জাতীয় ডেস্ক:
নাশতার টেবিলে সম্পত্তি নিয়ে কথা-কাটাকাটির জের ধরে বাবা হাসান আলীকে হত্যার পর মরহেদ ১০ টুকরো করা হয় বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তার ছোট ছেলে শফিকুর রহমান জাহাঙ্গীর। মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালতে তিনি এ জবানবন্দি দেন।
গত শুক্রবার (৬ অক্টোবর) ঢাকা থেকে শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ জবানবন্দি দেন জাহাঙ্গীর।
জবানবন্দিতে জানান, গত ১৯ সেপ্টেম্বর গ্রামের বাড়ি বাঁশখালী থেকে হাসান আলী স্ত্রীকে নিয়ে চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেড এলাকায় ছোট ছেলের বাসায় বেড়াতে আসেন। ওই বাসায় ছিলেন বড় ছেলেও। পরদিন সকালে একসঙ্গে নাশতা করার সময় সম্পত্তি নিয়ে বাবা-ছেলেদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। বাবা তাদের সম্পত্তি দেবেন না বলায় ক্ষুব্ধ হন দুই ছেলে। এর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই বাবাকে হত্যা করে টুকরো টুকরো করেন তারা। পরে লাগেজ ও বস্তায় ভরে নগরের তিনটি স্থানে ফেলে দিয়ে আসা হয় খণ্ডিত অংশ।
গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে নগরের পতেঙ্গা থানার ১২ নম্বর ঘাট এলাকায় খালের কাছ থেকে একটি লাগেজ উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া আঙুলের ছাপের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত হয় হাসান আলীর। এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর আকমল আলী রোডে ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে হাসান আলীর স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম ও বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। ওইদিনই তাদের বাসার পাশের একটি ডোবা থেকে মরদেহের আরও দুটি খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করে পিবিআই। এরপর ছোট ছেলে জাহাঙ্গীর ও পুত্রবধূ আনারকলিকে গ্রেফতারের পর মরদেহের মাথার খোঁজে নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় তিন দিন অভিযান চালালেও মেলেনি কোনো খোঁজ।
আদালত সূত্র জানায়, জাহাঙ্গীর আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, নাশতার টেবিলে জমিজমা নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে দুই ভাই বাবার হাত-পা বেঁধে ফেলেন এবং গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে। হত্যার পর মরদেহটি একটি বস্তায় ভরে বাসায় রেখে দেয়া হয়। দুপুরে তাদের ছোট বোনের স্বামীকেও খবর দিয়ে বাসায় নিয়ে আসা হয় এবং মাকে গ্রামের বাড়ি বাঁশখালী পাঠিয়ে দেয়া হয়।
জাবানবন্দিতে জাহাঙ্গীর বলেন, বিকেলে স্ত্রী আনারকলিকে দিয়ে দোকান থেকে স্কচ টেপ এনে মরদেহ টুকরা টুকরা করার পর স্কচ টেপ দিয়ে মুড়িয়ে নেন। ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বড় ভাই লাগেজে করে আটটি টুকরা পতেঙ্গা ১২ নম্বর ঘাট এলাকায় ফেলে দেন। বাবার মাথাটি পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে পাথরের ব্লকে ফেলে দেন তিনি ও তার স্ত্রী।
এর আগে, নগরের পতেঙ্গা থানায় এ মামলায় হত্যা, মরদেহ টুকরো করে গুম করার বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলেন বড় ভাই মোস্তাফিজুর রহমান ও জাহাঙ্গীরের স্ত্রী আনারকলি। হাসান আলীর স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগমও এ মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন।