হোম এক্সক্লুসিভ বারেবারে বস্তি পোড়ে, পোড়ে ওদের কপালও

বারেবারে বস্তি পোড়ে, পোড়ে ওদের কপালও

কর্তৃক
০ মন্তব্য 327 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক :

রাজধানীতে প্রায়ই বস্তিতে আগুন লাগে। সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয় শ্রমজীবী মানুষ। এরপর আবার ঘর উঠে, ভাড়া বেড়ে যায় কয়েকগুণ। দরিদ্র মানুষকে সেখানে থাকতে গুণতে হয় উপার্জনের অধিকাংশই। হতদরিদ্র মানুষ শোষণ-নিপীড়নে দিন দিন আরো নিঃস্ব হচ্ছে। কিন্তু কেন বারবার পোড়ে বস্তিগুলো? আসলেই কি বৈদ্যুতিক সৃষ্ট গোলযোগ থেকে আগুন লাগে, না-কি লাগানো হয়? উত্তর জানা যায় না কখনই। তদন্ত হয়, রিপোর্টও জমা হয়। প্রকাশ হয় না। ফলে কেউ অপরাধ করলেও থেকে যায় আড়ালেই।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন ইত্তেফাককে বলেন, ‘প্রতিটি ঘটনায় আমরা তদন্ত করি। মূলত দুটি বিষয় আমরা দেখি। একটা কেন আগুন লাগল? আরেকটা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ? প্রতিটি ঘটনায় তদন্ত শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পাঠানো হয়। এরপর আমাদের আর করণীয় থাকে না।

তবে আমাদের তদন্ত তো পুলিশের মতো হবে না, আমরা যদি দেখি বৈদ্যুতিক বা অন্য কোনো গোলযোগ থেকে আগুন লাগেনি তাহলে আমরা রিপোর্টে বলি, মনুষ্যসৃষ্ট কারণে আগুন লেগেছিল। সেটা কেন লেগেছিল, তা খুঁজে বের করার সুযোগ আমাদের নেই। তখন আমরা অধিকতর তদন্ত করার সুপারিশ করি। আর বৈদ্যুতিক কারণে হলেও সেটারও উল্লেখ করে থাকি তদন্ত রিপোর্টে।’

সর্বশেষ গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে বনানীর টিঅ্যান্ডটি কলোনির বস্তিতে আগুন লাগে। আগুনে তিন শতাধিক ঘর পুড়ে যায়। এতে গৃহহীন হয়ে পড়েন কয়েক হাজার মানুষ। একটি গোডাউন থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে প্রচার করা হলেও বস্তিবাসী বলেছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, জায়গা খালি করতেই পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে। এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়েছে। যদিও এখনো কমিটি রিপোর্ট দেয়নি।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আলী আহমেদ খান ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমি বলব, মন্ত্রণালয়কে এখানে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। কারণ ফায়ার সার্ভিস যে তদন্ত করে সেটা একেবারেই প্রাথমিক তদন্ত। তাদের পক্ষে কেউ অপরাধ করলে খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। তবে ফায়ার সার্ভিসের রিপোর্টে কিন্তু অপরাধ হয়েছে কি-না সেই ক্লু থাকে। ফলে মন্ত্রণালয় চাইলেই তদন্তকারী কোনো সংস্থাকে দিয়ে অধিকতর তদন্ত করে অপরাধীদের খুঁজে বের করতে পারে। সেই কাজটা হচ্ছে না।’

গত আগস্টে মিরপুরের রূপনগরের ঝিলপাড় বস্তিতে আগুন লাগে। রাত ৮টার দিকে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে আগুনে ২০ থেকে ২৫ হাজার ঘর পুড়ে যায়। আগুন লাগার পর বস্তিবাসীরা অভিযোগ করেছিলেন, ‘গত ২৫ বছরের বেশি সময়েও এই বস্তিতে একটিবারও আগুন লাগেনি। এখন হঠাৎ করে কেন আগুন লাগল? জায়গা খালি করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আগুন লাগানো হয়েছে।

’ তখন ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছিল, বস্তির ভেতরে অবৈধ বৈদ্যুতিক ও গ্যাস লাইন থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ঐ সময়ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তদন্ত করে কী প্রতিবেদন দিয়েছিল তা আজও জানা যায়নি।

কড়াইল বস্তির বাসিন্দা গৃহবধূ আকিরুন নেছা বলছিলেন, ‘আগেও আমাদের এখানে আগুন লেগেছে, এরপর স্থানীয় প্রভাবশালীরা ঘর তুলে দিয়ে ভাড়া দ্বিগুণ করে দিয়েছিল। এবারও এমন কিছুর আশঙ্কা করছেন বস্তির বাসিন্দারা।’ তার মতে, ভাড়া বাড়াতে হলে কথা বলেই বাড়াক, কিন্তু আমাদের এতদিনের উপার্জন যা কিছু সব পুড়িয়ে দিয়ে এখন অতিরিক্ত টাকা চাইলে কিভাবে দেব?

সূত্র-ইত্তেফাক

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন