল্যবান আমদানি সামগ্রী রাখতে হয় খোলা আকাশের নিচে। এতে সুবিধা বঞ্চিত হয়ে ব্যবসায়ীরা অনেকে এ বন্দর ছেড়ে বাণিজ্য করছেন অন্য বন্দর দিয়ে। ফলে এ বন্দরটিতে কাঙ্খিত রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হচ্ছেনা।
বেনাপোল আমদানি,রফতানি কারকরা বলেন, এপথে রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন বাড়াতে হবে। এছাড়া বন্দরে বার বার রহস্য জনক অগ্নিকান্ডে অনেক ব্যবসায়ীরা পুজি হারিয়ে পথে বসেছেন। বন্দর তাদের কোন ক্ষতিপূরন না দেওয়ায় তারা এ বন্দর ছেড়েছেন।
বেনাপোল ট্যান্সপোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দীন গাজী বলেন, পণ্য ছাড়করনের ক্ষেত্রে বৈধ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত না হওয়ায় আমদানি কমে যাওয়াও একটি কারণ । এতে রাজস্ব দিন দিন ঘাটতি হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক(ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, করোনার কারনে প্রথমত আড়াই মাস ধরে আমদানি বন্ধ ছিল। এ কারনে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। আর ইতিমধ্যে বেনাপোল বন্দরে অনেক অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। এছাড়া আরো যে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে এর মধ্যে বন্দরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, জেল খানার ন্যায় বন্দরের চারিদিকে প্রাচীর নির্মান ও নতুন জাইগা অধিগ্রহন। এসব উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হলে বেনাপোল বন্দর বিশ্বের কাছে একটি আধুনিক বন্দর হিসাবে পরিচিতি পাবে। তখন আমদানি বৃদ্ধির পাশাপাশি দ্বিগুন রাজস্ব রাড়বে।
উল্লেখ্য, বেনাপোল বন্দর থেকে ভারতের কলকাতা শহরের দূরত্ব ৮৩ কিলোমিটার। মাত্র তিন ঘণ্টায় একটি পণ্যবাহী ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে পৌঁছাতে পারে কলকাতা শহরে। তেমনি একই সময় কলকাতা থেকে পণ্যবাহী ট্রাক পৌঁছায় বেনাপোল বন্দরে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে এ পথে ব্যবসায়ীদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে প্রবল আগ্রহ রয়েছে। দেশে স্থল পথে যে পণ্য আমদানি হয় তার ৭০ শতাংশ হয়ে থাকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে।
প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হচ্ছে। যা থেকে সরকার প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে থাকে। আমদানি পণ্যের মধ্যে শিল্পকারখানার কাচামাল,গার্মেন্টস,তৈরী পোশাক,ক্যেমিক্যাল ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব রয়েছে। তবে এপথে আমদানি কমলেও দিন দিন বাড়ছে রপ্তানির পরিমান। এছাড়া বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন পণ্য রফতানি হয়ে থাকে। এ বছর ১০ হাজার কোটি টাকার পণ্য ভারতে রফতানি হওয়ার কথা ছিল। রফতানি পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাত পণ্য, তৈরি পোশাক, কেমিক্যাল, বসুন্ধরা টিসু চালের কুড়া, মেহেগনী ফল, মাছ ও অক্সিজেনসহ প্রায় ৫০ প্রকারের পণ্য রয়েছে।