আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারতের উত্তরপ্রদেশে সহপাঠীদের দিয়ে মুসলিম শিক্ষার্থীকে চড় মারানোর ঘটনার তদন্তে একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসারকে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। একইসঙ্গে ঘটনাটির অভিযোগ সত্য হলে তা ‘বিবেকে ধাক্কা লাগা উচিত’ বলে জানিয়েছে আদালত।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, উত্তরপ্রদেশে এক মুসলিম ছাত্রকে চড় মারার নির্দেশের মামলায় ‘গুরুতর এবং উদ্বেগজনক’ ঘটনাটি ‘জীবনের অধিকারের বিষয়’ বলে উল্লেখ করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।
এছাড়া রাজ্য সরকারকে পেশাদার মনস্তত্ববিদদের দিয়ে ভুক্তভোগী পড়ুয়া এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য ছাত্রদের কাউন্সেলিং করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তরপ্রদেশ সরকারকে ওই শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং সম্পর্কে একটি রিপোর্ট পেশ এবং ভুক্তভোগী শিশুর শিক্ষার দায়িত্ব নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী ৩০ অক্টোবর ফের ঘটনাটির শুনানি হবে। আদালতের যাবতীয় নির্দেশ নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে কার্যকরী করতে হবে।
গত ২৫ আগস্ট উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগরের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, ক্লাসে নিজের চেয়ারে বসে আছেন ওই শিক্ষিকা। তার টেবিলের ডান পাশে দাঁড়িয়ে এক ছাত্র। শিক্ষিকা ক্লাসের অন্য ছাত্রদের ওই ছাত্রকে চড় মারার নির্দেশ দিচ্ছেন। আর এক এক করে এসে তার গালে চড় মারছে ছাত্ররা। এ সময় ওই ছাত্রের চোখে পানি দেখা যায়। এখানেই শেষ নয়, ওই ছাত্রকে লক্ষ্য করে ইসলামবিদ্বেষী মন্তব্য করতেও শোনা যায়। শিক্ষিকা বলেন, ‘আমি জানিয়ে দিয়েছি, সব মুসলিম শিশুকেই স্কুল ছাড়তে হবে।’
এরপর ভিডিওর এক পর্যায়ে দেখা যায়, ওই শিক্ষিকা তার ছাত্রদের ওই শিক্ষার্থীকে আরও ‘জোরে’ চড় মারার জন্য বলছেন। এতে তার গাল লাল হয়ে গেলে তার কোমরে আঘাত করার জন্য বলেন তিনি। এই ঘটনায় হইচই পড়ে গেছে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও প্রতিবেদন হয়েছে।
ঘটনাটির দ্রুত তদন্তের আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধীর প্রপৌত্র তুষার গান্ধী। এই ঘটনা বর্ণ, ধর্ম বা লিঙ্গের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য ছাড়াই ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের উচ্চ মানের, বিনামূল্যে, বাধ্যতামূলক শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশ সরকারের ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করে সর্বোচ্চ আদালত।
গত ৬ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট মামলাটিতে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে রিপোর্ট চেয়ে উত্তরপ্রদেশ সরকারকে নোটিশ জারি করেছিল। ঘটনাটিতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং শিশুটির পরিবারকে রক্ষা করতে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেবিষয়ে জানতে চেয়েছিল। যদিও উত্তরপ্রদেশ সরকার দাবি করেছে, ঘটনাটিতে সাম্প্রদায়িক দিকটি অতিরঞ্জিত করা হয়েছে।