আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর হাজার কোটি টাকার সম্পদ নিয়ে সম্প্রতি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ। খবরটি সামনে আসার পর এবার এ নিয়ে মুখ খুলেছে যুক্তরাষ্ট্র।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীকে নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র অবগত।
বিফ্রিংয়ে এক সাংবাদিক তার প্রশ্নে বলেন, ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার অভিযোগ আছে। এই সম্পদের মূল্য ২০০ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র কী পদক্ষেপ নেবে?
বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীকে নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র অবগত আছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই প্রতিবেদনের বিষয়ে অবগত। নির্বাচিত সব কর্মকর্তা যাতে দেশের আইন ও আর্থিক বিধিবিধান মেনে চলেন, তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
এর আগে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ বছর ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সাল থেকে তার মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো প্রায় ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড বা ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তির রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন যুক্তরাজ্যে।
যুক্তরাজ্যে কোম্পানি হাউসের করপোরেট অ্যাকাউন্ট, বন্ধকি চার্জ এবং এইচএম ল্যান্ড রেজিস্ট্রি লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে ব্লুমবার্গের বিশ্লেষণে এই পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে।
সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে সেন্ট্রাল লন্ডনের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট থেকে শুরু করে টাওয়ার হ্যামলেটসে আবাসন; যেখানে ইংল্যান্ডের বৃহত্তম বাংলাদেশি কমিউনিটির আবাসস্থল এবং লিভারপুলে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক ভবন।
যুক্তরাজ্যে সাইফুজ্জামানের প্রায় আড়াইশ সম্পত্তির তথ্য বিশ্লেষণ করে ব্লুমবার্গ বলছে, যখন এসব সম্পত্তি কেনা হয়, তখন যুক্তরাজ্যজুড়ে তীব্র আবাসন সংকট চলছিল এবং এর ৯০ ভাগই ছিল সদ্য তৈরি অর্থাৎ নতুন বাড়ি।
এই লেনদেনগুলো এমন এক সময়ে করা হয়েছিল, যখন রুশ ধনকুবেররা খুব সহজেই তাদের সম্পদ যুক্তরাজ্যে লুকিয়ে রাখতে পারছে—এমন সমালোচনার মুখে ব্রিটিশ সরকার সম্পত্তির বিদেশি মালিকানায় আরও স্বচ্ছতা দেখাতে চাইছিল। ২০২২ সালে ইউক্রেনে মস্কোর সামরিক অভিযানের পর যা আরও জরুরি হয়ে ওঠে।
দুর্নীতি বিরোধীরা বলছেন, রাজনীতিবিদদের সম্পৃক্ততা আছে এমন লেনদেন যাচাইয়ের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের আইন আদৌ কার্যকর কি না, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর এসব সম্পত্তির কারণে সেই প্রশ্নও উঠতে পারে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনেও সাইফুজ্জামানের অন্তত পাঁচটি সম্পত্তি খুঁজে পেয়েছে ব্লুমবার্গ। মিউনিসিপ্যাল প্রপার্টি রেকর্ডসের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, প্রায় ৬০ লাখ ডলার দিয়ে ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এসব সম্পত্তি কেনা হয়েছে।
গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে পুননির্বাচিত হয়েছেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। মন্ত্রিসভায় পদ হারালেও, সংসদীয় জমি সংক্রান্ত কমিটির সভাপতির পদে বহাল আছেন তিনি।