হোম জাতীয় বেইলি রোড ট্র্যাজেডি: চোখের জলে সন্তান, পুত্রবধূ ও নাতনিকে খোঁজেন এক বাবা

বেইলি রোড ট্র্যাজেডি: চোখের জলে সন্তান, পুত্রবধূ ও নাতনিকে খোঁজেন এক বাবা

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 114 ভিউজ

জাতীয় ডেস্ক:

এই শহরের চরম দায়িত্বহীনতা, তীব্র অবহেলা আর একে অন্যের ঘাড়ে চাপানোর দগদগে ক্ষত বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ। সর্বনাশা সেই মৃত্যুপুরিতে রোববার (১০ মার্চ) এসেছিলেন এক সন্তান হারানো বাবা। এক ভাই হারানো বোন। এক সব হারানো মা। চোখের জলে সন্তান, পুত্রবধূ ও নাতনিকে খোঁজেন তারা। অনিবার্য কিছু প্রশ্ন ছোড়েন তারা। যে প্রশ্নের উত্তর কোনদিন মিলবে কিনা হয়তো জানে না কেউ। কিংবা যারা জানেন হয়তো তারা নীরব।

অনেক জীবন, অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা, অনেক রঙ-বেরঙের কল্পনার ফানুস- সবকিছু পুড়িয়ে নিজেও পোড়া কঙ্কাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ। দুর্বিষহ অগ্নিকাণ্ডের পর কেটেছে এক সপ্তাহের বেশি সময়। কিন্তু এখনও দগদগে ঘা হয়ে চরম নির্মমতার বেদনাতুর স্মৃতি হয়ে আছে ভবনটি। মানুষের অবহেলায় মানুষ মরে যাওয়ার এই কলঙ্কময় স্থানটিতে প্রতিদিন ভিড় করেন অনেক মানুষ। কেউ আসেন নিছক কৌতূহল থেকে। কেউ আসেন পোড়া ভবনে একান্ত আপনজনের স্মৃতির খোঁজে।

রোববারও এসেছিলেন এ রকম একজন সপরিবারে। তিনি এক বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি এক বাবা। পরিবারের একটি অংশ তিনি হারিয়ে ফেলেছেন এই ভবনে ২৯ ফেব্রুয়ারির আগুনে। এখানে পুড়ে ছাই হয়েছেন তার নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বলে সন্তান, সোনালি আলোর মতো পুত্রবধূ এবং সকালের সতেজ জুঁই ফুলের মতো সতেজ নাতনি।

গ্রিন কোজি কটেজের সামনে ঘুরে ঘুরে তিনি খোঁজেন প্রিয় সন্তান শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা শাহজালালকে। খোঁজেন প্রিয় নাতনি কিংবা পত্রবধূকে। কিন্তু এক হত্যভাগ্য বাবার ডাক কি পৌঁছায় সন্তানের কানে? হয়তো আরেকটু কাছে যেতে, কিংবা সন্তানের কোনো একটা চিহ্ন খুঁজে পেতে পুড়ে যাওয়া ভবনে ঢোকার চেষ্টা করেন। সন্তান হারানোর দুঃখের কাছে কোনো যুক্তি কি আর খাটে?

একাত্তরের বীর যোদ্ধা আর ফেব্রুয়ারির বেদনাহত বাবা গণমাধ্যমের সামনে কিছু অনিবার্য প্রশ্ন রাখেন। যে প্রশ্নের উত্তর ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে খুঁজছেন আরও অনেক মানুষ।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে এই বাবা বলেন, আমাদের দেশে আইন আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই। না হলে সিঁড়ির নিচে কেন সিলিন্ডার রাখা হবে?

শাহজালারের ভাই এবং বোন তোলেন একই রকম প্রশ্ন। জানতে চান কবে নিরাপদ হবে এই নগর? এমন বেদনাকাতর দিন যেন কারও জীবনে না আসে, এও বলেন তারা।

প্রতিদিন ভোরে, রাতের অন্ধকার কাটিয়ে ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হয় এক মৃত্যুপুরী। ১০ দিন পেরুলেও এখনও পথচারীদের নিয়মিত আলোচনার বিষয় গ্রিন কোজি কটেজ। তবে এ মানুষগুলোর প্রত্যাশা একটাই- আর যেনো কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীনতায় না ঝড়ে কোনো প্রাণ।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন